কোথাও খুব অদ্ভুত ভাবে মনে হয়, শুধুমাত্র যাপনের জন্য জীবন। পরার্থে, জনহিতকর বলে কেউ অযথা টানা হ্যাঁচড়ার বিষয়বস্তু করে ফেলছে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে।
বইটা পড়া শেষ হয়েছে। মোজাম্মেল আধশোয়া হয়ে খাটে শুয়ে ছিলেন। তিনি চোখ থেকে চশমাটি খুলে রাখলেন। ঘষা কাঁচের চশমা , অল্পতেই ঘেমে ওঠে দুই গোলার্ধ। স্ত্রীর পাঠানো রোজকার চায়ের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। মফস্বল শহর, রোজকার খবর রোজ পৌঁছাতে এখানে বেশ দেরী হয়।
সানা বেশ খুঁটিয়ে খবরের কাগজ পড়েন। দৈনিক একান্তের নিভৃতচারী সে সংলাপ। প্ৰত্যন্ত অঞ্চলের এই গৃহবধূর নখদর্পনে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতির খুঁটিনাটি থাকে , তবে বড় রহস্যময়ী রূপকথার মত। ঘরের চৌহদ্দির বাইরে গেলেই ঘেমে ওঠে অকারণেই তাঁরও চশমা। তাঁতের শাড়ীর জরি পাড়ের ঘোমটাটা নেমে যায় কপালের ঝুল গড়িয়ে নীচে অব্দি , নতুন পথের আলোয় নতমুখী জড়সড় কায়, লাজনম্র নাস্তানাবুদ প্রায়।
মধ্যবয়েসী সানার ঘরোয়া পরিতৃপ্ত জীবনে আছে বর্ষীয়ান স্বামী মোজাম্মেলের দেখাশোনা , আছে স্কুলফেরতা ছোট ছেলেটার সাথে দিনান্তের সংলাপ , আর অবকাশে আছে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা অন্যান্য সন্তানদের সংবাদের সাথে সাথে ধাতস্থ হবার সময়। মোজাম্মেল ও সানার বড় ছেলেটি  ঢাকায় বেশ বড় চাকুরী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত , মেজটি কলেজ পড়ুয়া জীবনের তাগিদে বড়ভাইয়ের সংসারে আশ্রিত , আর সর্বকনিষ্ঠটি তাঁদের সাথেই থাকে।  নাবালক সে ছেলের বায়না অনেক , শেষবয়েসের প্রান্তে দাঁড়িয়ে সে বায়নাগুলোকে খুব কঠিন মনে হয়নি বটে , তবে যোগান দেবার ধাতস্থ প্রজ্ঞা হয়তো আরো গভীর হতো , জীবনে স্বস্তি থাকলে পুরোমাত্রায়।  ছেলেটি ক'দিন ধরে নানাবিধ অশান্তিতে ভুগছে , এবং মানসিক অশান্তির বেশ বড়সড় লক্ষণ তার মধ্যে প্রায় উপস্থিত। ওকে তাই বড় কেউ একটা ঘাঁটায় না।
সম্পর্ক কুর্শি কাঁটার সুতোর মুন্সীয়ানার সাতকাহনের মতোই , ধীরে ধীরে বুনতে থাকে সময় ,ব্যক্তিগত আর সামাজিক আলাপচারিতার সাতরঙা বুনোটকাল। খুব নিখুঁত জলরঙে আঁকা কোনো শিশুর ছবির মতোই সে ছবিতে বাস করে নিস্তরঙ্গ জলের মতন গ্রামীণ কর্মমুখর জীবন। অনেক সংলাপেও তার নিভৃতচারী ধ্যানটি ভাঙে না। জলমগ্ন শামুকের মত ধীরগতি তার, তবুও যেন জলমগ্ন শালুকের ওপরে সবুজ ব্যাঙটার লাফ দিয়ে চলে যাবার মত তা বড় বেশী একমুখী হয়েও অনাদিকালের, বহমান গতিশীলতার ছায়াচিত্র।
