এক. নেমন্তন্ন                                                        


"শুনছো? তোমার সাথে কথা ছিল।"
"শুনছি। বলে ফেলো।"
"আগামী কাল পৃথার বাসায় দাওয়াত।
আমি বলেছি তোমায় জিজ্ঞেস করে জানাবো। "
"উপায় নেই।  কালকে লেখাটা জমা দেবার কথা।  
শেষটা নিয়ে ভাবছি এখনো। "
"কি যে ঘোড়ার ডিমের ছাইপাশ লেখো,
তার আবার শেষ আর শুরু !"
"এই , শুরু হয়ে গেলো তো !"
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।


উড়ে এসে জুড়ে বসা জীবনের
আপদগুলোর বিপত্তি নেহাৎ কম নয়।
জীবনে কবিতার , গল্পের ছায়া পড়ে
রোমান্সের অপরাহ্নে,
ছুটির দুপুরে সম্পর্কের
ঘনিষ্ঠ উত্তাপে দ্রবীভূত সময়ে,
সেটাই কাম্য ।
সেখানটায় জীবিকার প্রয়োজনে
হিসেবের খুঁটিনাটি
জেরবার করে তোলে
কবিতা-গল্পের মূল সংজ্ঞাকেই,
এই সৃজনশীল প্রয়াসগুলোর
প্রীতিকর উপস্থিতি
তখন কেমন করে যেন
হয়ে ওঠে ভীতিকর,
বেশ ভয়ংকর ভাবে।
গল্পের বর্ণনায়
শৈশবের নদীতে
জোয়ার আসবার আগেই,
নিতান্ত বাস্তবতায় নাদান বাচ্চা
প্রবল চিৎকার করে কাঁদতে থাকে,
এবং স্বর্গ থেকে ইতঃস্তত বিদায়।


হিসেবের সংসারে মুখগুলো
বাড়তে থাকে,
রোমান্টিকতা কমতে থাকে ,
কমতে থাকে ব্যক্তিগত
সুখের নদীটিকে খোঁজবার  সময়ও।
শুধু কমে না জীবনে চাহিদার মাত্রা ,
ওটা আয়ের সাথে সঙ্গতি পূর্ণ হোক বা না হোক,
সর্বদাই বেজায় ঊর্ধ্বমুখী।


"নিজে না গেলেও ,
আমায় নামিয়ে দিয়ে আসতে পারবে তো?
আমি নাহয় মেয়েটাকে নিয়ে গেলাম।  
ছেলেটাকে দেড়ঘন্টার মতো রাখতে পারবেনা ?"
"সেকি ? লেখার মধ্যে ওকে সামলাবো কিভাবে?
ওকেও নিয়ে যাও !"


বিয়ের আগে যাকে কোকিলকন্ঠী  মনে হতো,
তাকেই এখন নিতান্ত বাঘিনী মনে হয় অষ্টপ্রহর।
সাথে মমতাও জাগে ,
সংসারের পাকেচক্রে রূপের এই দশা।  
নিতান্ত বেহাল অবস্থা।
ফয়সালা হলো।  লেখাও চলবে, বাচ্চাও কাঁদবে।  
চলুক উভয়ই।  কান্নারই অপর নাম জীবন।
                                                
দুই .গোলযোগ


"হ্যালো?"
"শুনছো ? এখন তোমাদের নিয়ে আসি ?"
"ওমা সে কি কথা ! সবে তো এলাম!"
"শোনো! এখানে একটু অসুবিধে  হয়েছে। "
"কি অসুবিধে ?"
"বারু ঘুমিয়ে ছিল।  
আমি নতুন লেখার শেষটা একটু জোরে পড়ছিলাম,
এই ধরো আপনমনে আবৃত্তির মত,
তা বারু উঠে মাথায় বাড়ী তুলছে,
দম বন্ধ করে  সে এক একাকার অবস্থা!"
"ইশ! তোমার যে কি সব অদ্ভুত কান্ড !
বুঝতেই পারিনা।
বাচ্চাটা পড়ে টড়ে যায়নি তো?"
"আরে না না , সেসব কিচ্ছুনা।"
"তোমাকে আসতে হবেনা।  
আমি পৃথাকে বলছি,
মুকুলদা আমাদের নামিয়ে দেবে ক্ষন।  
তুমি ওকে দেখো।
বারু বোধহয় কোনো ব্যথা পেয়েছে ,
বলতে পারছেনা।  
ওকে দেখো তো ভালো করে !"


৩. ছেঁড়া পৃষ্ঠার বক্তব্য  


গল্পটার শেষটা খুঁজছিলাম।
স্রষ্টা জীবনের শেষ দেখিয়ে দিলেন।
অকুতোভয়ে।


নবনীর সাথে সেই আমার শেষ কথোপকথন।
গাড়িটি ফেরবার পথে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার শিকার হয় ,
মুকুলের বেঁচে যাওয়া নিতান্তই দৈবক্রমে ,
শুধু বাঁচেনি নবনী আর আমাদের নিরু মা ।


মুখগুলোকে আর চেনা যায়নি।
জীবন বড় অর্বাচীন।
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে নবনীর হয়তো
বারুর ব্যথাটাকেই সত্যি মনে হয়েছিল,
তার কষ্টেই ভীত ছিল মায়ের মন।


ভয় , বড় অবুঝের মতো এ জীবন !
চোখের নিমেষে সৌন্দর্যের স্পন্দন থেমে যায় ,
জীবনের উচ্ছলতা   থেমে যায়।  
শুধু পড়ে থাকে পুঁতিগন্ধময় গলিত শবদেহ।


সকল ভয়ের আজন্মের ছুটি নিয়ে।।