আমার টুসু
তন্ময় দে বিশ্বাস


মাথার ওপর সুনীল আকাশ
পেঁজা মেঘের খেলা
পাহাড় ঘেরা ছোট্ট বসত
শাল পলাশের মেলা
বইছে দূরে টিপাই নদী
আদিবাসী গ্রাম
হিথায় তাকে দেখে ছিলাম
ফুলকুমারী নাম
কাজল কালো দেহাত মেয়ে
জীবন সরল সোজা
ফিরছে ঘরে দিনের শেষে
মাথায় কাঠের বোঝা
ক্লান্ত শরীর শ্রান্ত চরণ
বসন অগোছাল
আমায় দেখে চিন্তে পেরে
মুখটা লাজে লাল
অভাবেতে মোড়া শরীর
তবু হাসি মুখ
নাইবা থাকুক বিলাস ব্যসন
দুখেই আসল সুখ


ফুলকুমারী ফুলকুমারী
তুয়ার কথা কই
ফুলকুমারী ফুলকুমারী
আমার টুসু তুই -


বললো হেসে
'গেলোবার যে শাড়ী যে
শাড়ী দিলিক তুই
আধেক খানায় গতর ঢাকি
আধেক খানায় শুই
শালের পাতা কেনে যে বাবু
কি যেন তার নাম
সারা গায়ে হাত বুলাবেক,
তবে দিবেক পাতার দাম
বাবু মোরা গরীব বঠে,
বেবুশ্যে তো লয়
দুমুঠ মোটা ভাতের লেগে,
গতর বেচা সয়?
তুইতু বাবু ভদ্দরনোক,
জানিস ঘরের হাল
ভগবান তুর ভালো করবেক,
ইবার দিবি কিছু চাল?
আমার কোলের বিটাখানা
আছে বড়ই ভুকে
পেটে আমার আগুন জ্বলে,
দুধ নাইরে বুকে
সবাই আছে ভুখা পেটে,
ভরপেট কে জানে -
কবে হবেক? তবু সবাই
একটা কথা মানে
একদিন ঠিক আসবেক সুদিন,
ভরপেট সব খাবে
পরবেক সবাই নতুন কাপড়
নবান্ন পরবে
থাকবেক না আর ছিঁড়া জামা,
ছেঁদা ঘরের চাল
একদিন ঠিক আসবেক রসুল,
ফিরবেক দেশের হাল
দেখিস বাবু আমার বিটাও
ইস্কুলেতে যাবেক,
মোটা মোটা বই পড়বেক,
সব্বাই কে হারাবেক
সবাই পাবেক রোগের ওষুধ
বাঁচবেক অনেক কাল
আসবেক বাবু আসবেক রসুল,
থাকবেক না আকাল'


ফুলকুমারী ফুলকুমারী
তুয়ার কথা কই
ফুলকুমারী ফুলকুমারী
আমার টুসু তুই -


মনে ভাবি, সবার মাথায়
একই তো আকাশ
আকাশটাকে ছাদ ভাবলে,
একই ঘরে বাস!
একই আলো একই বাতাস
একই চলন ধরন
রক্ত মাংস সবই তো এক,
একই দেহের গড়ন
তবে কেন তফাত এতো
কেউ গরীব কেউ রাজা!
নিশ্চয়ই কেউ আছে কোথাও,
দিচ্ছে কোনো সাজা
আমিও ভাবি তার সে আশার
আসবে রসুল কবে
থাকবে না আর ধনী গরীব
সবাই সমান হবে
এক থালাতে পাশাপাশি
গোনা সমান রুটি
সেই দিনটা আসবে যেদিন
মানুষ হবে খাঁটি ।।


ফুলকুমারী ফুলকুমারী
তুয়ার কথা কই
ফুলকুমারী ফুলকুমারী
আমার টুসু তুই -


*******