ক'দিন ধরে মোজাম্মেলের হালকা জ্বর আসছে।  কুয়াশাও পড়ছে পুরু আস্তর জুড়ে, বেশ ক'দিন ধরেই। গ্রামের শীতকাল সম্বন্ধে রচনা বইয়ের পৃষ্ঠার নিবন্ধটি শহুরে ছাত্র ছাত্রীরা মুখস্থ করে বটে , তবে চাক্ষুষ সে শীতের আমেজ উপলব্ধি করবার সৌভাগ্য তাতে ঘটেনা। বড় গেলাসে খেজুরের রসে ডুবানো মুড়ি,সকাল বেলা ছাই দিয়ে মেজে রাখা ঝকঝকে সোনার মত কাঁসার বাসনপত্র , আর নাস্তাপর্বের পূর্বকথায় উনুন ঘেঁষে ঘরের বৌ-ঝিদের আলাপ।  খুব অনাড়ম্বর, নীচুস্তরের এক জলপ্রবাহের শব্দ সে যেন। জীবনের স্তরে স্তরে যা সূক্ষ্ম আনন্দে জড়িয়ে থাকে আবহমানের রেশ নিয়ে।
অন্যদিনের, অন্যমনের বলে ঘর গেরস্থালির কোন পূর্বশর্ত সংসারে বোধহয় খাটে না। সবকিছুই বোধহয় খুব মনোযোগের দাবীদার। কি অসুখে , কি বিসুখে।
চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিয়ে মোজাম্মেল প্রায় আত্মবিস্মৃত হলেন।
মুহূর্তকালের মগ্নকাল।  অনুচ্চারণের বাঙময় কথকতা।
উঠোনের প্রান্ত জুড়ে ফলাদি বৃক্ষের সমাহার।  সন্ধ্যে হতেই ঝিঁঝির ডাকে পাড়া জুড়োয়। তবে , সে পর্যন্ত তাকে দিনান্তের সূর্যালোকে ডুবে যাওয়া ছোঁয়াচ নিয়ে শান্ত হয়ে অভিনিবেশের সুযোগ দেয়া স্রষ্টার অভীপ্সা হয়তো , খুব বেশি না ভেবেও এ হয়তো বলে দেয়া যায়।
অস্তগামী সূর্যালোকের বিষন্ন সৌন্দর্য নিয়ে অজস্র কাব্য গাঁথার স্তুতি আছে , আছে বিবাগী সে কবিতায় নস্টালজিক সৌন্দর্যের উপসর্গ। তবে আসল কথা বোধহয় এইটে যে, সোনারঙা সূর্যের আলো ঝরে পড়ছে চিরল পাতার সবুজ বৃক্ষের মর্মরে , এই ছবিটি নিতান্ত শ্বাশত কালের।  জলমগ্ন শীতল নিস্তরঙ্গতার মাঝে সূর্যের আলো ওম ঢালে, ঈষৎ ভোলায়, ঈষৎ জাগায়ও। চলতি পথের পথ পরিক্রমায় ছায়াসঙ্গী সে এক চিত্রসুষমা।
সবার চেয়ে কাছে আসা
সবার চেয়ে দূর
বড় কঠিন সাধনা , যার  
বড় সহজ সুর।।
গীতাঞ্জলী, রবি ঠাকুর
যে গান নিত্যকালের , চর্মচক্ষুতে তা মোটা দাগে ধরা দেয়না,  সেই তো শ্বাশত কালের সৌন্দর্যের কথকতা। রোজকার ঘষামাজায় ভোরের আলোর সৌন্দর্যের মতোই রোজ ফোটে সেথা নিসর্গের শতদল। চিঠির সুগন্ধী খামে, চুলের রুপোর কাঁটায় , অনাগত সন্তানের শুভেচ্ছায় আর পৌষ  দিনের সুঘ্রাণে। বড় নীরব, তবু মুখরতায় কান্তিময় বড় বেশী,  সে যাত্রাপথ।


তোরই জন্য শরীরের ভারে আমি নত
তোরই জন্য গল্প বুনেছি কত কত
তোরই জন্য গান, তোকে ঘিরেই খেলা
তোকেই দিচ্ছি আমার সকাল ছেলেবেলা
মৌসুমী ভৌমিক
For you, I endured my baggage  
of extra pounds , overwhelmed
For you, my time wove numerous stories,
quilted and cozy, crafted  
For you, the song
For you, the playful time muses along.
Evolving you, I miss you my morn
Childhood time, gone long, bygone.


