তুমি আলোর কাছেই যেও (গদ্য কবিতা)  


ঘটনা সংক্ষেপ:


প্রতীতি একজন বুদ্ধি ভ্ৰংশ মানসিক প্রতিবন্ধী, যার ভালো হয়ে ওঠবার কোনো আশা নেই।আহাদ তার প্রেমচিন্তায় সংলগ্ন একজন ক্লান্ত প্রেমিক যিনি জীবনের মানে খুঁজছেন ক্রমাগত,পথের প্রান্তে। এবং সূত্রযোগে আসে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং ধর্ম।দীর্ঘদিনের প্রথায় জাদুঘরের ঐতিহ্য নিয়ে কোন চিন্তায় ছেদন পড়বে তার সামনের জীবনে , যা  নিয়ে দিনযাপন করবার ক্লান্তি তাঁকে ক্ষিপ্ত করে তোলে প্রায় ভুলের মাত্রায়।  প্রতীতির কতটুকু তাঁর,যখন প্রতীতির নিজস্ব স্বর অস্পষ্ট, অনুক্ত প্রায় উচ্চারণের মতন?


প্রতীতি একটি উপমা এখানে, যেখানে হয়ে থাকা দর্শনে বাংলাদেশ , আর যাই হোক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে একজন মানুষের মুক্তচিন্তার সীমানার প্রচ্ছন্ন সাধুবাদের যুক্তিগুলো কোথায়, মৌলবাদের ধোঁয়াশার বাইরে তা খুব বেশী স্পষ্ট করেনি।  


একজন লেখকের অন্তর্জগতের চিরন্তন দ্বন্দকথা।


(কবিতাটির নামকরণ তিমির বিশ্বাসের একটি সংগীত থেকে ধার করা , একান্ত নিভৃতের শিল্পবোধ থেকে কিছু অনুভূতিকে পুনরায় ব্যাখ্যাযোগ্য করবার জন্য,  দিনের শেষে। কারু একান্তের যেমন সুখ নয়, দুঃখও নয়।  এটুকুই বাঁচোয়া।)


তুমি আলোর কাছেই যেও  


সকালবেলার রোদ্দুরের হালকা আলো ক্রমশ কড়া হয়ে উঠছে পুরোমাত্রায়।  আহাদ কিছুক্ষন আগে প্রতীতির ঘরে উঁকি দিয়েছেন।  প্রতীতির বুকের ব্লাউসের বোতাম কয়েকটি খোলা, যেদিকে তাকিয়ে আধখোলা স্তনবৃন্তকে পুরোপুরি দেখবার তৃষ্ণা জাগে কিনা, তা বড় বেশী বাতুল প্রশ্ন , তবে যা স্পষ্টত সত্য, তা হলো অবিন্যস্ত শাড়ির ভাঁজের ভেতর স্তুপ হয়ে থাকা সময়ে তাঁর শরীরের ভাঁজগুলোও অতিমাত্রায় স্পষ্ট।  তবে প্রতীতি এসব কিছুর উর্দ্ধেও  প্রচন্ড কোনো ক্লান্তি নিয়ে, প্রচন্ড কোন অবসাদগ্রস্থতায়  ঘুমিয়েছিলেন এলোমেলো , অগোছালো হয়ে এই সকাল বেলায়। অপ্রতিভ হবার বদলে আহাদকে যা ভাববার সুযোগ করে দিলো, দু'যুগের আদিগন্ত ছড়িয়ে থাকা স্মৃতির প্রান্তর জুড়ে।


আহাদ কাল দু'যুগ পরে সমরেশের বই খুঁজছিলেন। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার। প্রতীতির প্রিয় লেখক। প্রতীতির ধানী রঙের শাড়ী পছন্দ ছিল, পছন্দ ছিল সমরেশের উপন্যাস।


আর আহাদের পছন্দ ছিল প্রতীতিকে।  আমূল ভাবে জীবন বদলে দেয়া আকণ্ঠ প্রেম।  যা বালখিল্যতার নামান্তর কেউ বলেনি। তথ্যপ্রযুক্তি সেসময় জানালা দিয়ে রোদের আলোর চিলতে ছোঁয়াকে বুড়ি ছুঁয়ে দেবার নামে অবান্তর কোনো প্রতিযোগীতায় নামে নি। আহাদ প্রতীতির ঠোঁট কল্পনা করতেন, কখনো স্পর্শ করেননি , বাস্তবে।


