বড়দিনে


অনেক হেঁটেছি
পাহাড়ে উঠেছি
হাত ধ’রে ডুব-সাঁতারে -
আজ পিছু  ডাকে যে জীবন
ছিল নীল চাদরের আদরে।


ছিল যত্নে সাজানো
সবুজ জীবন
স্বপ্ন আশায় ভরপুর
ইচ্ছে পাখীর
ডানা মেলে মন
উড়ে চলে যেত বহু দূর


ছিল তাড়াহুড়ো
খাটুনি বিষম
তবু,  খুশী ছিল মনটা
ছিল সময়ের টানাটানি
তবু ছিলনা শেষের ঘন্টা


তাজা মন ছিল
ফুলবন ছিল
কান্নাটা ছিল অল্প
ছুটোছুটি ছিল
লুটোপুটি ছিল
কুটোপুটি হাসি গল্প


বারো মাসে
তেরো পার্বণ ছিল
ছিল সুখে ভরা বাড়ী
ছিল কেক-মোমবাতি-পায়েসের বাটি
এলে জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী


ছিল মার্চ এপ্রিলে
নাটক-সিনেমা-Flea market-এ যাওয়া
সওদার পরে
ঝোঁকের মাথায়
আবোল তাবোল খাওয়া


joans beach -এ গিয়ে বালির ওপরে
নীল সমুদ্র তীরে
ভিজে-শাড়ী-দিঘা-মন্দারমণি
থাকত হৃদয় জুড়ে


শীতকালে ছিল
ঠান্ডা দোকানে
বাক্স ভর্তি আম
শুধু ছিল না গামছা
দোকানীর হাতে,
ফুটো গেন্জীতে ঘাম


কেঁদেছি যে কত গড়িয়াহাটের সেই দোকানীর জন্যে -
তাকে শিকাগোর  
পথে পথে খুঁজে
বেড়িয়েছি হয়ে হন্যে


১৬ই May তে একটি  রুপোর বাটিতে
পায়েস মা-মেয়ে -
জুনে শিশু কোলে হাত তালি দেওয়া “happy birthday” গান গেয়ে


জুলাই ফোর্থে
“হাডসন” বুকে বাজী
পোড়ানোর উৎসব
আড্ডা গল্প ছিলনা অল্প
সাথে কত হাসি-কলরব


ছিল ২৫শে আষাঢ়ে ফুলের বাসরে মালতী চামেলী যুঁই
সাদা মশারিতে স্বপ্নের ঘোরে মন হত ছুঁই ছুঁই


ইঁদুর দৌড় দৌড়িয়ে
গেছে কত বসন্ত চলে -
কত দূর পথ
পায়ে হেঁটে গেছি
দুটো পয়সা বাঁচবে বলে


হাড় কাঁপা শীতে
সারা রাত ধ’রে
তুষার পাতের পরে
ঝাঁটা দিয়ে গাড়ী সাফ ক’রে যাওয়া ট্রেন ধরে দপ্তরে


চিনি ছাড়া কালো কফিতে চুমুক সংগে ডোনাট মাফিন
“ওয়াটার কুলার গসিপে”র পরে
মন দিয়ে কাজ সারাদিন


পুজোর মিটিঙে চেঁচামিচি ছিল, ছিল আড়ি দলাদলি
খ্রীস্টমাস এলে সব কিছু ভুলে ভালবাসা গলাগলি।


আজ,
ভেজা-চোখে-দেখা
কাঁপা-হাতে-আঁকা
জীবনের জলছবি
দিন রাত মাস বছর গড়িয়ে
হল ইতিহাস সবি


বেশ ছিল
সেই কাজে ডুবে থাকা তরতাজা মন-দিনগুলো
আজ অবসরে
সব মনে পড়ে
হই চোখে জল নিয়ে মনভুলো


আজ বড় দিনে
বেজে চলে মনে
বিগত স্মৃতির বীণ -
পারো কি সান্তা
উপহার দিতে
ফেলে আসা সেই  দিন?


তপতী
ডিসেম্বর  ২৫, ২০২১