*** কানাগলি ***
                        * তন্ময় দে বিশ্বাস *


বাড়ি আমার গাঁয়ে বাবু, টুসকি নদীর পাড়ে,
জমিদারদের ঘেরা বাগান জিওল বনের ধারে,
সেই বাগানে ফলতো কত রকমারী আম -
ফলসা ছিলো, জামরুল ছিলো,ছিলো কালো জাম
আমার ঘরে গোয়াল ছিলো, বাছুর - দুধেল গাই -
বাপ ছিলোরে- মা ও ছিলো, - ছিলো দুটো ভাই ,
আমি ছিলাম খুব আদরের- নাম ছিল আদুরী,
দেখতে ছিলাম খুব সুন্দরী তাই, বাপ বলতো পরী
যে বছরে বন্যা হোলো? বাঁধটা গেলো ফেটে -
সেই বছরে তখন আমি, আমার মায়ের পেটে,
মা ভেবেছিলো ছেলে হবে- কিন্তু হলাম আমি-
বাপ বললো ভাগ্য ভালো- লক্ষ্মী পেলাম আমি
বাপটা আমার ভালো ছিলরে, মা টাও ছিল সতী,
আমার যখন পাঁচে পা - মা আবার পোয়াতি,
এক এক করে হোলো দুটো ভাই - শিবু আর মধু,
বড় হোলো আমার কোলে- আদর খেতো শুধু,
আমি যখন বছর বারো - কাটলো শিশু কাল -
মা বললো পোড়ারমুখী - এবার নিজেকে সামাল ,


ছোট্ট থেকেই মোটা আমি, গতর খানা ভারী
বুক আর পাছা একটু ডাগর,তাইতো পরি শাড়ী ,
আমার কি দোষ পাইনা ভেবে , মনে জ্বালা ধরে -
গতর থাকার কি যন্ত্রনা - বুঝলাম সেটা পরে
একদিন ঠিক সন্ধেবেলা - জমিদারের ছেলে-
জড়িয়ে ধরে করলো আদর আম খাওয়াবে বলে,
একদিন তো রমেশ কাকা ঘরের মধ্যে ডেকে -
কতো আদর করলো আমার গলায় পেটে বুকে -
তখন আমি বূঝতাম না - ছিলাম সরল বোকা,
মেয়েরা যে কতো আদরের- সেই তখন ই শেখা,
একদিন তো খেলো আমায় সেই জমিদারের পোলা
সেইদিন ই টের পেলাম আমি, মেয়ে হওয়ার জ্বালা
গায়ে পিঠে আঁচড় কামড়- কাপড়, রক্তে মাখামাখি
মা বললো চাপড়ে কপাল - কি করলি গতরখাকি,
আমার কি দোষ? আমি কি জানি? জমিদারের ছেলে-
খেয়ে আমায় চেটেপুটে দেবে ছুঁড়ে ফেলে !
বাধা আমি দিইনি কি আর? ওর সঙ্গে কি পারি ?
ও একটা মদ্দ পুরুষ - আমি তো এক নারী ,


বাপ মা আমার চিন্তা করে, একদিন মাঝ রাতে -
বিয়ে দিলো চুপিচুপি, একটা লোকের সাথে !
ভোরের বেলা বরের সাথে দিলাম আমি পাড়ি -
এই শহরে এলাম পরথম চড়লাম রেলের গাড়ী !
নিয়ে গিয়ে তুললো আমায় একটা বড় ঘরে -
বললো এটাই শ্বশুরবাড়ী থাকবি চুপটি করে ,
শ্বশুর বাড়ীর সবাই ননদ- সবাই দেখি মেয়ে !
দেখছে আমায় মুচকি হেসে, গিলছে দুচোখ দিয়ে,
ধীরে ধীরে মালুম হোলো, বুঝলাম তার পর -
দারুণ আমার শ্বশুরবাড়ী - পাল্টায় রোজ বর !


সব মেয়েরাই স্বপ্ন দেখে একটা নিজের সংসার -
নিজের মানুষ, নিজের খুশি - নিজের পরিবার ,
বলতো বাবু দোষ কি আমার - কার করেছি ক্ষতি ?
কেউ নয় বাপ,কেউ নয় ভাই, কেউনা আপন পতি !
গতর বেচি- বেশ্যা আমি - সক্কলে তা জানে -
যার ভেতরে এত মধু - তারে ঘেন্না করে ক্যানে !
বেশ্যা হয়ে জন্মাইনিতো - বেশ্যা হলাম পরে -
বেশ্যা যারা করলো তারা - বুক ফুলিয়ে ঘোরে ,
সাবান মেখে চান করি , দিই তুলসীতলায় বাতি-
নতুন করে সেজে রোজ ই আদিখেলায় মাতি,
এক ই স্বপ্ন রোজ ই আসে - একটা ছোটো ঘর -
হর দু বেলা নুন পান্তা - একটা নিজের বর !


যাবি বাবু আমার ঘরে ? ঠিকানা টা বলি !
চোদ্দ নম্বর বাসষ্ট‍্যান্ডে - বারবনিতা গলি ।
বাসষ্ট‍্যান্ডের ঠিক পিছনে - বারবনিতা গলি ।।