এই মেয়েটা, নামটা কিরে তোর ?


কেউ তো বলে পারুলবালা,
কেউবা ডাকে সীতা-
কেউবা ডাকে ভালোবেসে রাণী বলে,
কেউবা আবার গীতা
আসল নামটা কেউ জানেনা, হারিয়ে গেছে-
মা ডাকতো ঐ নামেতেই মনে আছে,
বলবো তোমায়, চলে যাবার সময় হলে পর -


ও বাবা, আবার কাব‍্যি করিস, থাকিস কোথায় ?


ঐ তো হোথায় !
যেইখেনে তে কালিদহ মিশছে গাঙে -
ঐখেনে এক বস্তি আছে সবাই জানে,
কেউবা বলে পট্টি আবার কেউবা বলে গাছি,
ঐ যে দুরে শিবের দেউল- ওটার কাছাকাছি,
ঐখেনে তে জিজ্ঞেস কোরো আমার কথা
বলবে সবাই, দেখিয়ে দেবে , ঐতো হোথা,


বাবা, সেতো ধ‍্যাধ্ধারা ঐ গোবিন্দপুর,
তোর বয়স কতো ?


আমি কি জানি, নাওনা ভেবে ইচ্ছে মতো,
কেউতো বলে ষোলোবছুরি,
কেউবা বলে অষ্টাদশী
মেয়েদের আবার বয়েস কিগো,
আসল হোলো মাংসপেশি,
যেই বছরে বন‍্যা হোলো, ভাসলো অনেক
এরকমই এক শরৎকালে
সেই বছরই জন্ম আমার, আলো দেখলুম
আমি এলুম মায়ের কোলে,
হিসেব কষে লাভ নেই গো, অঙ্ক মিছে
মেয়েছেলে এটাই জানো
আচ্ছা, তুমি কেমন মানুষ, মদ্দ পুরুষ
মনে এতো সন্দ কেনো ?


নারে বাবা সন্দেহ নয়, দুর্গা পূজো - দেখতে যাবি ?
কতগুলো শাড়ি হলো, কতো আলো, খুব সাজবি ?


নতুন শাড়ি পড়বো বটে, সাজবোই তো
দেখবো ঠাকুর দিনের বেলা
আলোর মালা হয়না দেখা , ইচ্ছে করে
কাজ পড়ে যে সন্ধ‍্যেবলা,
তোমরা সবাই ঠাকুর দেখো , সবাই মিলে
আলো দেখো কি ধুমধামে,
আমার ঘরের অন্ধকারেই আনাগোনা
গাঢ় আদিম খেলা জমে,
এক এক রকম গায়ের গন্ধ, কেউ বা মাতাল
সব বয়েসের অসুর আসে,
পারলে শরীর ছিঁড়ে খাবে, ধস্তাধস্তি
পেটযে বড়োই সর্বনেশে,
সারা রাতের অত‍্যাচারে গা টনটন
আর পারিনা ঘুমিয়ে পড়ি
বেলায় উঠে নোংরা শরীর জল ঢেলে খুব
সাবান মেখে শুদ্ধি করি,
বলতে পারো, দুগ্গা মা কি ঠাকুর, নাকি
আমার মতোই একটা মেয়ে ?
সবাই কতো আদর করে, পুজো করে শ্রদ্ধা করে
কেউ দেখেনা আমায় চেয়ে !
কুমোর কেন মুর্তি গড়ে খড় কাঠামোয়
আমার দোরের মাটি দিয়ে ?
দুগ্গা নয়তো আমার মতো শরীর বেচা
নষ্ট মেয়ের পরিচয়ে !
দুগ্গা তোমার বড়লোকের পটের বিবি
ধনীর বেটি শিব ঘরণী
গরীব লোকের কিছু নাইগো বেঁচে থাকার
গতর বেচেই দানাপানি,
তোমরা বলো দুগ্গা কালী পেন্নাম ঠোক
মাতৃরূপী দিগবসনা,
আমার নাম ও দুর্গা, আমিও তো মেয়ে তবু
কেউ তো আমায় মা বলেনা !