"" বিলিরিক(BiLyric) কথা ""


      ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


( বিলিরিক(Bilyric) একটি উত্তমমিল
ও সর্বোত্তমমিলের কবিতা)


বিলিরিক কবিতা লেখার ধারা ও কাঠমো
নিচে আলোচনা করা হলো।


#-আদি ধারা -১


১- রেফ যুক্ত শব্দ ও ঁ-বিন্দু ব্যবহার যাবে।
২, সকল ধরণের ফলা, অনেস্বর, বিসর্গ ব্যবহার করা যাবে,
তবে অনেস্বর-কে অক্ষর হিসাবে
গোননা করতে হবে।
৩- যুক্ত অক্ষর ব্যবহার করা যাবে,
কিন্তু
যুক্ত অক্ষরকে ভেঙে ব্যবহার করা যাবে না।
৪- যতির ব্যবহার ঠিক থাকবে
৫- এক অক্ষরের শব্দ এবং কোনো বিজোড় অক্ষরের শব্দ  
অর্থাৎ
১,৩,৫,৭ ইত্যাদি অক্ষরের শব্দকে ব্যবহার করা যাবে না।
--------------------------------------------------------------------------


#-আদিধারা- ২


১- অনেস্বর, বিসর্গ, ফলা
এবং
রেফ যুক্ত কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
২- ঁ বিন্দু ব্যবহার করা যাবে না।
৩- একাধিক যুক্তবর্ণ ব্যবহার করা যাবে
কিন্তু
যুক্ত অক্ষরকে ভেঙে বসানো যাবে না।
৪- যতির ব্যবহার ঠিক থাকবে।
৫- এক অক্ষরের শব্দ এবং কোনো বিজোড় অক্ষরের শব্দ  
অর্থাৎ
১,৩,৫,৭ ইত্যাদি শব্দকে ব্যবহার করা যাবে না।
--------------------------------------------------------------------------


#-বিলিরিক ধারা তিন


১- এই ধারায় কোনো প্রকার ফলা
ব্যবহার করা যাবে না
২- দৃশ্যমান কোনো যুক্তাক্ষর
অর্থাৎ
যে যুক্তবর্ণ দেখা যায় সে যুক্তবর্ণকে
ব্যবহার করা যাবে না
২- যুক্তাক্ষরকে ভেঙেও ব্যবহার করা যাবে  না
৩- অনেস্বর বিসর্গ, রেফ যুক্তশব্দ, ঁ-বিন্দ যুক্ত শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
৪- এক অক্ষরের শব্দ এবং কোনো বিজোড় অক্ষরের শব্দ  
অর্থাৎ
১,৩,৫,৭ ইত্যাদি শব্দকে ব্যবহার করা যাবে না,
--------------------------------------------------------------------------


          বিঃদ্রঃ-
উপরের আলোচিত তিনটি ধারায়
নিম্নের উল্লেক্ষিত তিনটি কাঠামোতে
বিলিরিক কবিতা ও ছড়া
লিখতে হবে।
  
#-কাঠামোঃ- ১ (এক)


প্রথম দুই লাইন  বারো অক্ষরের হবে শেষে মিল
পরের দুই লাইন ছয় অক্ষর করে হকে
অর্থাৎ
প্রতি লাইনে ছয়টি অক্ষর হবে
এবং শেষে মিল থাকবে
রাখতে হবে
চতুর্থ লাইনের সঙ্গে , পঞ্চম লাইনের  মাঝে
অর্থাত্ প্রথম ছয় অক্ষর শেষে মিল রাখতে হবে,
এবং
পঞ্চম লাইনের শেষ শব্দের সঙ্গে
ষষ্ট লাইনের বারো অক্ষর শেষে মিল দিতে হবে
এরং
প্রতি লাইনে ছয় অক্ষর শেষে  যতি বসাতে হবে শুধু
প্যারার শেষে এক দাড়ি।


উদাহর


১-
পারে থেক তুমি
(বিলিরিক ধারা এক
কাঠামো এক)


ভালোবাসো তুমি, জানি মনেপ্রাণে,
আছো হৃদ মাঝে জীবনের ঘ্রাণে,
তুমি আছো তাই,
আমি বেয়ে যাই,
এই তরীটাই, উঠে রাতে চাঁদ,
কাব্যবনে পাতি, আমি প্রেমফাঁদ।