"মা, তোমরা সব কেমন আছো? আমরা আসছি পরের সপ্তাহে।  ছোট রুবি দিদাকে দেখবার জন্য খুবই অস্থির হয়ে আছে।  আশা করছি, এবার শান্তিমত তোমার কাছে এসে ক'টা দিন থাকতে পারবো।  শহরে ভীষণ হাঁপিয়ে ওঠা ব্যস্ততা, ভালো লাগে না আর।"
সানা চিঠিটা বার কয়েক পড়লেন। আজকাল প্রায়শই বিমনা লাগে। আর চোখের জলেরও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। অকারণেই বিব্রত বোধের সাথে আবিষ্কৃত গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়বার অনুভব। ছেলে আর ছেলের বৌ এলে এবার ঠিক দু'বছর হবে।  নাতনীটির বয়স হলো তিন কি সাড়ে তিন বছর। ।
শহুরে জীবন শিশুদেরও আলাদা করে চেনায়। চেনায় ব্যস্ততার মধ্যে ছুটতে থাকা জীবনের দ্রুতি। দিনশেষে আকাশ ছোঁয়া প্রান্ত জুড়ে থাকে ব্যস্ত কর্ম মুখর জীবনের কথকতা।
তবু সব মিলিয়ে মানুষ সত্যি কোথাও হাঁপিয়ে ওঠেনি? সকল ব্যস্ততার মাঝেও প্রাণের খোরাক যোগায় , ঘড়ি ঘড়ি এমন দুরাশা করা কঠিনই বৈকি !
যে কালের যে আবাহন !
সানার হাতের সেলাই ফোঁড়াইয়ের কাজ প্রায় বিখ্যাত। লোপাকে তিনি কাঁথার কাজ করা একটি চাদর উপহার দিয়েছেন, অতিথি সমাগমে সে চাদরটির সদ্ব্যবহার করে , বেশ যত্ন করে। ঘন ক্রিম রঙা জমিনের ওপরে রক্তরঙা সুতোর কাজ। ঝকঝকে, মরচেবিহীন।
ছোট রুবিটা ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠছে ইদানিং। মাথায় লম্বাও হয়ে যাচ্ছে বেশ দ্রুত, জামা ছোট হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। নানীবাড়ী আর দাদীবাড়ী থেকে প্রায়ই তার নামে পোস্টাল সার্ভিসে কৃতার্থ হয় বাড়ী।
দু' তরফেরই বড় নাতনী বলে কথা !
দেখতেও বেশ সড়গড় হয়েছে সে।
আর এখানেই লোপা থামে।  সে অনুমতি নেয় স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবার, কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবার।  জীবন আসলেই কম ভরিয়ে দেয়নি!
রুবির মুখের আদল জুড়ে তার বাবা, হয়তো তার দিদাও কিছুটা।  লোপা খুব খতিয়ে আদতে দেখেনি। ন'মাস গর্ভধারণের পরে সদ্যজাত মেয়েকে খুব খুঁটিয়ে চিনতে চাইতো সেও।
লোপার মা হাসতেন, বকতেনও।
"মা, বলো না, কোথায় আমার মত?"
নবজাত শিশুদের শরীরে একটা ঘ্রান থাকে, অদ্ভুত সুন্দর দুধ-দুধ গন্ধ , ম-ম করে ছোট্ট শরীর জুড়ে , আলোর মতন। ঘরের আটপৌঢ়ে চৌহদ্দি অজানা কোন এক বন্ধনে ভরে ওঠে শুভেচ্ছার আনন্দ নিয়ে।
হয়তো নব প্রাণের আনন্দে, নব প্রাণের জাগরণে।
লোপার মা রুবির শরীরে তেল মাখিয়ে রোদে শুইয়ে রাখতেন।  জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়তো ছোট্ট রুবির শরীরে।  সে ছোট রুবি একদিন উপুড় হলো, হামা দিলো, ধরে ধরে দাঁড়াতে শিখলো , হাঁটি হাঁটি পা-পা করে হাঁটলো বাড়িময়।
সব মনে হয় এই তো সে দিনের কথা!
