মাঝবয়েসী জীবনের ঝিমিয়ে পড়া প্রহরগুলো একধরণের অপ্রত্যাশিত আকস্মিকতায় ঘেরা। স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে পারে, এরকম আচমকা অনুভূতি অহরহ না হলেও একেবারে অনুপস্থিত নয়। তখন যেন চেনা সাজের ছাপ জলছাপের মতো অদৃশ্য সুতোগুলোকে বড্ড বেশী স্পষ্ট করে তোলে।  কথার আগেই প্রতিপাদ্য উপস্থিত হয় প্রকান্ড হাইয়ের ভেতর।  বড় বেশী চেনা , বা চিনে ফেলবার অনুভূতি ,যা অনুভূতির জায়গায় খুব বেশী প্রগলভ হতে দেয়না কখনোই। আর অনুক্ত থাকে অন্যদিনের অব্যক্ত আকুলতা , এমন দিনে তারে বলা যায়।


আরজুর রান্নাঘরের জানালার ওপাশের পৃথিবীতে সেই উন্মুখ মুহূর্তে ঝুম বৃষ্টি নামে এই প্রান্তে। আর ও ঘরে সেই আকুলতা অঝোরে স্নান করে মৃদুলের কবিতার পাতায়, ছিঁড়ে ফেলা কাগজের টুকরোগুলোর জঞ্জালে। কে যে কারে ভাসিয়ে নেয় এইবার! ঈশ্বরের এলাহী আয়োজনে পৃথিবী নীরব হয়ে ভাসে ইলিশ মাছের তেল ঝোলে, কবেকার পুরোনো হয়ে যাওয়া নতুন বৃষ্টির সুরে।


আর আমি চোখ বুজে একমনে নিশ্চিত হয়ে যাই, লুকিয়ে আছি আমি নিশ্চয়ই ,চোখের অগোচরে!


মৃদুলের জীবনে অপ্রাপ্তি অনেক, অজস্র বাতুল প্রসঙ্গের ভীড়ে তার প্রয়োজনের কণ্ঠ  প্রায়শই রোধ হয়ে আসে  , অস্পষ্ট হয়ে উঠে তার অনুযোগী শব্দচয়নের পারঙ্গমতা। তার না পাওয়া জগতে একা আরজু , অভিমানী আরজু বাস করবেন ,সেটাই প্রত্যাশিত। তবে যা প্রত্যাশিত নয়, তা হলো, তার অবহেলার জগতেও আরজু বাস করেন , বড়  বেশি অস্পষ্ট এবং নিরুচ্চার হয়ে। তার সে নীরবতায় বেশ খানিকটা অভ্যস্ত মৃদুল, যা হরহামেশাই ভেঙে যায় অর্থের চাইতেও বেশি দ্যোতনায়। আধখানা সরব স্বর তার, আধখানা নীরব ওমে।  প্রচন্ড ব্যথার ভেতর  গরম পানির সেঁক নিতে গিয়ে যা মৃদুল প্রায়ই স্মরণ করে হেসে ফেলেন, পুরোপুরি  নিজের অজান্তেই।


আজ আমি মৃদুলের কথা বলতে চাই, তবে আরজু বড় বেশি ব্যস্ত।  কিছুটা একান্তে সময় তার নিতান্তই প্রয়োজন।


তবে আসুন, ঘুরে আসি, কিছুক্ষনের জন্য , মৃদুলের জন্য রেখে যাওয়া আরজুর গরম ভাতের গন্ধ-ভরা  মুহূর্তগুলোকে অব্যাহতি দিয়ে , আরো কিছুদিন পূর্বে, খুব বেশিদিন আগের কথা নয় সেটি।


তখনও আকাশ নীলচে বুক নিয়ে মেঘদঙ্গল নিয়ে ছাপিয়ে যেত, কোনো এক মেঘনাদ কে সঙ্গী করে , আশৈশব স্বপ্নকে অভয় দিয়ে ।


ছেঁড়া পাতার  চেরাপুঞ্জীর বুকে আছড়ে পড়ার গল্প।


তুচ্ছ মুহূর্তের অজেয় কথকতা।