নীলাদ্রি সময়ের কথন  

নীলাদ্রির সাথে রাত্রির যেদিন দেখা হয়,  

সেদিন অনেক কিছু হতে পারতো অনেক অনেক কিছু ,

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামতে পারতো

জতুগৃহে বোধের ঘরে পুড়তে থাকা

বিচ্ছেদভার নিয়ে ভারাক্রান্ত এককালের দম্পতি

আবার পালিয়ে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারতেন,

কিন্তু এসব কিছুই হয়নি, জানো?

নীলাদ্রির কথা বলবো?

তোমার ভাবনায় সে কখনো আসে কি?

তরুণী দৃষ্টি যেমন বেশ ভালো করে তলিয়ে দেখে

জলের ছায়া আড় তরঙ্গ , দীঘল তরঙ্গ ,

কিছু ভাসে, কিছু থৈ পাওয়া যায়ইনি

কিন্তু নীলাদ্রির সাথে রাত্রির দেখা হয়েছিল

কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে

পেটকাটি চাঁদিয়াল, মোমবাতি বগ্গা,

সুমনের স্বর ছিল নেপথ্যে

চাঁদকে যখন ঝলসানো রুটি মনে হয়,

নিজের স্বর সেখানে এই আলাপে রেশ রাখেনি

যেমন অমনি শুরু, তেমনি আচমকা শেষ ,

কবি যেখানে উক্ত হন,

আদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতি কবিতা

দিনশেষে পাহাড় চূড়োয় একটা নামহীন পরিচয় দুটি পাতা ,

একটি কুঁড়ি এগিয়ে দ্যায়

আমি হতচকিত চেনা পরিবার ,

বাড়িয়ে দেয়া হাত আর সূর্যাস্তের আলো দেখি

হয়তো সবারই ডাকাবুকো একটি নীলাদ্রি ছিল,

বা এখনো হতে পারে , ঠিক নেই কিছু !



আমায় এখন থামাও |  এখন আমি তোমাকে ভাববো|



নীলাদ্রি সময়ের কথন    

নীলকণ্ঠ বিষাদের অশ্রুর ভেতর    

আকাশ জোড়া ঘোর কৃষ্ণবর্ণ মেঘ।

কিছু কিছু স্বপ্নের দিন থাকে , সত্যি সত্যি ঝালমুড়ির জন্য ,

সত্যি সত্যি  কাঁথামুড়ি নিদ্রার  জন্য

অথবা সত্যি জম্পেশ একটা কাল্পনিক গল্পের খসড়ার জন্য।

সেদিন স্বপ্নের মেঘ বুড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় ,

হতাশা ছাড়িয়ে আরো অনেকদূর।

কালির দোয়াতের মতো তরল সব ইচ্ছেপূরণের ঝাঁপি খোলে ,

কোনো একটা ঝর্ণা কলমের কোনকালে শেষ করে ফেলা লেখার পুনরাবৃত্তির জন্য ।  

"এখানে কিছু পুরোনো লেখা আছে তাঁর | জীবনে কোনদিন দ্বিতীয় না হওয়া কোনো এক বিদ্বানের গল্প।| ধর্ম সম্পর্কে তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাঁর গোছানো মতামত। তোমার গবেষণার জন্য লাগলে তুমি নিয়ে যেতে পারো।"

কথাগুলো তাঁর সহধর্মিনীর।  

আমি আপন মনে হাসছিলাম।



গতকালের কলামে নীলাদ্রির সাম্প্রতিক লেখা বেরিয়েছে।

ধর্ম তো ধর্ম , ধর্মের সংজ্ঞাকেও ধুয়ে দিয়েছে।

ওর জন্য আমার মাঝে মাঝেই দুশ্চিন্তা হয়, তীব্রভাবে।

আর সেইসাথে মনে হয় ,কোনো দিন লেখা এই মনীষীর জীবন সত্যের সাথে

নীলাদ্রির দেখা সত্য কতোখানি বিপরীত ,

কতখানি আত্মঘাতী একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য !

আমার মতো চুনোপুঁটি সেখানে টিকতে পারবে তো !  

তবে স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই । আছে কি ?  



