চলছিলো তখন ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাস;
বাঙালিরা খুশি, কারণ তাদের অন্তরে হচ্ছিলো বিজয়ের আনন্দের চাষ;
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস;
বাঙালিদের গলায় পড়লো আবারো সেই অত্যাচারের ফাঁস।


ভারতবর্ষ ভেঙে পৃথিবীর বুকে উদ্ভব হলো ভারত ও পাকিস্তান;
বৃটিশরা করলো এই অঞ্চল থেকে লজ্জার প্রস্থান;
ধর্মীয় মিলবিন্যাসের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তানের অংশ হয়ে যান;
ভবিষ্যৎ অজ্ঞাত বাঙালিরা গেয়ে উঠে বিজয়ের জয়গান।


থাকেনিতো এই খুশি বেশিদিন;
বদলেছে শুধু শাসক, নিঃশেষ হয়নি সেই দুঃখের দিন।


শাসকগোষ্ঠী প্রথমেই হনন করার প্রয়াস করে বাঙালিদের মুখের ভাষা;
সালাম, রফিক প্রমুখদের রক্ত ব্যর্থ করে দেয় তাদের এই আশা;
বাঙালিদের মনে জেগে উঠে স্বাধীনতার প্রত্যাশা;
কিন্তু সামর্থ্যের অভাবে তাদের অন্তরে ফের আবির্ভূত হয় হতাশা।



তবুও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালিরা ছিলোনা যে শান্ত;
৬৬’র ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ছিলো তারই কিছু উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত;
৭০ এর নির্বাচনে জয়ের পরও গদিতে বসতে না পারায় বাঙালিরা অনুধাবন করে স্বাধীনতার চিন্তা করা ভ্রান্ত;
এরূপ চিন্তা-ধারাই শক্তি বাড়িয়ে তুলে তাদের, যারা ছিলো বহিরাগত।


বাঙালিদের হৃদয়ে আবারো আশার আলো জাগিয়া তোলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান;
মূলত তারই অন্তরে ছিলো দেশটাকে স্বাধীন করার আকাঙ্ক্ষা বহমান।


১৯৭১ সালের মার্চেই ডাক দিয়ে বসেন অসহযোগ আন্দোলন;
এর পর-পরই দেন গা শিউরে উঠা ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ;
বাঙালিদের অন্তরে তৈরি হয় স্বাধীনতার জন্য আসন;
কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাঙালিদের জন্যে ব্যাপারটি হয়ে দাড়ায় প্রহসন।



হঠাৎ নেমে আসে ২৫শে মার্চের কালো রাতের সেই নির্মম আঁধার;
বঙ্গবন্ধুসহ আরও অনেককে করা হয় কৌশলে গ্রেফতার;
নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে তদানীন্তন নারী সমাজকেও করা হয়নি পরিহার;
আর পুরুষসমাজ বিশেষ করে ছাত্রদের দেখা মাত্র সেনাসদস্যদের প্রতি নির্দেশ ছিলো, “উস্‌কো কাশ্‌ট্‌ দে কার গলি কারকে মার”।



এই নির্মম গণহত্যার নাম ছিলো ‘অপারেশন সার্চলাইট’, যা থেকে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিরা পায়নি সেই রাতে পরিত্রাণ;
ভুট্টো সাহেব ছিলেন এর মূল রচয়িতা আর এই পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা মিটিয়েছেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান।


গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বেতারযোগে স্বাধীনতার বার্তা করেছিলেন প্রচার;
একই সুরে তাল মিলিয়ে মেজর জিয়াও পরের দু-দিন বেতারযোগে স্বাধীনতার বাণী করেছিলেন সম্প্রচার;
সাধারণ মানুষের সাড়া দেখে কিছু মুষ্টিমেয় বাঙালি চালিয়েছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার;
এই মুষ্টিমেয় বাঙালি নিজেদের নামের পাসে উপাধি হিসেবে লাগায় আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার।


২৬শে মার্চ প্রথম প্রহর থেকেই যুদ্ধে নেমে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা;
ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে দামাল ছেলেদের সাথে যুদ্ধে যোগ দেয় বাঙালি সাহসী নারীরা;
কিন্তু ঐ স্বাধীনতা বিরোধীদের কারণে বাঙালিরা হয়ে পড়ছিলো সর্বহারা;
তখন ভারত সরকার সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়, যার মূল দৃশ্যের দেখা মেলে যুদ্ধের শেষ দিকে মিত্র বাহিনীদের দ্বারা।


জয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন ১৪ই ডিসেম্বর বাঙালিকে মেধাশূন্য করার নির্মম প্রয়াস করা হয়;
তবুও ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ইতিহাসের পাতায় লিখা হয়ে যায় আমাদেরই গৌরবোজ্জ্বল জয়।