স্মৃতি বুকে রেখে , কাঁদি সারাবেলা
মনেমনে তুমি, করো শুধু খেলা,
থাকো দূরে দুরে ,
জীবনের সুরে সুরে ,
আন্ধকার পুরে , একা আছি আমি,
তোমাকেই চাই ,হোক বিশ্ব দামি ।


জীবনের কোষে , আছো তুমি মিসে,
তাই আমি মরি ,বিরহের বিষে,
মনে পড়ে যত,
আশা বাড়ে তত,
শির করি নত, শুধু অশ্রুজলে,
কর্ম মাঝে পাই, আমি পলেপলে।


ভালোবাস তুমি, জিনি আমি জানি,
কৃপা করে দিছো, এই প্রাণদানি,
বেশে তুমি ভালে,
দিয় তুমি আলো,
সুধারাশি ঢালো, এলে সাঁঝবেলা,
পারে থেকে তুমি, নিয়ে প্রেম ভেলা।


বড় কষ্ট বুকে
(বিলিরিক ধার দুই
কাঠমো এক)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


বড় কষ্ট বুকে, আছে দিনরাত,
একা বসে শুধু, করি আশ্রুপাত,
হৃদে যিনি ছিলো,
সেও দুখ দিলো,
সব কিছু নিলো, এসে চিত্তদেশে,
আছি আমি ভবে, দ্বীনহীন বেশে।


সেই তারে দেখি, বেহনের বেলা,
আজ দূরে থেকে, করে শুধু খেলা,
বিশ্বরূপে তারে,
দেখি বারেবারে,
ঘোর অন্ধকারে, থাকে হৃদিঘরে,
আলোটাকে জ্বালে, অতি সমাদরে।


যত আমি ভাবি, তত অশ্রুজল,
ঝরে দিনরাত, শুধু অবিরল,
ফেলে অভিমান,
করি আত্মদান,
আনুরাগী বান, বয় যায় চিতে,
তারে মন চায়, সব কিছু দিতে।


এখনও আমি, চোখে দেখি নাই,
হৃদি অঙ্গিনায়, তরে শুধু পাই,
মনোকষ্ট থাকি,
করি ডাকাডাকি,
দেখা দিবে নাকি, বলো একবার,
চেয়ে দেখ তুমি, এলো অন্ধকার।


উদাহরণ


৩-
আগুনের খেলা
(বিলিরিক ধারা তিন
কাঠামো এক)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


কত কথা বলি , কত পথে চলি ,
ভুলে যাই সব , গিয়ে চাপাগলি ,
দেখি শুনি যত ,
যার যার মত ,
নেই মনমত , দুনিয়াতে আর ,
ভাবে ঠিক আছে , মত যার যার ।


ছলনার জাল , মানুষের মনে ,
শুধু ঘোরা ফেরা , জীবতারা বনে ,
ভাদরের ডাকে ,
নদনদী থাকে ,
জলবেণী পাকে , ভাঙে তার কূল ,
তবু নদী নদ, বুঝেনাতো ভুল ।


পৃথিবীটা আজ , কালিমায় ভরা ,
সবুজের ঘরে , আগুনের খরা ,
এই দেহ ঘরে ,
মিলামিনে ভরে ,
তবু দিন করে, রোদ নিয়ে খেলা ,
আগুনের তাপ , পাই সারাবেলা ।


সবুজের রঙ , হয়ে গেছে শেষ ,
লীন হয়ে গেছে , মানবিক দেশ ,
দেখি দিনরাত ,
করে বাজিমাত ,
রামেরকরাত , সকলের কাছে ,
সুনীতির ধারা, বোবা হয়ে আছে ।


জাতপাত নিয়ে , আছে মাতামাতি ,
নারী আর নর , এই দুই জাতি
এই কথা ভুলে ,
বৈরী খাতা খুলে ,
বিষ খাই মূলে  , বুঝিনাতা কেউ ,
মুখে মুখে শুধু , মানতার ঢেউ ।
-------------------------------------------------------------------------


#-কাঠামোঃ-২ (দুই)


