ক্ষমা করো বাবা


ঠাকুর বিশ্বরাজ গোস্বামী


বাবা
মনে পড়ে তোমার আদর সোহাগ,
তখন আমি বেশ ছোট
এখনও
মনে আছে কিছু কিছু স্মৃতি
একটি পায়ে খেলা বলের জন্য
বায়না ধরেছিলাম
তিব্র অভাবের সংসারে থেকে
বলটি কিনে দিয়ে
আমার চোখের জল মুছিয়ে দিলে
বেশ সুখি হলাম,
আমার সংগে খেলে ছিলে তুমি,
ধীরে ধীরে আকাশ পরে গোধুলী রং শাড়ি
মা ডেকে বলে বাড়ী এস তোমরা
চেয়ে দেখো উত্তর আকাশে মেঘ জমেছে,
তার পর
ঝড়
নড়বড়ে টিনের ঘর
আমাকে
আর
ছোট বোনকে
বুকের ভেতর রেখে বলেছিলে ভয় নেই,
আমারা তবুও কাঁদতে থাকি,
ঝড়ের বেগ বাড়তে থাকে  
আমাদের কাঁন্নাও বাড়ে যায়
মা আসে ঝড়ের ভিতর কাজ সেরে
আমাদের নিকট,
বলে
কেঁদ না
আমিও আছি তোমাদের নিকট
তোমরা ঝড়ে আহত হয়ে
আমাদের বাঁচিয়ে ছিলো
সে বিভৎস কাহিনী আজও মনে আছে
সে দিন বুঝিনি
সন্তানে প্রতি ভালোবাসা কেমন,
আজ ঝুঝি।
তোমার স্মৃতি মনে পড়েছে বাবা
কিছু কিছু মনে আছে আজও
আমার জ্বরের কথা
জ্বর এক মাস চলে
মা বলেছে মৃত প্রায় আমি
টাকা নেই চিকিৎসার,
আমাকে সুস্থ করার জন্য
মা অনাহারি ব্রত পালন করেছিলে
মা খেতে বল্লে বলেছিলে তুমি
না ,
আমি খাবো না সাবিত্রী,
আমিও ব্রত পালন করবো,
আমি সুস্থ হই সেই ব্রত পালনে,
আমার যখন পরোপুরি যৌবন
তখন তুমি তোমার নতুন মাকে এনে
আমাকে উপহার দিয়ে,
বলেছিলে
আজ হোতে তুমি আমার বাবা,
শুরু হয় তোমার শিশুসুলভ আচরণ
কিন্তু
এমনই বোকা আমি
কখনও ভাবিনি
তুমি ও মা
আমার প্রথম ছেলে মেয়ে
বুঝতে পারিনি তোমাকে
বুঝতে পরিনি সে দিনকার কথাটিও,
দেইনি তোমার কথার মূল্য,
তাই
পিতার দায়িত্ব পালন ব্যর্থ হয়েছি
বড় কষ্ট বুকে।  
তাই আমি বড় অপরাধী ,
জানো বাবা ,
মায়ের নিকট এখনও আমি
সেই ছোট্ট ছেলে,
এখনও আমার খাবার চিন্তা করে
পথ চেয়ে থাকে আমার জন্য
না খেয়ে,
নিজে খায়নি  সে কথা মা
ভাবে না
আমার কথা ভাবে
জানো বাবা
মায়ের নিকট এলে আমি মনে করতে
পারি না আমার বয়স হেয়েছে।
আজ আমার সব আছে
কিন্তু
তুমি নেই
এখনেই আমার অভাব।
বড় শুন্যতায় ভুগছি
দেখে যাও
আমিও বাবা হয়েছি
কিন্তু
তোমার মত বাবা হোতে পারিনি।
মা যখন আমাকে বাবা বলে ডাকে
তখন তোমার কথা মনে পড়ে
গভীর ভাবে,
যখন খেতে বসি
তখন
মনে পড়ে সেই স্মৃতি
কত আদর করে খাইয়ে দিতে তুমি
আমার বয়স হলেও।
এখন সংসারে আছে
শুধু
নেই তোমার আদর স্নেহ ভালোবাসা
আর
বাবা ডাক।  


গ্রন্থঃ-
বর্ণমালায় আঁকা কবিতার ছবি।