জীবনের ফল্গুধারা অমিত লাবণ্যের উজাড় করা সম্ভাবনার খরচে দিক আসলেই নয়। বরং তা ঘটে অনেকটা গুল্মলতার উন্মেষকালে , তার লতিয়ে  উঠবার মতোই দৃষ্টির অগোচরে, আনমনে। ছ'মাসে , ন'মাসে তার চোখে পড়বার সম্ভাবনার যোগসূত্র ঘটে, হয়তোবা, বড়জোর।
ঘাসের বুকে শিশির কণার মত ক্ষয়িষ্ণু সে জীবন।  অমোঘ দিনাতিপাতের সম্ভাবনা নিয়েও তার নিরন্তর দিন গুজরান।
নিত্যদিনের খেরোখাতা।
রুবি যথারীতি খেলছিল সানার ঘরে। আজ সানার শরীর খারাপ। হাঁচি পড়ছে , মাথা ভার ভার , আর সারা শরীর জুড়ে বেশ ব্যথা। নাতনীর বেশ ক'বার ডাক সত্বেও তিনি আজ উঠতে পারলেননা, খেলার সঙ্গী হয়ে।
ছুটির দিন বলে, আজ মোজাম্মেল আর সানার ছোট ছেলে উল্লাস বাড়ী ছিল। রুবি বলতে গেল ছোট চাচাকে খেলার কথা।
উল্লাসকে আসলেই আজকাল আর তেমন কেউ ঘাঁটায় না, কারণ তার চাপা অশান্তি আর রাগের কারণ হতে পরিবারের কেউই স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা।
ছোট রুবির তা জানবার কথা নয়।
ছোট রুবির তা মানবার কথা নয়।
রুবি ছোটচাচাকে দেখাতে চাচ্ছিলো সবুজ কলাপাতার ঘড়িটা তার হাতে কেমন মানাচ্ছিলো।
রুবির হাতের কলাপাতার ছোট সবুজ ঘড়িটা।  ছোট সবুজ খোপ বানিয়ে তা হাতের সাথে মানানসই করে আটকে নেয়া সম্ভব হয়।
রুবি ছোটচাচার ঘরে ঢুকতে গিয়ে দরজায় মৃদু করাঘাত করলো।
"চাচা, কি করছো ?"
সে কণ্ঠ উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো।
বেশ ক'বার দরজা ধাক্কা দেবার পরে দরজাটা আপনা আপনিই খুলে গেলো। রুবি বুঝতে পারলো, চাচা দরজাটা মোটেই লক করে রাখেনি , ওটা ভেতর থেকে শুধু ভেজানো ছিল।
চাচা বিছানার ওপরে আধশোয়া হয়ে ছিল।  সে রাতে তাহাজ্জুদ পড়বার চেষ্টা করছে ক'দিন ধরে। বিছানার একপাশে জায়নামাজ আর টুপিটা আলগোছে রাখা।
"চাচা তোমাকে আমার ঘড়িটা দেখাবো, দেখতে চাও?"
উল্লাস চোখ খুলে তাকালো, তার চোখ জুড়ে লালচে ভাব , ক্লান্তি আর অনিদ্রার চিহ্ন।
"সুন্দর তো, মা! কে বানিয়ে দিয়েছে?"
"দিদা বানিয়ে দিয়েছে।  আমার জন্য।"  রুবি ছোটচাচাকে দেখছিলো।
উল্লাস উঠে বসে রুবিকে কোলে তুলে নিলো।  
"অনেক সুন্দর বুড়ি ! তোর কথা এখন কি সুন্দর স্পষ্ট ! একটুও জড়তা নেই !"
"মা বলেছে আমি এখন খুব ভালো ছড়া বলি।  শুনতে চাও ?
তোমায় একটা শোনাবো?"
"হ্যাঁ, বেশতো বল।  
কোন ছড়াটা বলবি?
এটা পারিস?
তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে
সবগাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে। "
"না ,আমি এটা পারিনা তো ! আমি এটা পারি,
ওই দেখা যায় তালগাছ  
ওই আমাদের গাঁ
ওই খানেতে বাস করে
কানা বগীর ছা।"
তালগাছ নিয়ে কবিতা দুটি প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিলো, তবে উল্লাস তা থামিয়ে দেয়।  
সে রুবিকে খুব অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে হঠাৎ,
"বুড়ি তুই কি জানিস, আল্লাহ কে?"
ছোট রুবি থেমে যায়।  সে খেলতে খেলতে অনেক কিছু শোনে আশে পাশে।  
তবে এমন প্রশ্নের জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলোনা।
সে আনমনে বলে উঠলো
"না।  মা জানে।  আর দিদা জানে।"
উল্লাস যারপরনাই  অপ্রস্তুত হল। তার এ প্রশ্নটা আসলেই করা উচিত হয় নাই।
সে মাথা নাড়লো, আপনমনে ।
"আচ্ছা, তাহলে মা আর দিদাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে , তাইনা?
