*** অনলগ্ৰাস ***
                           ** তন্ময় দে বিশ্বাস **


অনেক কষ্টে চলি মাগো আগুন চারিপাশে
একটুখানি অসাবধানেই জ্বলবো অনলগ্ৰাসে,
জন্ম থেকেই জ্বলছি মাগো, মেয়ে হওয়া যে ক‍্যানো
তোমাকে আর বলবো কি মা- তুমি তো সব জানো,
প্রথম যখন এলাম আমি এই পৃথিবীর বুকে-
অছেদ্দা আর বিরক্তিটা ছিলো সবার মুখে,
তার জন্যে নেইকো আমার মনে কোনো কষ্ট
অভিমানটা বুকেই চাপি, এটাই তো অদৃষ্ট ,


চলতে যখন শিখলাম মাগো কি মজা সেই হাঁটা
তারপর যে পরবো বেড়ি জানতাম কি সেটা ?
ইস্কুলেতে যেতাম যখন স্কার্ট আর টপ গায়ে -
হাজার চোখের নষ্ট আগুন লাগতো খোলা পায়ে,
আমার কোথায় দোষ মা, সেটা স্কুলের ইউনিফর্ম
কেউ কেউ তো বলতো আমার লজ্জাশরম কম,
বাবা কাকা দাদার মতো যারা আমার বড় -
তারাও কেমন গিলতো আমায় দুচোখ বড়বড়,
স্কুলের পরে কলেজেতে ভর্তি হলাম যবে -
তখন থেকে শাড়ী পরা শুরু হলো সবে,
শাড়ী পরেও নেইকো রেহাই, পেট পিঠ তো ফাঁকা-
সেইখানেতেই লোলুপ নজর লাগতো সদাই ছ্যাঁকা,


বঞ্চনা আর লাঞ্ছনাতে সারা শরীর মোড়া -
দায়িত্ত্ব আর কর্তব্য মাগো নারীজীবন জোড়া ,
বিয়ের আগে প্রথম যখন দেখতে এলো বর !
বুঝলাম সেদিন রূপ আর শরীর হাঁকবে আমার দর,
মেয়ে বলে দেহটাকে মাপবে ওজন দরে ?
মা বোন স্ত্রীর ভালোবাসা কি রূপ নির্ভর করে ?
আমরা কী মা ওজন হবো গরু ছাগলের মতো ?
শ্বশুর বাড়ী কি কষাইখানা - কিনবে ইচ্ছে মতো ?


বিয়ের পরে আবার বেড়ী, বিধি নিয়ম কতো -
হতে হবে খাঁচার পাখি - সতী হওয়ার ব্রত ,
মা হবার পর স্বাদটা পেলাম - ভালোবাসা কি !
আমার খোকার সাথে আমি পরান বেঁধেছি ,
তারপর তো কতো মাস আর বছর পার করে -
এখন আমি বাড়তি মাগো আমার ই সংসারে,
যেদিন নেবো চির বিদায়, রইবো না আর ভবে -
সেদিন আমার আসল ওজন চতুর্দোলায় হবে ,
অনেক কষ্টে বাঁচছি মাগো, আগুন চারিপাশে -
এক এক করে দিন গুনি মা - অনল কবে গ্ৰাসে ।।