টুকি টাকি , টুকরো ফাঁকি



মোজাম্মেল সাহেব বসে বসে ঘামছিলেন।  
তাঁর গুপ্তরহস্যের বাঁশীটি থেকে থেকে
ক্ষুধাবোধে বেশ নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে।
তিনি চতুর্থবারের মত বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে হাঁকলেন,
"দারোয়ান, এদিকে একটু শুনে যাও, শুনেছিলে?"
অগত্যা সিঁড়ি দিয়ে একটি ছায়ামূর্তিকে উঠে আসতে দেখা গেলো।
"আমাকে কি কিছু বলবেন?"
"চার বার ডাকলাম, কোথায় ছিলে এতক্ষন?"
"বাচ্চাটার দু'দিন ধরে প্রচন্ড জ্বর।  দেশে খোঁজ নিচ্ছিলাম। "
"ডিউটির সময় এতো খোঁজ নিলে তো চলবে না বাবা !
আসলেই চলবে না।
দেশের গণতন্ত্র বিষিয়ে উঠলো বলে,
সারা দুনিয়ার মাল মসলাই  করোনার জ্বরে ওঠে আর নামে,
তা তোমার ছেলের জ্বর এলে আর অস্থির কেন এতো ?"
"কি করবো বলুন, ওই একটাই স্বপ্ন, এক রত্তি ছেলে ,
মানুষ করতে না পারলে নিজের দোষ এড়াই কি করে বলুন?"
"এড়ানোর দরকার নেই।  তাগিদ সর্বত্র।
পাজামা পাঞ্জাবী লন্ড্রীতে দেয়া হয়েছিল ড্রাই ক্লিনিং এর জন্য
তুলবে কবে? আমি কবরে যাবার পরে কি?"
"না না সে কি কথা, এখনই যাচ্ছি।"
"আর, মুদীর দোকান হয়ে এসো, পান প্রয়োজন।"



সিদ্দিক সাহেব ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা রেহানার দিকে তাকালেন।
ভদ্রগোছের এই পুত্রবধূটিকে তিনি বেশ পছন্দ করেন, প্রায় নাতনীর সমান।
তবে সে গাড়ী চালাচ্ছে , না গরুর গাড়ী সে বিষয়ে তাঁর স্ত্রী যারপরনাই বিরক্ত।
গ্রামদেশে গরুর গাড়ীকে এরোপ্লেন বলে।  
তা যাক সে কথা, ও বিষয়ে কথা না বলাই ভালো।
"দিলরুবা, রেহানাকে দেখেছো আমাদের?" তিনি নীরবতা ভাঙলেন।
দিলরুবা অত্যন্ত নীরস মুখে তাকালেন, "কি?"
"লেন ধরে কত গাড়ী যাচ্ছে আর আসছে।  তোমার বৌমার ধৈর্য্য
দেখো, একই স্পীডে সাইড দিচ্ছে তো দিচ্ছেই , দেখেছো?"
রেহানা রিয়ার ভিউ মিররে হাসির আওয়াজ শোনবার জন্য প্রস্তুত ছিল।
সেও মনে মনে বললো , "পানের দোকান , বাবা ! বরফ শীতল পানের দোকান !"