তবে তাঁরা এখন প্রচন্ড অসুখী দুজন নিরুত্তাপ মানুষ।  এবং আজও অবিবাহিত।


পাঠকের কোনো কোনো সময় পাঠের পূর্বেই ধারণার অতিরিক্ত রোমাঞ্চ হয়, জীবন যেখানে আসলেই কখনো কখনো উপন্যাসের চাইতে রোমাঞ্চকর, নিশ্চিতভাবেই । অনুপ্রাসের উপসর্গের মতন।


আহাদও টুকটাক লেখেন। তবে তিনি মূলত অবসর সময়ে প্রতীতির প্রেমিক, একান্তের।  ভবিষ্যতের কোনো রূপরেখা বা ফলপ্রসূ কোনো দীর্ঘসূত্রিতার বিন্দুমাত্র আশা না রেখে। প্রতীতি একজন প্রতিবন্ধী , বেশ ক'বছর ধরে। তাঁর ভালো হয়ে ওঠবার তেমন কোনো আশা নেই আর।


ঘটনার বিবরণ দেবার ক্লান্তিকর দায়িত্ব কাউকে না কাউকে তো নিতেই হয়।  সেখানে গিয়ে হয়তো পাঠকের মনে হতে পারে, আহাদ ক্লান্তি চাপছিলেন।  তিনি সুদর্শন, গৌরকান্তি , সৌম্যদর্শন একজন মধ্যবয়সী মানুষ। যাঁর এমুহুর্তে দেবার মত অন্য পরিচয় ছিল।


তবে আহাদের প্রেমচিন্তায় প্রবেশ করতে গ্লানি নেই।  তৃতীয় কোনো অজুহাত বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবার অবকাশও নেই।


সূত্রচিন্তার নিবন্ধনের প্রশ্ন যেখানে  আসলেই আহাদকে প্রতীতির অন্তর্জগতে স্থান দেয়, প্রতিটি মুহূর্তে।


অন্ত্যমিলের দুঃখদিনের দাহকথা


প্রতীতির যুক্তাক্ষর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় অসুবিধে হয় বেশ খানিকটা। ভেঙে ভেঙে উচ্চারণের সময় তার চেয়ে থাকা মুখের আদলে একটা শিশুর মতো অসহায়ত্ব কোথাও ছায়ার মত খেলা করে , হয়তোবা তার জড়তা যুক্ত চিন্তার জগতের কারণেই।


আহাদ কে কোনো কোনো দিন প্রতীতির মুখের সে ছায়া পেয়ে বসে একেবারে সেঁটে দেয়া দৃশ্যের সাথে রূপকল্পের মত ।  তিনি ধাবিত হন কোনো এক স্বপ্ন দৃশ্যে যা হয়তো অনেক আগে ঘটে যাওয়া আবেগের ধবল অংশের সঙ্গী, যা কিছুমাত্রায় অতিরিক্ত বা অতিরঞ্জিত ভাবনা মাত্র। যাকে অনাকাঙ্খিত উপসর্গের উপশমে তেতো ঔষধের সাথে তুলনা করে সামঞ্জস্য আনবার প্রয়াসে তেমন কোনো লাভ নেই।


দুকুল ছাপানো আবেগের কোনো সঙ্গত, পরিশীলিত সংজ্ঞা নেই। ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ মেঘে যেদিন আকাশ ছেয়ে যায়, দিগন্তরেখায় অজানা কালের শৈশব এনে তীরন্দাজ এক মেঘবালক মেঘের রংধনুতে মিশে থাকে, যেদিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কোথাও আশ্চর্য এক  ভালবাসা জাগে , অদ্ভুত, দুর্বোধ্য এক  বেদনার মতন। জীবনে চলার পথে বোধের অনেক রং জেগে থাকে , ভোরবেলার আকাশ সেখানে  সবচাইতে প্রতিশ্রুতিশীল, আসমানী কিতাবের আসমানী রহস্য নিয়ে, যা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়, স্পষ্টতর অনুভূতির সাতকাহনে মুখর হয়ে , সে সোনার আলো সরিয়ে দিয়ে আঁধার না জেগে ওঠা পর্যন্ত।


(অসমাপ্ত)