প্রান্তিক স্বপ্নের তীর্থযাত্রায়  (নীলাদ্রি র কথা)    

যে জীবন গহীনের স্বপ্ন দেখায়,  সে জীবন ছন্নছাড়া,

যাযাবর জীবন নয়,  তারও উদ্দেশ্য থাকে, প্রয়াস থাকে

গন্তব্যে  পৌঁছবার,  পতনউন্মুখ জলপ্রপাতে র উৎস-মুখ    

খুলে গেলে ,  তাকে যেমন ধরে রাখা যায়না,  তেমনি  ধরে রাখা যায়না

এই তীব্র তাড়নাকে,

তখন একটা  কিছু ঘটনার কারণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়  

এই অঘটনঘনপটীয়সী জীবনে    

বিষন্ন বিকেলের সোনালী আভা

তোমার চুলে  এসে পড়লে

আমার এখনো বাঁচতে ইচ্ছে করে,  

তোমার অজান্তে তোমার চুলের ভেতর প্রাণ ভরে  শ্বাস নিতে  ইচ্ছে করে,

এই ক্ষুদ্র ইচ্ছে গুলো  নিয়ে  বাকি জীবনটা  কাটিয়ে দিতে চাই আমি,  

ভাবতে চাই,  বাঁচতে চাই সেখানে, মৃত্যু যেখানে হানা দেয়নি  জীবনের দুয়ারে,

জীবন যেখানে এখনো প্রগলভ  গতি শীল নদীর মতন।    



ব্যক্তিগত কান্নায়    নীলাদ্রি আজ খুব ভোরে খুন হয়ে গেছে ।  

খবরটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম গুলোতে  তোলপাড়  চলছে সকাল থেকে ,

হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা ,  মুক্ত চিন্তার অবাধ স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ  

ইত্যাদি নিয়ে পর্যবেক্ষণ  -পাল্টা পর্যবেক্ষণ  চলছে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ....    

নীলাদ্রি র সাথে আমার সখ্যতা বহুদিনের ,  

নীলাদ্রি, যে এক ঝাঁক শব্দের পায়রা উড়িয়ে  তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতো সব ব্যাকরণ!  

তার কবিতার শব্দের ফুল ফুলকি দিয়ে  জ্বলত -নিভত , ফিনিক দুধ সাদা জ্যোৎস্নায়।    

সেই নীলাদ্রি এখন সাদা কাফনে আবৃত অসহায় ,  

একটি লাশ হয়ে সমাহিত হবার অপেক্ষায়।    



আমি অন্ধকারে একদিন নীলাদ্রি র কণ্ঠস্বর  শুনতে চেয়েছিলাম ,

গাঢ় , ঘনিষ্ঠ অন্ধকারে।    

অন্ধকারের সেই গানগুলো এখন খুব ব্যক্তিগত কান্নায় পরিণত  

বর্তমান  এবং আগামীকালের দিন রাত্রির আবাহন সত্যতায়।  

নীলাদ্রি আর কখনো কবিতা লেখেনি    

বছর ঘুরে গেছে সে অনেকদিন  

শোকসভার সংখ্যা এখন  হাতেগোনা কয়টি মাত্র  

কালে ভদ্রে তবুও সে উঠে আসে  পত্রিকার পাতায়  

শুধু নীলাদ্রি আর কখনো কবিতা লেখেনি, কোনোখানে।    



যে নীলাদ্রি আকাশের তারাদের সাথে  পাল্লা দিয়ে ঝিকমিক করতো  

শব্দের অসাধারণ কিছু মুহূর্তে,  

খোলা আকাশময় মশারীর ঠাসবুনোটের ভেতর  

সেও কোথাও ফুরিয়ে যেতে চললো,  

তোমার আমার জীবন থেকে,  

এমনকি রাত্রির জীবন থেকেও।    

দিনান্তের সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে  

দিন বদলের সংগীতকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে  

বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে,  

ওই বোহেমিয়ান ঝোড়ো প্রবল হাওয়া ,  

কোনোদিন কুড়িয়ে পাবে নীলাদ্রির  পুরোনো শত লেখা ,

যা কোত্থাও  খোদাই করা নেই বিস্ময়কর ভাস্কর্যে  

অমিত প্রাবল্যে কেউ বলেনা তার কথা।    

শুধু খুচরো পয়সার খেরো খাতায়,

মুদীর দোকানের ধবল দুধের আতিশয্যে  

গলতে থাকা চায়ের ভেতর কিছু দীর্ঘশ্বাস যেন  

কোথাও কাটা ঘুড়ির মতো গোঁত্তা খেতেই থাকে  

আর খেতেই থাকে, অব্যক্ত কোনো তাড়নায়।