।আক্রমণ।
      
প্রতি বর্ষায় মেঘ নদীকে উপহার দিতে আসে।
ভাঁড়ার উপুর করে ঢেলে দেয় জল, অগুন্তি ফোঁটায় সেজে নদী খুব  হাসে,
মেঘকে ডেকে বলে, ‘ নিজের জন্য কিছু রাখলি না লো?’
গুরুগুরু ডেকে উঠে মেঘ ভেসে বলে,
‘ তোমার থেকে রোজ কত জল নিয়ে নেয় মেজাজী সাগর, সে খবর জানা আছে দিদি!
দুনিয়ার সক্কলে জানে, সাগর আর আকাশের ভীষণ পিরিত,
দিগন্ত পেলেই ওরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে।
আমার যেটুক জল দরকার, আকাশকে পটিয়ে ঠিক পেয়ে যাবো,
এখন ধরো দিকিনি যে বৃষ্টিটুকু দিলাম অঝোরধারায়!’
নদী সেই জল নিয়ে কুলুকুল কুলুকুল হেসে বয়ে যায়।


অনন্তকাল ধরে পাহাড়ের প্রেম  সুন্দরী নদীর সাথে,
নিজে হাতে বরফের প্রসাধনে সে প্রতিদিন নদীকে সাজায়,
চাঁদের জোছনা জানে ,  কত খুনসুটি লেখা জোয়ার ভাঁটাতে।
প্রগলভ মেঘ এসে প্রায়শই পাহাড়ের কানে কানে ফিসফিস করে,
‘ কতদিন আর খালি দিদির ঢেউয়ের দিকে চেয়ে দিন যাবে,
একটু তো আশেপাশে তাকাতেও পারো।’
পাহাড়ের অনাবিল হাসি দেখে বোঝা বড় ভার, ঠাট্টা ও মশকরা বোঝে কিনা সে,
আকাশের তারাগুলো সক্কলে জানে, পর্বত নদীটাকে খুব ভালোবাসে।


খুব ভালো চলছিলো সব, কত সহস্রাব্দ, সময়ও সে হিসেব হারিয়ে ফেলেছে।
এমন সময় এলো দু পেয়ে দানবের দল। তারা পাহাড়কে খুঁড়লো আকরিকের লোভে,
নদীর গায়ে ছড়িয়ে দিলো কারখানার বিষ বর্জ্য,
সাগরে মিশিয়ে দিলো ঘাতক রাসায়নিক।
তাদের সম্মিলিত আক্রমণে আকাশের শ্বাসকষ্ট শুরু হলো ,
আর মেঘেরা জীবনে প্রথমবার বুঝলো, জলের অভাব কাকে বলে।
ওরা তছনছ করলো সব আখের গুছাবে বলে, এমনকি হাত দিলো স্বাধ্বী অরণ্যের আব্রুতেও।


পৃথিবীর প্রথম সন্তানেরা  এড়িয়ে গিয়ে ভেবেছিলো, অচিরেই থেমে যাবে এ আক্রমণ,
যেমন হয়েছে ডায়নোসর বা ম্যামথের যুগে। থামেনি একটুও।
অনিবার দাবানলের মতো ওদের লোভের আগুন বেড়েই চলেছে,
ওদের অত্যাচারে নদী আজ শ্রীহীনা কংকালসার।
একদিন, চাঁদ ও অনন্ত নক্ষত্রকে সাক্ষী রেখে, আকাশ সাগর নদী পাহাড় আর মেঘ,
প্রেমিক আর বন্ধুর সাজ খুলে রেখে, ঊর্দি চাপিয়ে নিলো গায়ে যোদ্ধার।


পাহাড় নামালো ধস। সাগর আনলো সুনামি।
নদী ইচ্ছেমতো বন্যায় ভাসিয়ে দিলো ভূমি,
মেঘেরা বৃষ্টি করলো অনিয়মিত আর অযাচিত।
  অরণ্যের প্রতিটি গাছের কাছে পৌঁছে গেলো বিদ্রোহের গোপন চিরকুট,
ঘাসেরা পরস্পরকে বললো,
‘ বুক বাঁধ ভাই, অবশেষে এবার একটা হেস্তনেস্ত হবে।’


শুনতে পাচ্ছো, চারদিকে বাজছে দামামায় রূঢ় দ্রিমি দ্রিমি ?
আক্রমণ আসছে, জানেনা এখনও কেউ কোথায় বা কবে..


আর্যতীর্থ