প্রথম


মীরা বাড়ি ফিরলেন।  কাল রাতে বিদেশ ফেরত ছুটির একমাত্র ব্যত্যয় হিসেবে বান্ধবীর বাড়ীতে গিয়েছিলেন। তার ইউনিভার্সিটি জীবনের দুজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। দুজনেই বিবাহিত, প্রতিষ্ঠিত এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যায়ে সমাসীন।


মীরার অনেক না বলা কথার ওপরে অনুভবের প্রলেপ লাগে বিশেষ ভাবে।  ক্ষুদ্র জীবন, তার নানা রকম সংজ্ঞায় ভূষণ দরকার লাগে, কোনটা ভূয়সী প্রশংসার , কোনটা অযোগ্যতা বিধায় অবহেলায়।  মীরা প্রশংসা পাবার জন্যই শুধু বন্ধুত্বকে খোঁজেন, বিষয়টা এমন নয়।  তবে সংসারে যোগ্যতার স্বপ্নদর্শনের জন্য সত্য স্বপ্নের প্রয়োজন হয়, যা মাঝে মাঝে একমুখীভাবে ব্যক্তিগত।


মীরা বাড়ী ফিরলেন।  বন্ধ দরজায় তালা ঝুলছে।  তাকে ভেতরে ঢুকতে দেবার জন্য কেউ নেই।


মীরার হাতে একটি ছোট ট্রলি ছিল, পোর্টেবল ব্যাগের অভ্যন্তরীণ সংজ্ঞা বোঝাই কিছু টুকিটাকি দ্রব্যাদি।


মানুষ এতিম হয়, মানুষ হারিয়ে ফেলার অনুভূতিগুলোকে তরল রাখে, তারল্যগুলোকে কোমল পানীয়ের পর্যায়ে নিয়ে। মানুষের বোধ , বিশ্বাসের অংশ খোদায়ী। তবে ক্রোধ কখনো কখনো সেই খোদায়ী জিকিরের ক্ষুধাবোধ। যা শূন্যতার মধ্যে তাকিয়ে থাকে, শূন্যতার সংজ্ঞায় বোধের পরিমিতি কুড়োতে থাকে।


এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের দারোয়ানটি সাহায্য করলেন।  তবে তাঁর অফিস স্পেস টি আগামী পর্বে কোন স্বরে কথা বলবে , আসলেই তা বোঝা যায়নি।

দ্বিতীয়


"তুমি শুধু নিজেকে ছিঁড়তে পারো, বদলাবার জন্য।  মানুষ মূলত স্বার্থপর। তার নিজস্ব বলয়ে সে একান্তভাবেই তার প্রয়োজনে থাকে , সে নিবেদিত প্রাণ নয় , তোমার সংজ্ঞায় তার অনুমোদন না পেলে। "
তোমার উচ্চারণে মমতা ছিল, অথবা আমার অনুমোদিত ধারণার অনুধাবন।


তুমি লিখতে চাচ্ছিলে , ক্ষতস্থানে হাত বুলাবার মতো করে , ধীরে ধীরে। আমি অনুভব করলাম।


আমি তোমার দিকে তাকালাম।  বিশেষ্য, বিশেষণ বা সর্বনামের বাইরে।  অনুভূতির ভেতর।  বেড়াল সংজ্ঞায় যার নাম রংধনু অনুভূতি।


"তুমি কখনো মদ খেয়েছো ?" আমি আচমকা প্রশ্ন করি, তোমাকে।


তোমার চোখে একধরণের সংযত হবার চেষ্টা ছিল, নেভা বাতির গল্পদিনের মতন।  যার চোখের ভেতর রাস্তার বড় ল্যাম্পপোস্টের বাতি এসে জোরালো হয়ে পড়লেও, আমি কোনো না কোনো ভাবে জানি, তা আমাকে নিয়ে , তবে আমার খোঁজা তাকে পায়নি।  আমার আরো সংযত, অন্তর্মুখী হবার প্রয়োজন ছিল, তোমার মতন।


"কেন এই প্রশ্ন করছো?" তুমি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজছিলে। নির্দোষ, ভেতর দেখা চোখ।


আমি বাড়ীর পাশের মদের দোকানটার পাশে রোজ হেঁটে যাই।  ওটাও যে দ্রষ্টব্য স্থান, কোনোদিন মনে হয়নি তা।


ভীষণ ভাবে পারছি কদিন ধরে।  কোকের বোতল গুলো রক্তের দাগ হয়ে উঠছে, পারফিউম ছড়ানো মুহূর্তগুলো ব্যাভিচারের সংজ্ঞার।  আমার সাথে হিতৈষী সংজ্ঞা নিয়ে কেউ থাকে, যাকে কোনো হিতার্থের বোধ কখনো সাহায্য করেনি, আমি মুখ খুললে।  


আমি একটা শূন্যতার সিঁড়ি বেয়ে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানে উঠতে থাকি , উঠতে থাকি, যা ওই অভিজাত এপার্টমেন্টের  স্পাইরাল সিঁড়ির সংজ্ঞাও আটকে দেয়।  আমি উঠতে উঠতে শূন্যতায় বাড়ী ফিরি।


যেখানে সিঁড়ির শেষমাথায় তালা ঝুলছে।


একদিন মদ খেতে যাবো, সত্যি।  ছুটি না পেলে অনন্তকালের এই গল্পে।