কাকেরাও বোধহয় তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি,
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জীবন শুরু,
ঘুম থেকে জেগে ওঠা, অতঃপর-
চৌদ্দটি বই নিয়ে দিনের পথচলা,
স্কুল যাত্রা; বইয়ের ভারে কাঁধ বাঁকা, দেহ ন্যুজ।


স্কুল শেষে কোচিং,
বাসায় ফিরেই হোমওয়ার্ক; গৃহ শিক্ষক।
বিকেলে গানের আসর, নাচের ক্লাশ;
অতঃপর ছবি আঁকা, আবৃত্তি, আরো কতো কি!
রাতে বই মুখস্ত করা;
ফাঁকে একটু কার্টুন দেখা।
লুকিয়ে বাবার মোবাইল টেপা, গেম খেলা;
চলছে দিনলিপি।


একদা বিকেলে শিশুটির আবদার,
"মা, হরলিক্স খাবোনা, একটু খেলতে যাবো?"
আকাশ থেকে পড়েন মা,
"সে কিরে? খেলবি কোথায়? মাঠ কোথায়?"
"গানের টিচার আসবে যে।"
একটু পরে আবার আবদার,
"মা, রাতে একটু খেলবো?"
"বলিস কি! তোকে পড়তে হবে না?"
"সামনে পরীক্ষা, এ প্লাস পেতে হবে না?"
"মুখ যে আর দেখাতে পারবো না রে!"
অনিচ্ছায় পাঠে মন দেয় শিশু।


চার দেয়ালের শিকেয় বন্দি শৈশব-
মোবাইল, লেপটপ- ট্যাব,
সিডি, ভিডিও গেমস-কার্টুন,
পোলট্রি মুরগির জীবনবাস চর্চা,
মানুষ তোকে হতেই হবেরে হতচ্ছাড়া;
যে কোনো মূল্যে।


মাঠ নেই, ঘাট নেই, পার্ক নেই;
খেলা নেই, মজা নেই, বিনোদন নেই।
শুধু অট্টালিকা-শপিংমল, চাইনিজ-ফাস্টফুড;
ম্যাকডোনালস্ আর কেএফসির ছড়াছড়ি।
দিনে দিনে নিঃসঙ্গতায় বেড়ে ওঠে শিশুটি,
শীর্ণকায় দেহ, ক"খানা হাড় আছে দেখা যায়,
রুচি নেই, খাওয়া নেই;
মানসিক শান্তি নেই।


কখনো কখনো মায়ের বকুনি খেতে হয়,
এ প্লাসটা কি তাও বুঝেনা,
ভাল ফল করতে হবে এটুকুন বোঝে।
'মানুষ' হবার বোধ আর আজকাল দরকার নেই।


গ্রিল চেপে চেয়ে থাকে রাস্তার দিকে-
ঐ যে পাখি দূরে উড়ে যায়, খেলা করে!
আমিও যদি পাখির মতো উড়তে পারতাম!
খেলা করতে পারতাম!
মাতো ঠিকিই বলেছে,
"খেলবো কোথায়? খেলার মাঠ কোথায়?"


ডোবা ভরাট করে ফ্লাট হচ্ছে!
মাঠ দখল করে শপিংমল হচ্ছে!
ফুটপাত দখল করে দোকান-পাট হচ্ছে!
কি হবে এই বিষণ্ণ নগর জীবনের,
শিশুগুলোর ভবিষ্যত কোন্ দিকে,
কোন্ মোহনায় মিলবে এই উন্নয়নের তরি
কোন্ বন্দরে নোঙ্গর ফেলবে নয়া সভ্যতার ফেরি?


হরতালেক দিন-
ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে রাস্তায় নেমে গেলে কেমন হয়?
অনুমতি মিলবে না, জানি-
হুম, একদিন নামবোই আমি;
কারো বাঁধা মানবো না।
নামতে হবে, ভাঙতে হবে বাঁধার আকর।



পুলিশ সুপার (কমান্ডার)
ইউএন শান্তি মিশন
মালি (আফ্রিকা)
১৫/০১/২০১৭ খ্রিঃ।


কৃতজ্ঞতাঃ আনসার উদ্দিন খান পাঠান (বিসিএস পুলিশ), তাঁর তোলা ফেসবুক ছবি অবলম্বনে।