প্রথম দুই লাইন ষোল অক্ষর ,
যতির ভিতরে আট আট অক্ষর
চরনান্তিক মিল থাকবে
পরের দুই লাইন আট অক্ষর,
অর্থাত
প্রতি লাইন আট অক্ষের হবে
এখানেও মিল রাখতে হবে
এবং
শেষ দুই লাইন ষোল অক্ষরে
যতির ভিতরে আট অক্ষর থাকবে ,
পঞ্চাম  লাইনের প্রথম যতির ভিতরে
চতুর্থ লাইনের সাথে মিল রাখতে হবে
অর্থাত্
পঞ্চম লাইনের প্রথম আট অক্ষর শেষে
চতুর্থ লাইনের সাথে  মিল রাখতে হবে
শেষ দুই শব্দের চরনান্তিকমিল
রাখতে হবে ।
প্রতি আট অক্ষরে যতি দিতে হবে ও
প্রতি প্রেরায় শেষে এক দাড়ি হবে।


উদাহরণ


১-
অবশেষে ইতিবেলা
(বিলিরিক আদিধারা-এক
কাঠামো দুই)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


বহুরূপে  বিশ্বটার, নর-নারী ঘোরেফেরে,
সব দেখি জ্ঞানীগুণী, হৃদয়টা মেরে মেরে,
মোহসুখে ভরে প্রাণ,
চায় শুধু পরিত্রাণ,
জীবনের ঐশী-ঘ্রাণ, রেখে যায় বহু দূরে,
তালহারা হয় শেষে, জীবনের মূল সূরে।


ফাগুনের প্রেমরণে, আবেগের সেনা হয়,
সাঁঝবেলা জীবনের, হয় শেষে পরাজয়,
কপালতলার গাঙে,
দুটিকূল শুধু ভাঙে,
বেলাশেষে মন রাঙে, গোধুলির রঙ মেখে,
চলে শেষে তিন পায়, সততার পথ দেখে।


যারা ভোর এনেছিলো, নেই তার কোনো খোঁজ,
অবহেলা মধ্যবেলা, করে সব রোজ রোজ,
আদি মূল সব ভুলে,
কুমতির পাল তুলে,
জীবনের ঝুলি খুলে, আত্মধন করে খালি,
রাশি রাশি ভুল করে, দিবে চায় জোড়াতালি।


কেনো এলো কে-বা, সেই জীব স্রষ্টা প্রাণেশ্বর,
কার দ্বারা সৃষ্টি এই, মহামূল্য দেহঘর,
সব কিছু ভুলে গিয়ে,
ফানুসের আলো নিয়ে,
জীবনের সব দিয়ে, শুন্য হাতে বেলা শেষে,
শুধু থাকে হাহাকার পৃথিবিকে ভালোবেশে।


২-
বিশ্বজোড়া শিক্ষালয়
(বিলিরিক ধারা দুই
কাঠামো দুই)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


বিশ্বজোড়া শিক্ষালয় শিক্ষজ্ঞান বেশ ভালো,
মূল শিক্ষা মনবতা, জ্ঞানদীপ আগে জ্বালো,
কুশিক্ষায় সব শেষ,
বেড়ে যায় দ্বেষরেষ,
থাকো তুমি অনিমেষ, আলোটার দিকে চেয়ে,
থাক কেন অন্ধকারে, অজ্ঞানের সুরা খেয়ে।


জীবনটা ক্ষণিকের, আত্মশুদ্ধি আজ করো,
নিষ্ঠা ভাবে এক মনে, সততার পথ ধরো,
সেরা এই ভালোবাসা,
আত্মসুখ মিছে আশা,
ছেড়ে দেও দাবাপাশা, খেলাধূলা একেবারে,
ভেবে দেখো যেতে হবে, ঘোর কালো অন্ধকারে।


জাত নিয়ে কেনো করো, দুনিয়াতে বাড়াবাড়ি,
পথ হারা হলে হবে, চিরতরে ছাড়াছাড়ি,
সাথীহারা হয়ে শেষে,
রবে তুমি একা দেশে,
মানুষকে ভালোবেসে, করো তুমি আত্ম দান,
বাকি দিন গেয়ে যাও,  হৃদয়ের সুরে গান।


নেও তুমি মূল শিক্ষা, এই বিশ্ব শিক্ষালয়ে,
সৎ পথে চল তুমি, কেনো থাকো ভয়ে ভয়ে,
আত্ম জ্ঞান হয় যার,
মানবতা আসে তার,
দূরে যাবে আন্ধকার, পাবে সেই মূল ধন,
সেই সুখ বড় সুখ, সুখে রবে সারাক্ষণ।


