*** একলব্য ***
=  তন্ময় দে বিশ্বাস =


উসখো খুশকো একমাথা চুল খড়িফোটা শুকনো গা
শাড়ীর পাড়ে প্যান্টটা বাঁধা, ছেঁড়া জামা খালি পা-
পাতলা রোগা দেহের গঠন, বয়সখানা হয়তো চার
খুঁজছে মানিক আস্তাকুঁড়ে, যে জিনিস তার খুব দরকার -


একটু দূরে ঐ দেখা যায় নামজাদা এক রেস্তোঁরা,
বাবু বিবি কতই আসে স্যুট টাই আর বুট পরা-
রঙবেরঙের গাড়ি দাঁড়ায় তার ঠিকানার ঠিক পাশে
লুকোচুরির খেলা জমে চাকাগুলোর চারপাশে ,
বিকাল থেকে রাত বারোটা, নেই অবসর একটুও
জীবন টা তার একার যে নয়, আছে কিছু পুষ্যিও,
একটা কুকুর একটা বেড়াল প্রতিবন্ধী একটা মা,
শয্যাশায়ী ঘরের কোনে, বাবা কে তার নেই জানা ।
ছোট্ট কাঁধে অনেক বোঝা, সেএটা বোঝার হয়নি কাল
আজ যা পাবে আধেকটা তার রসদ হবে কাল সকাল-
শীর্ণ হাতে খুঁজছে মানিক, বাঁচার রসদ মুখের গ্রাস
এমনি ভাবেই কাটবে জীবন সকাল বিকাল বারোমাস ?


ঘুরছে যারা ভদ্র মুখোশ, জ্ঞানী গুণী সমঝদার-
নেই কোনো দায় তাদের প্রতি, যাদের পেটে নেই খাবার ?
দেখতে যাদের সভ্য মানি, দেয় উপদেশ বক্তৃতা-
এদের মাঝেই হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে তার পিতা !
জানবে কি কেউ কবে কোথায় কে দিয়েছে জন্ম তার-
দোষটা কি তার, বলবে সবাই বেজন্মা আর কুলাঙ্গার ?


উঠলো জ্বলে নিয়ন বাতি- সন্ধে হলো নেই সময় ,
এমনি করেই বাড়বে বয়েস, চার থেকে ছয়, সাত আট নয় ।
প্রশ্ন অনেক চোখের কোনে, জবাব জানা নেইকো তার -
সবার ভাগেই ভাগ বসাবে, ন্যায্য নিজের অধিকার


কাটছিলো দিন এমনি ভাবেই, হঠাৎ কেন এমন হয়!
ডাকছে মাকে সকাল থেকে- উঠছে না মা- করছে ভয়,
কুকুর খানা উদাস মুখে করুণ সুরে দিচ্ছে ডাক-
বেড়াল ছানা মায়ের পায়ে ঘসছে গা আর খাচ্ছে পাক,
অবুঝ বালক তারস্বরে ডাকছে মাকে সাড়া চাই-
মা ছাড়া তার এই দুনিয়ায় আপন বলে কেউ যে নাই-
ছোট্ট হাতে জড়িয়ে মাকে, হাপুস নয়ন ডাকে মা-
মা যে তার আজ হারিয়ে গেছে, কোনো দিন ও ফিরবেনা-
বলবে না মা আয়রে বাছা বোলাবেনা হাত মাথায়
ডাকবে না আর কোলের কাছে, বলবে না তোর কিসের ভয় ?
ছোট্ট বালক একলা ভীষন ছিঁড়লো যে তার শিকড় টান -
শীর্ণ বুকে হাহাকার আর দুই নয়নে অশ্রুবান -
কে ঘোচাবে তার সে ব্যথা কে মোছাবে দুই নয়ন,
ছোট্ট শিশুর সত্যি যে আজ তোমায় আমায় প্রয়োজন -
ছোট্ট শিশুর সত্যি যে আজ তোমায় আমায় প্রয়োজন ।