ঘড়ি ধরে কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে সবকিছু সম্ভব হয় , এমন সবসময়ে ঘটে ওঠেনা। তবু কিছু প্রত্যাশা থাকে, থাকে অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ , অমোঘপ্রায়। আজ এ কথাটা বার বার মনে হচ্ছে নিতান্তই সত্যি , কারণ ভোররাত অব্দি ঘুম ফেরারী।  অগত্যা ঘড়ি ধরে সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষা , আর সে ফাঁকে কলমের আঁকি বুঁকি। শ্বেতশুভ্র কাগজের বুক চিরে লেখনীর রোদন, টুপটাপ বৃষ্টির মত অনুভূতির রোদ বৃষ্টির খেলা।


"কালো চুলে রোদ এসে ছুঁলে অনেকটাই  লালচে লাগে গুঁড়ো চুলগুলোকে, জানো?"
ভীষণ ঘন কালো চুলের গুচ্ছ তোমার।  বঙ্কিমের কপালকুন্ডলার মত।  
যে জিজ্ঞাসা করেছিল, "পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো ?"
তুমি হাসছিলে কিনা , বোঝা যায়নি।  আমার বুদ্ধিভ্রংশ বিভ্রম মন্দ লাগেনা, ভাবতে ইচ্ছে করে, অনাবশ্যক এবং অতিরঞ্জিত।  কারই বা আর কি এসে গেলো, বল তো?


ভাবতে ভালো লাগে গল্পটা তরতর করে এগিয়ে গেলো।  আর এগিয়ে গেলো অনেকটা এইভাবে।
-"আজ ভাবছি , কাল উত্তর দেব।"
"কিসের উত্তর ?" , আগ্রহে শুধাই।
তুমি চোখ তুলে তাকালে।  বেশ বড়ো চোখজোড়া তোমার , গভীর এবং সহানুভূতির ছায়াগ্রস্থ।
-"উত্তর দেব ভাবনার।  কারো পথ হারানোর আদৌ প্রয়োজন পড়ে কিনা।  ওটা একটা সেকেলে ধাঁধা।
আজকালকার জন্য নয়।"
"ভাবিয়ে তুললে। সৌন্দর্যের আজকাল শুনলে সত্যি কোথাও খটকা লাগে, ভয়ও জাগে।"
-"ভয় কিসে?"
-"সর্বস্ব খোয়া যাবার ভয়। বোধের জাগ্রত অংশে যদি সত্য সুন্দরকে ঠাইঁ না দেই, নিদ্রিত অংশের ঝকমারি রকমফেরকে নিয়ে ঠিক কি করবো বল তো? ওটা তো আরেক অধরা সূর্যমুখীর গল্প !"


আমি কথার খেই হারিয়ে ফেলি।  আমায় কথা কোনোদিনই পায়নি, আর তোমার সাথে তো নয়ই। তোমার  সাথে আমার বরাবর লিখিত কল্পনার বাস।  আর সেখানে সমুদ্রের উর্মিমালা এসে আছড়ে পড়লেও, তা বড়জোর অস্ফুটে পদ্যের দ্বিতীয় পংক্তিতে যাবার তোড়জোড় করবে শুধু, চিরটা কাল।


আর ঠিক তখনই আমায় এই লজ্জা থেকে রেহাই দিতে বিধাতাও উন্মুখ হয়ে উঠলেন যেন !


ঝুম বৃষ্টি নামলে সবসময়ে মনে হতে থাকে , ছাতা মাথায় কোথাও কোন এক অচেনা  কিশোরী চপ্পল পায়ে,  দীঘল বেণী দুলিয়ে হাঁটছে।
যার এখুনি বাড়ী ফেরবার তেমন কোনো তাড়া নেই।


ফোঁটা ফোঁটা জলের শব্দে এই মুখর পৃথিবীতে তার আরো কিছুটা অহেতুক সময় প্রয়োজন।
যেখানে জমে থাকা জলের ধারায় বেনীগুলোকে চেনা যায় , অন্যদিনে, অন্যমনে।