৩-
এই ঘাটে রাখো নাও
(বিলিরিক ধারা তিন
কাঠমো দুই)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্কামী


আনকাজে মাতি আমি, দুপুরের খরোবেলা,
আবেগের মাঠে বসে, করি শুধু নানা খেলা,
ধীরেধীরে দিন যায়,
সময়ের খেয়া নায়,
জীবনের আঙিনায়, সুখপাখি চেয়ে চেয়ে,
জীবনটা গেলো চলে, ঘাতাঘাত খেয়ে খেয়ে।


দু'দিনের হাসি খেলা, সূরবসনার তলে,
ভুলে গেছি এই কথা, যৌবনের কৌতুহলে,
বাগানের ফুল দেখে,
ভ্রমর হয়ে রেণু মেখে,
রীতিনীতি দূরে রেখে, কাজ করি মনমত,
কখনও করি নাই, এতটুকু শির নত।


বেহানের দ্বারে খুলে, দিয়েছেন পর যিনি,
বারেবারে হৃদি মাঝে, দিয়েছেন সাড়া তিনি,
অবহেলা করে তারে,
আছি একা কারাগারে,
দেখি আজ চক্ষুসারে, দূরাগত নয় রাত,
সারাখন দেখি শুধু, নিয়তির কালো হাত।


কে-বা যাও তরী বেয়ে, নেও এসে কৃপা করে,
সাথীহারা হয়ে আছি, সব গেছে দূরে সরে,
সাথে আছে কাজফল,
আর আছে চক্ষুজল,
এই হৃদিশতদল, মনমাঝি নিয়ে যাও,
দয়াকরে শেষবেলা, এই ঘাটে রাখো নাও।
--------------------------------------------------------------------------


#-কাঠামোঃ- ৩ (তিন)


এই ধারাটিও ১৬ অক্ষরে প্রথম
দুই লাইন হবে
এবং শেষে মিল থাকবে
পরবর্তি
দুই লাইন আট অক্ষর করে হবে
অর্থাৎ
প্রতি লাইনে আট অক্ষর থাকবে
শেষ মিল দিতে হবে
তবে
তৃতীয় লাইনের সাথে
চতুর্থ লাইনের  মাঝে ও শেষে মিল দিতে হবে
অর্থাত্
চতুর্থ লাইনের চারঅক্ষর শেষে ও পরবর্তি চার আক্ষেরর শেষে তৃতীয় লাইনের সাথে মিল রাখতে হবে।
চতুর্থ লাইনের সঙ্গে, পঞ্চম লাইনের মাঝে
অর্থাৎ
পঞ্চম লাইনের আট অক্ষর শেষে মিল রাখতে হবে।
পঞ্চম লাইনের শেষ শব্দের সাথে ,
ষষ্ঠ লাইনের মাঝে
অর্থাত্
প্রথম আট অক্ষরের শেষে মিল রাখতে হবে
এবং
পরবর্তি
আট অক্ষর শেষে
পঞ্চম লাইনের শেষ শব্দের সাথে পঞ্চাশ লাইনের সাথে মিল রাখতে হবে,
সপ্তম লাইন আট অক্ষরে হবে
এই সপ্তম লাইনের সাথে
অষ্টম লাইনের শেষে  মিল রাখতে হবে
অষ্টম লাইন হবে ষোল অক্ষরে   ।
প্রতি আট অক্ষরে যতি দিতে হবে ও
প্রতি প্রেরায় শেষে এক দাড়ি হবে।


উদাহরণ


মানুষের নেই মান
(বিলিরিক আদিধারা এক
কাঠামো তিন)


মানুষের নেই মান, মন আছে আন কাজে,
সারাক্ষণ ঘুরে ঘুরে, কাজ করে আজেবাজে,
আত্মশুদ্ধি কিছু নেই,
ধেই ধেই, আছে খেই,
এক দল হবে যেই, দলপতি হয়ে যায়,
আবেগের খেয়ানায়,
ভূ-কে সরা জ্ঞানকরে, উঠে বড় সুখ পায়,
ইচ্ছাধীন চলে চলে, সময়টা যায় সরে।


