বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল নেবার লম্বা একটা লাইন। অপালা লাইনটির প্রায় শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে।  তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পুলক। পুলক সহপাঠী হিসেবে যত না পরিচিত , তার চাইতেও পরিচিত বিন্দুর সাথে তার সখ্যতার জন্য।  দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ডিপার্টমেন্টের হলেও তাদের সখ্যতা প্রায় বিশ্বজনবিদিত। তবে কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে তাদের সখ্যতায় নাকি ফাটল ধরেছে, দুজনকে পৃথক পৃথক স্থানে দেখা যাচ্ছে।


অপালা রীতিমতো ঘামছে।  একটি বিষয় তার কাছে বরাবরই কঠিন লাগে, পরীক্ষাও ভালো হয়নি।


পাশ দিয়ে ভীড় ঠেলে কেউ চলে গেলো।  অপালা দেখলো, বিন্দু আর তার সাথে অন্য একটি ছেলে।  অপালা অবাক হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলকের দিকে তাকালো।  পুলক রীতিমতো বিন্দুর চলে যাওয়া ছায়াটির দিকে তাকিয়ে আছে , ওর চোখে দুঃখ না রাগ অপালা ঠিক বুঝলো না।


সে হঠাৎই ঘুরে দেখলো বিন্দুকে।
এবং স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকলো।
অপালার মনে হলো কষে একটা থাপ্পড় মারে বিন্দুর সঙ্গী ছেলেটির গালে।  


কাল রাতে তার বাসায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে বাবা মা উভয়ই তাকে বিস্কিটের একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে,
"তোর যেকোনো বান্ধবীর কাছ থেকে ঘন্টা খানেকের মতো ঘুরে আয় তো মা ! এক ঘন্টায় ঠান্ডা হয়ে যাবে ।"
"এরকম করে কেন মা ? মানুষ কি আর অসুস্থ হয়না ? আমাকে মারতে আসে কেন? আমি ওর বোন হই না? আমিও তো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি , মা!"
একঘন্টা ধরে সে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে মোড়ের বইয়ের দোকানটার পাশে ঘুরে বেরিয়েছে।  তার মাথা দপদপ করছিলো।  জীবনের উপর কত শোধ নেবে আর জীবন !
"কি দেখছো ? পড়ে যাবে নাকি ? ধরতে হবে তোমাকে ? " পুলকের প্রশ্নে তার সম্বিৎ ফেরে।
অপালা পুলককে দেখলো।  কৌতূহলী সদয় মুখ।  ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমের কোনো ছায়া নেই তাতে।


অপালা দৃষ্টি নত করলো।  
তারপর স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করলো , " পড়ে গেলে পড়ে যেতেই দিও।  তুলবার প্রয়োজন নেই কোনো। "