××× শেষ চিঠি ***
                            * তন্ময় দে বিশ্বাস *


কল্যানীয়াষু খোকা
আশা করি ভালোই আছিস তোরা -
কেমন আছে বৌমা আর দাদুভাইয়েরা ?
শুনি এখন অফিসেতে নামডাক তোর খুব,
তোর মাতো বলে- তোর নামে ভরে যায় ওর বুক,
আমারো খুব আনন্দ হয় তোর নামডাক শুনে
তোর ছেলেবেলার কথাগুলো পড়ে আমার মনে,


রোজ সকালে তোকে নিয়ে যেতাম খেলার মাঠে-
হাঁফিয়ে যেতাম আমি রোজ তোর সঙ্গে ছুটে,
তুই তো ছোটো বুঝতিস না হাঁফানির কি কষ্ট-
আমি কিন্তু হারতাম না - মনে আছে স্পষ্ট,
আমার পিঠে চড়ে খেলতিস ঘোড়া ঘোড়া খেলা -
চেপে যেতাম হাঁটুর ব্যথা, আমার মালাইচাকির ফোলা
বললে তুই খেলতিস না, মনটা খারাপ হোতো -
আমার কাছে আর কি দামি - তোর হাসির মতো ?
রাত্তিরে তুই ঘুমোতিস- জড়িয়ে আমায় বুকে
বুকটা আমার আজো ফাঁকা, খোঁজে কেবল তোকে
কারখানাটা বন্ধ হোলো - আমি হোলাম বেকার
তোর তখন সাত আট ক্লাস, টিউশন দরকার -
মায়ের হাতের চুড়ি দুগাছা, বেচলো দিলো টাকা
তোর পরীক্ষার ফীস দিলাম আর কিনলাম একটা ঝাঁকা
সেই ঝাঁকাতেই পুতুল নিয়ে হলাম ফিরিওলা
সারাদিনটা ঘুরে ঘুরে ফিরতাম সন্ধেবেলা,


দশ কেলাস পাশ করে তোকে যেতে হবে কলেজে
দু কাঠা যে জমি ছিলো দিলাম সেটা বেচে
অভাব ছিলো নিত্য সাথী, বূঝতে দিইনি তোকে
তোরমা বলতো এসব যেন তোর মাথায় না ঢোকে
এখন তোর ভালো করে পড়াশোনা দরকার
তুই চাকরি পেলে হবে মায়ের ভরাভর্তি সংসার
একবার তোর বন্ধুরা এলো - কিশোর অলোক-
চিনতে পারেনি আমায় ওরা ভাবলো কাজের লোক
আমি কিছু মনে করিনি , তুই তো আমার খোকা-
তোর কথাতে কষ্ট পাবো আমি কি তেমন বোকা!


তারপর তুই চাকরি পেলি, যাবি বিদেশ চলে
টাকা লাগবে, ভিটেটা বেচে দিলাম টাকা তুলে
সেই থেকেতো রাস্তাবাসী- বলতো মা তোর রোজ-
ছেলেটা কোথায় কেমন আছে নাওনা একটু খোঁজ
সেইযে গেলি-আর এলি না , কতো বছর হোলো
কেঁদে কেঁদে হতভাগী মা তোর গতবছর মোলো
আয়না বাবা একটিবার দেখি দূরের থেকে -
পরিচয় টা রাখবো গোপন কথা দিচ্ছি তোকে
অনেকগুলো চিঠি দিলাম জবাব দিসনি কোনো
এটাই আমার শেষ চিঠি তাই উত্তর পাই যেন -
ভালো থাকিস আশিষ জানাই তোদের প্রতিজনে
ঠিকানা আমার- ভিখিরি আজ রেলের ইষ্টিশানে ।।
.................