মানুষের বেশ ধরে, ঘোরে সব দুষ্ট দল,
মুখে শুধু মিষ্টি বুলি, মন মাঝে হলাহল,
নিশিদিন তারা ভাবে,
সুরা খাবে, সুখ পাবে,
এই ভাবে দিন যাবে, মনে মনে হয় রাজা,
যাকে তাকে দেয় সাজ, দেহ রবে তরতাজা,
সারাখন নিশিদিন,
ভুলে যায় দেহটার, বলাবল হবে ক্ষীণ।


মানুষের মানবতা, জীবনের আদি মূল,
ভালোবাসা স্রেষ্ট ভবে, এই কথা নয় ভুল,
একদিন মৃত্যু হবে,
সব ভবে, পড়ে রবে,
দুষ্ট ইচ্ছা কেনো তবে, আত্মসুখে সারাক্ষণ,
মিছামিছি করো রণ, মনে রেখে দুষ্ট পণ,
খুঁজো সেই পরমেশ,
ভেবে দেখো আনকাজে, জীবনটা হলো শেষ।


এখনও বেলা আছে, শুদ্ধ করো দেহ চিত্ত,
ছেড়ে দেও আজেবাজে, সৎ পথে আনো বিত্ত,
দেখো বেলা ডুবে যায়,
কালোছায়, ঘুম গাঁয়,
যেতে হবে খেয়ানায়, সন্ধ্যানদী পাড়ি দিয়ে,
একা একা ঘাটে গিয়ে, শুন্য দুই হাত নিয়ে,
অশ্রুজলে ভেসে যাবে,
সেই দিন তুমি শুধু, নিয়তিকে কাছে পাবে।


বসন্তের কাল যায়
(বিলিরিক ধারা দুই
কাঠামো তিন)


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


বসন্তের কাল যায়, এস তুমি এই ঘরে,
বিশ্বাসের রেণু মেখে, ঘুরে মরি চরাচরে,
জ্বালা দেয় ভালোবাসা,
তবু মনে জাগে আশা,
মনটার সুপ্ত ভাষা, বন্ধু তুমি বুঝো নাকি,
বিরহের কুঞ্জে থাকি, চক্ষুনীরে শুধু ডাকি,
স্মৃতিটার রেণু মেখে,
ডাকি আমি বারেবারে, বিশ্বসুখ দূরে রেখে।


ঊষাক্ষণে হয়েছিলো, জীবনের শেষ দেখা,
মধুময় জ্বালা দেয়, স্মৃতিময় সেই রেখা,
বসন্তের বীথি পেয়ে,
আশা করে আছি চেয়ে,
কবে তুমি পথ বেয়ে, নিয়ে যাবে ভালোবেসে,
বিকেলের আলো মেশে, কষ্টে ভরা হৃদদ্দেশে,
বিরহের গানে গানে,
চক্ষুনীরে একা একা, চেয়ে আছি পথ পানে।


ভালোবেসে কোনো তুমি, সরে আছো দূরে দূরে,
সৃষ্টি করে তুমি আছো, জীবনের সুরে সুরে,
জীবনের বীণা খান,
বাজে শুধু গেয়ে গান,
সুর সুধা করি পান, চিত্ত রেখে শুদ্ধ ভাবে,
সুর গুলি ভেসে যাবে, তোমাকেই জানি পাবে,
আমি রবো এই দেশে,
দিন গেলো জ্বালা নিয়ে, তোমাকেই ভালোবেশে,


শেষ আজ রাইবেলা, তবু আশা আছে মনে,
অলি হয়ে থাকো তুমি, এই মন ফুলবনে,
রেণু মাখো সমাদরে,
সৃষ্টি হোক চরাচরে,
গন্ধপুষ্প হৃদিঘরে, পাদপদ্মে দিবে তুলে,
এই আশা আছে মূলে, নিয় তুমি না'য়ে তুলে,
জীবনের ইতিবেলা,
সব কষ্ট যাবে দূরে, বেয়ে সেই সুখ ভেলা।


বিরহের সুখসুধা
( বিলিরিক ধারা তিন
কাঠামো তিন )


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


ফাগুনের অনুরাগে , হীয়াটায় ফুল ফোটে ,
পারিজাত অলি আসে , অভিসারে মধু লোটে ,
পুরো সোম  চৈতীরাতে ,
জীবনটাতে , ধারাপাতে ,
জোছনার গালিচাতে , আলোটায় ডুবে থাকে,  
অজানার ডাকে ডাকে, অধরার পাখিটাকে
মরমের কথা বলে .
ধরণিটা কবিতার , ভাবো তুমি শতদলে ।


