। অ-ক্ষম।


ওরা আপনাকে হেমলকের যন্ত্রণাময় মৃত্যুর বিধান দিলো।
দোষবিহীন আপনি শিষ্যকে বলেছিলেন কৌতুকে,
তুমি কি মনে করো দোষ করে শাস্তিই শ্রেয়তর ছিলো?
এ প্রশ্ন আপনার কাছে পেশ করি আজ নতমুখে
তেইশ শতক বাদে। বলুন  হে জ্ঞানী মুনি সক্রেটিস,
তাদের কি অনুতাপ হয়েছিলো , যারা দিলো ওই বিষ
শুধু এক মুক্তচিন্তককে হত্যার কারণে, বিনা দোষে?
শেষ কেন লেখা হলো প্রতিরোধহীন এক নীরব আপোষে
তবে? কেন যুযুধান সিংহের মতো গর্জনে প্রতিবাদহুংকারে
কাঁপলো না গ্রীস? হে দার্শনিক, এভাবেই অন্ধকার বাড়ে
চিরকাল, ভেবে নেয় যা কিছু করছে সে সমস্ত পুরোপুরি ঠিক,
অন্যায় মেনে নিয়ে, ভাবুন বিজয় কাকে উপহার দেন,
হে জ্ঞানপথিক!


আর আপনি , মেষপালকের বেশে ক্ষমাশীল আলোর মানুষ,
আপনাকে ওরা দিয়েছিলো বীভৎস মৃত্যু।সাজিয়ে কন্টকমুকুটে
ওরা বাধ্য করলো আপনাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যেতে ক্রুশ
নিজেরই মৃত্যুর দিকে এক পা এক পা করে। তবু মুখ ফুটে
সেই অত্যাচারীদের ধ্বংস চাইলেন না। বললেন ওরা জানেনা।
আপনি জানতেননা না মহাত্মন, ওরা জানে, শুধু মানেনা
আপনার ক্ষমার বাণী? আপনি বাঁচুন, চায়নি পন্টিয়াস,
ক্ষমতাশীর্ষে যারা, তাদের কি যায় আসে পরে কি লিখবে ইতিহাস,
তাদের বর্তমানে আপনার ঠাঁই নেই,ওদের উদ্দেশ্য হিংস্র হত্যা
ওরা ভাবে ওরা উচিত কাজ করেছে।আপনার ক্ষমার সারবত্তা
কিছু নেই পাইলেটদের কাছে,  দগ্ধ হয়না তারা অনুশোচনায়
তবে কেন, তবু কেন হে আলোকসন্ধানী, অলৌকিক জিহ্বায়
শেষ অবধি উঠে আসে ক্ষমা করার বাণী? নিজের সাথে
ছলনা একি নয়, পুণ্যাবতার? অক্ষমের কাঁপা কাঁপা হাতে
ক্ষমা করা ওদের ক্ষমতার স্পর্ধা আরো দিয়েছে বাড়িয়ে,
যুগে যুগে তাই হিংসারা , অনায়াস অত্যাচারে শান্তিকে দিয়েছে হারিয়ে।


হে জ্ঞানী ও ধার্মিক ,আপনাদের মেনে নেওয়া বিনা প্রতিবাদে,
সবলকে ক্ষমা করে দেওয়ার একপেশে উদ্যোগ ঠিক ছিলোনা।
এখনও আলোরা রোজ আঁধারের কাছে হেরে অসহায় কাঁদে
এখনও ভালোর চোখে বিষাদ অশ্রুঝোরা বড় বেশি লোনা।
আমরাও ভাবি আজ, পুণ্যের ওই বুঝি পথ আছে একটাই
যা ক্ষমা করা যায়না, জ্ঞানে ও ধর্মে তাকে ক্ষমা করা চাই,
সেরকম ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপনারা।যদি একবার,
বলে দিতেন কিছু অপরাধে কোনো প্রশ্নই নেই অপার ক্ষমার,
বলে দিতেন এই হেমলক বিধান পক্ষপাতদুষ্ট প্রবলের অন্যায়,
ক্রুশের বিচার ভ্রান্ত, দেখো যেন আগামীতে ছুঁড়ে ফেলা যায়
এমন অত্যাচারী সিংহাসনকে, ক্ষমা কোনো সমাধান নয়
ক্ষেত্রবিশেষে, শান্তির মানে তবে অন্যরকম কিছু বুঝতো সময়।


আঁধার তো ক্ষমা করে না, রুখে না দাঁড়ালে পায় অনায়াস জয়।


আর্যতীর্থ