*প্রত্যুত্তর*


--- তন্ময় দে বিশ্বাস ---


অনেকদিন পর তোমার চিঠি পেলাম,
শুধুমাত্র দুটো কথা - কেমন আছো,
তারপর সাদা কাগজের অনেকটা নীচে- প্রণাম নিও।


খুব উত্তর দিতে ইচ্ছে করলো, তাই লিখতে বসেছি,
লেখা হয়ে গেলে আবার ভাসিয়ে দোবো জলে,


আমি ভালো আছি।
সকালের বেডটি টা নিজেই বানাই।
ঘুম চোখে বিছানায় বসে বেডটি খাওয়ার বদ অভ্যাসটা চলে গেছে।
অভ্যাস টা তুমিই করিয়েছিলে, আজ আর নেই। মাঝে মাঝে এক এক দিন একদম পারফেক্ট ব্লেন্ড আসে।
ঠিক তুমি যেমনটি বানিয়ে দিতে রোজ। একদম পারফেক্ট, রোজ রোজ-
যেদিন সেই ব্লেন্ড টা পাই, তোমার কথা মনে পড়ে।


আমি নিজে ভাত রাঁধতে শিখে গেছি।
গরম গরম ভাতে গাওয়া ঘি কাঁচা লঙ্কা চটকে মেখে খেতে আমি খুব ভালোবাসতাম।
ঘিমাখা হাতে কাঁচা লঙ্কা চটকে মাখা যায়না, পিছলে যায়।
তুমি বলেছিলে নুন মিশিয়ে নিয়ে লঙ্কা চটকে মাখো, আর পিছলাবে না।
সত্যিই সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে,
আজও যখন ঘি দিয়ে ভাত খাই, তোমার কথা মনে পড়ে।


তোমার বসানো গন্ধরাজ গাছে ফুল ধরেছে,
রোজ সন্ধ্যায় গাছটা সাদা সাদা ফুলে ভরে ওঠে,
চারপাশ গন্ধে ম ম করে -
প্রথম যেদিন ফুল এলো-
ফুলটা তুলে আমি তোমার খোঁপায় গুঁজে দিয়েছিলাম,
তোমার সেই খোঁপায় ফুল গোঁজা ছবিটা আমার লেখার খাতায় আজও আছে, অবিকল,
গন্ধরাজ গাছটার দিকে তাকালে তোমার কথা খুব মনে পড়ে,


তুমি ঠাকুরঘরে লক্ষীর আসন পেতেছিলে,
ঠিক তেমনি আসন পাতা আছে আজও,
সন্ধ্যায় নন্দ বামুন এসে শীতল দিয়ে রায় রোজ,
এবারে বলেছে লক্ষীর হাঁড়ির ধান পাল্টাতে হবে,
লক্ষীর আসনের সামনে বসা তোমার ছবিটা আজও চোখে ভাসে,


পাড়ার লাল কুকুরটা তোমার খুব ন্যাওটা ছিলো,
রোজ ঠিক দুপুরে খাবার সময় তোমার পায়ে পায়ে গা ঘসতো,
তুমি ওর নাম দিয়েছিলে লালসাহেব,
তুমি চলে যাবার পর কদিন খুব তোমাকে খুঁজেছিলো, কুঁইকুঁই করে কেঁদেছিলো,
তারপর আর আসেনি, ওকে আর পাড়ার রাস্তায় দেখতে পাইনা,
হয়তো অন্য কোথাও চলে গেছে, নাহলে হয়তো মরে গেছে,


আমাকে ছেড়ে হঠাৎ একদিন তুমি চলে গেলে -
আমার মতো গরীব হাড়হাভাতে স্বামী আর কজন স্ত্রী মেনে নিতে পারে বলো?
তুমি আমাকে কবিতা গল্প লেখা বন্ধ করে
পাড়ার মুদির দোকানের হিসেবের খাতা লেখার কাজ করতে বলেছিলে,
আমি জানি দুটো বাড়তি পয়সা উপার্জন করতেই
তুমি একাজটা করতে বলেছিলে,
আমি করিনি -
আমি জানি এখন কবিতা কেউ আর তেমন পড়েনা,
গল্প উপন্যাস পড়ার সময় ও কারোর নেই,
কবি লেখকদের খুব দুঃসময় চলছে,
কবিতা লিখে আর যাই হোক, সংসার চালানো যায়না,
তবুও আমি মুদির দোকানের কাজটা করতে পারিনি,
আমার আত্মসম্মানে লেগেছিল,
তুমি তো জানো, আমার আত্মসম্মানবোধটাই আমার গর্ব, আমার অহংকার,
আর কবিতা লেখা আমার বেঁচে থাকার রসদ!


তুমি ভালো থেকো, সুখী থেকো,
জীবনে ভালো করে বাঁচতে গেলে মাথার ওপর একটা সচ্ছ্বল হাত দরকার,
জীবনে ভালো করে বাঁচতে হলে দুবেলা দুমুঠো নিশ্চিত অন্ন সংস্থানের দরকার,
জীবনে ভালো করে বাঁচতে চাইলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হোওয়া দরকার,
জানি তুমি ভালো আছো -


ভালোবাসা শব্দটা খুবই আপেক্ষিক,
তবুও শব্দটা কোনোদিন অপশব্দ হবে না-
কোনোদিন বিলীন হয়ে যাবে না,
কোনোদিন মূল্যহীন হয়ে যাবেনা,
ভালোবাসা যেদিন থাকবেনা, এই পৃথিবীটা সেদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে -
প্রাণহীন একটা গ্রহে পরিনত হবে।।