বিকাশিত  ফুলকলী, কবিতার রূপ রেখা ,
সবিতার আলো ভাসে, মানসিকে যায় দেখা,
জেগে ওঠে ঋতুরাজ,
পরে তাজ , ভাঙে লাজ,
নিশিতের কালো সাজ, হাসি মুখে করে দূর,
মিলনের মিহি সুর, শুনি মনমধুপুর ,
ইতিকার আলো মেখে ,
যায় সব অজানায়, দুনিয়ায় সব রেখে ।


ফাগুনটি তবু আসে, কবিতার গানে গানে ,
জীবনের কূল ভাঙে, জোয়ারের বানে বানে,
উছালিয়া নোদি চলে,
বেণী জলে, মনোবলে,
তরী বেয়ে দলে দলে, সুনবীন নেয়ে যায়,
ফাগুনের ইশারায়, দখিনের মিঠে বায়,
জীবনের যায় বেলা,
মন মাঝে খেলে তবু, ঋতুরাজ রঙ খেলা ।


ফাগুনের রঙ মাখি, বিরহের সুরে সুরে,
বিরহের সুখসুধা, করি পান ঘুরে ঘুরে,
মনে মনে যারে চাই,
কাছে পাই, আমি তাই ,
তার গান গেয়ে যাই, জীবনের বীণাটিতে,
এক মন এক চিতে, দেখি শুধু আসে নিতে,
অজানার ঋতুরাজ,
জীবাগার যাবো ছেড়ে, একা বসে ভাবি আজ ।
--------------------------------------------------------------------------


     বিলিরিকের নির্দেশনা


স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সকল অক্ষর গুলি
ব্যবহার করা যাবে।
উৎপ্রেক্ষা ,যমক , উপমা  , অনুপ্রাস,
সকল প্রকার  অলংকার সহ
সকল প্রকার যতি চিহ্ন ব্যবহার করা যাবে ।
চার অক্ষর , দুই অক্ষর  
এবং
ছয় অক্ষরের শব্দ ছাড়া বিলিরিক কবিতায়
ব্যবহার করা যাবে  না,
যদি, যেন, তেন, মোর তব, এব সম, মম  এই ধরনের শব্দ গুলো
ব্যবহার করা যাবে না।
বিলিরিক কবিতা চার প্যারার নিছে
লেখা যাবে না।
সকল ধারায়
এবং সকল কাঠমোতে বিলিরিক ছড়া লেখা যাবে
ছড়া এক থেকে দুই প্যারা হবে,
কিন্তু
শিশুতোষ  কবিতা  একাধিক  প্যারায় লেখা যাবে  ।
মনে রাখতে হবে বিলিরিকের কোন ধারায়ই বিজোড় অক্ষরের শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
বিজোড় অক্ষরের শব্দ অর্থাত্ তিন, পাঁচ, সাত ইত্যাদি সংখ্যার শব্দ সহ এক অক্ষরের শব্দ কোনো ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না,

বিলিরিক কোন ধারায় মধ্যমমিল এবং অধমমিল দেওয়া যাবে না।
উত্তমমিলে
অথবা
সর্বোত্তমমিলে অবশ্যই বিলিরিক কবিতা লিখতে হবে,
কোন ধারায় এবং কোন কাঠামোতে
বিলিরিক কবিতা লিখলেন তা
কবিতার শিরোনামের নিচে
অবশ্যই লিখতে হবে।
নিয়ম গুলি না মানলে বিলিরিক হবে না,
বিলিরিক মাত্রা প্রধান নয়,
অক্ষর প্রধান
এবং
যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণকে
এক অক্ষর ধরে গননা করতে হবে,

বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে
মিলের শেষ অক্ষর যেটি থাকবে সে অক্ষরটি
এক প্যারায় দুই বেশি ব্যবহার করা যাবে না  
শুধু
তিন বার ব্যবহার করা যাবে
তৃতীয়, চতুর্থ
এবং
পঞ্চম লাইনের মাঝে ।


বিলিরিক (Bilyric) -এর
বাংলা  নাম
বিশ্বরাজগীতিকবিতা ।