মৌলি হাতঘড়িটার দিকে আবার আড়চোখে তাকায় |
দশটা বাজবার আর  দু' মিনিট বাকি আছে মাত্র |
সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছবার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই |
সকাল থেকেই মেজাজটা বিগড়ে আছে প্রচন্ডভাবে |
সাদাকালো জীবনের আশায় দিনাতিপাত
ক্ষণ শেষে দেখা যায় আদতে ওটা সাদা বা কালোর বাইরে
ধূসর হয়ে যাওয়া কোনো হতাশ বাস্তবতা ,
যাকে নিয়ে আকাশ পাতাল ভেবেও কোনো থৈ পাবার সম্ভাবনা নেই |


"কি লিখছো ?"
"একটা লেখা , শেষ করবার তাড়া আছে ..."
"লিখতে থাকো, বরফ তো গলতেও পারে |"
"কোথাকার বরফ, ফ্রিজের না এন্টার্কটিকার ?"
"কি বললে?"


এভাবেই একটা অভ্যস্ত ঝগড়ার সূত্রপাত |
উষ্ণতার মুহূর্তগুলো ক্রমাগতভাবেই একঘেয়ে ঝগড়ায় পরিণত হয় ,
সেইসব ঝগড়াগুলো পার হয়েও মনে হয়
ঘ্যানঘ্যান আর প্যানপ্যান করছে জীবনের মূল্যবান ক্ষয়িষ্ণু মুহূর্তগুলো |
খুব অস্বস্তিকর এই সাদামাটা অভ্যাসের সাতকাহন |


গভীর রাতে একটা বালিশসহ অবয়ব নিয়ে আপোষের চেষ্টা চলতে থাকে ,
সেটাও একটা অস্বচ্ছন্দ বাস্তবতা |


"শুনছো?"
"কি?"
"একটু পাশ ফিরে  শুতে পারবে ?
তোমার নাক একদম বাঘের মতো ডাকছে ! মাথা ধরে যাচ্ছে |"
"পাশের ঘরে গিয়ে শুতে পারবে না ? আজকের মতো ?"


অবস্থা তথৈবচ | স্বপ্নের সাবুদানায় ছোট ছোট বাস্তবতার পুলটিশ ,
খাবে কি খাবে না বোঝার আগেই প্রবল প্রতাপ এই জীবনটাই শেষ হতে বসে |
ভালোবাসা বাস করে তখন বাত রোগের মালিশে,
হাঁপানির সালিশে
অথবা ভীষণ উচ্চ রক্তচাপের প্রেসক্রিপশন হাতে ডাক্তারের কথাবার্তায়,
সে আরেক পালিশে |
ক্রমশ সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সকল উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে মৌলির জীবন |


অথচ কত স্বপ্ন ছিল , অন্য রকম, অন্য গন্তব্যের !


"আপনি প্রায় দশ মিনিট দেরি করে এসেছেন |"
"দুঃখিত | রাস্তায় জ্যাম ছিল ভীষণ |"


ভদ্রলোক সত্যিকার অর্থেই ভালো একজন শ্রোতা |
প্রায় আধঘন্টা ধরে মৌলিকে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করলেন তার লেখালেখি প্রসঙ্গে,
স্যাম্পল পোর্টফোলিও নীরব মুখে উল্টেপাল্টে দেখলেন |


"দুসপ্তাহ লাগতে পারে সিদ্ধান্ত নিতে |
আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে এব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে |"


পথে ফিরতে ফিরতে মৌলির মাথায় একটি অদ্ভুত চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো |
তার মৃতপ্রায় অর্কিড  গাছে আবার সবুজ ডাল বেরুচ্ছে |
দুসপ্তাহ কত দীর্ঘ সময় , হে গুল্ম , তোমার জন্য ?