তুই কি এখন খেলবি?
আমার সাথে?"
"হ্যাঁ
কি খেলবি?"
-"ইচিং বিচিং ",
সে বড় এক অদ্ভুত খেলা।  হাতের আঙ্গুল গুলো বিছিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।  আরেকজন বিছিয়ে রাখা সে আঙুলের ওপরে ছড়া বলে বলে আঙ্গুল দিয়ে গোনে।  
ইচিং বিচিং চাম চিচিং
চামের আড়া দক্ষিণ পাড়া
ওঠো ওঠো ভাইরে
সোনার ছাতি ধর রে
ছাতির ওপর গামছা
মোষ মারা তামসা
মোষের তলে
পঞ্চবাতি জ্বলে
জ্বলুক বাতি পুড়ুক তেল
আম শালুকের পাকা বেল।


আঙ্গুল ছুঁয়ে যার হাতের আঙ্গুল মুড়িয়ে যাবে আগে, সে হবে বিজয়ী।
পাকা এক ঘন্টা পর রুবি চাচাকে রেহাই দিলো।  ঘর থেকে বেরিয়ে সে ছুটতে ছুটতে গেলো বাবার কাছে।
"বাবা, আল্লাহ কে? চাচা জিজ্ঞেস করছে।"
"আল্লাহ কে , সেটা তোকে জিজ্ঞেস করছে গর্দভটা?" আনু আকাশ থেকে পড়লেন।
"না আমাকে না।  নিজের মনে।
আমি গেলাম।  তখন বললো।
আমি বললাম, মা জানে।  আর দিদা জানে।"
আনু বেশ খানিকক্ষন সময় নিলেন। ধাতস্থ হতে।
তালিকায় আসলেই তাঁর বা মোজাম্মেলের নাম নেই।
জমে থাকা জলে , বৃষ্টির ঝিরিঝিরি জমা জলের মধ্যে , উল্টে থাকা গাছটির প্রতিবিম্বে ঝাঁকড়া চুলো ছায়াটি দেখেছো কখনো ? বাস্তব পৃথিবীর প্রতিবিম্বের ছায়ায় অন্য এক পৃথিবীর গল্প মনে হয় যেন তাকে।
সূর্যের হালকা আলো শরীরে এসে পড়ে তার, থিরথিরে কাঁপতে থাকা জলে জেগে থাকে ছায়াসঙ্গী অন্যভুবনের। কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি অনুভূতির এই একান্ত মুহূর্তের পরিণত বোধের প্রাপ্য কতটুকু। কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি সত্য সৌন্দর্যের সে স্থায়ীবোধের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি না।
সৃষ্টিশীল সৌন্দর্যের আনন্দের মাত্রাবোধ আলাদা। তার জন্য অপেক্ষা করবার মধ্যে একধরণের সত্য আনন্দ আছে। আরো অন্য কিছুর প্রসঙ্গ যদি নাও আনা সম্ভব হয়, দিনশেষে তোমার এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার মূল্য সে কিভাবে দেবে , সে ব্যাপারে কোন বৃহৎ উচ্চাকাঙ্খা না থাকাই বোধহয় ভালো।
যত দুরাশা , ততো উপশমের আড়ম্বর।  
একলা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আজও প্রচন্ড অদ্ভুত লাগে। আরো মনে হয়, বাড়ী ফিরলে চমকে দেয়া যাবে বাকি পৃথিবীর জনসমাগমকে। ভীষণ একলা হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিভূ হিসেবে সজোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে এ অংশে। অকারণে দিনের রাজা সাজতে ইচ্ছে করে নিঃস্ব দীনহীন অংশে শাহানশাহর কবন্ধ সাজ নিয়ে।
ইচ্ছে ঘুড়ির অসাধ্য কোন গতি নেই , যাত্রাপথেরও নেই কমতি।
শুধু প্রত্যয় , আনু বিদায় নেবার সময় জল গড়াতে থাকা সানার চোখের দিকে তাকিয়ে লোপার মনে হবে অনুক্তিতে থেকে গেলো অনেক আরো কিছুই , যাকে ব্যক্ত করবারও তেমন কিছুই নেই।
উপসংহারের অপরাধবোধ।।