। আটানব্বই।


আপনি কি প্রীতমের বাবা? অরূপের মা? আপনারই প্রতিবেশী ছেলে ছিলো জয়?
জানি সে জঘন্য দিন সময়ের থেকে মুছে গেলে ভালো হয়,
তবু সে তো সত্যি।
অবশ্য এরা কেউ কারো পরিচিত নয়,
বস্তুত শহরের তিন কোণে তিনজন ,
বাবা, মা ,মুঠোফোন আর বাইকের সংসারে মোটামুটি আরামেই বইতো জীবন।
ফেসবুক বন্ধু বা ফেবারিট রক ব্যান্ড, সব কিছু আলাদা রকম,
প্রিয় নায়ক নায়িকা থেকে ট্যাটুর ডিজাইন, মিল শত খুঁজলেও নেই একদম,
শুধুই বয়েস আর একটা ব্যাপার ছাড়া।
আঠারোর থেকে কুড়ি, ওর মাঝে থমকিয়ে সময়ের চারা,
গাছ ওরা কখনো হয়নি।
গতানগতিক পথে বড় হওয়া হয়তো বা ধাতে সয়নি,
তাই সাঁই সাঁই গতি বাইক চালাতো তারা বিনা হেলমেটে,
ঝপ করে চলে গেছে ক্ষমাহীন শহরের রাক্ষুসে পেটে।


আপনি কি প্রীতমের বাবা? স্কুল যেতো ছেলে বুঝি আপনার স্কুটারের ব্যাকসিটে চড়ে?
কচি হাতে কোমরকে জাপটিয়ে ধরে,
ছেলেটা দেখতে পেতো বাবা তার খালি মাথা , (কাছেই তো স্কুল),
বছর দশেক পড়ে বড্ড ফাইন নিলো আপনার ভুল।


অরূপের মা, আপনার দিনগুলো বিষাদে মুড়িয়ে দিয়ে গেছে সে ঘটনা।
হালকা মদের গন্ধে হাত উঠে এলে হয়তো এদিন হতো না,
তবু ঢাকাচাপা দেওয়া ছেলে নেশা করে,
মালা পরা ছবিটার দিকে চেয়ে দেখো, জীবন ফেরানো যেতো একখানা চড়ে।
বাইকে উড়ছে ছেলে, হেলমেট যথারীতি  স্থাণু বাড়িতেই,
কেন যে ভাবোনি মা গো, এইভাবে চললে একদিন ভাগ্যতে বাড়ি ফেরা নেই!


  আপনারা যারা জয়কে দেখেছেন উদ্দাম স্টান্ট করতে,
সবাই জানতেন, মৃত্যুঠিকানা লেখা আছে কোনো গর্তে।
তবু ‘ পরের ছেলে পরমানন্দ’ ,
তাই গোল্লায় যাওয়ার পথের খানা ও খন্দ মেরামতির চেষ্টা করেননি কেউ।
সকলেই ভেবেছেন বয়েসের হুজুগের ঢেউ
থেমে গেলে ফিরে ঠিক এসে যাবে ছোঁড়া,
ফিরেছে তো সেই ছেলে, লাশটার বুকে রাখা সাদা ফুল তোড়া।


আটানব্বই জন। একশোর দুই কম ছেলে আজ ফিরবেনা ঘরে,
বিনা হেলমেটে তারা দেশের কোথাও মুছে যাবে চিরতরে।
ও বাবা, ও মা, ও প্রতিবেশী, ব্যবহার আমাদের বলো কোনদেশী,
এভাবে যে প্রজন্ম খুন হয়ে যায়!


ওরা যাতে হেলমেট পরে, সকলে খাটিয়ে মাথা ভাবো না উপায়!


আর্যতীর্থ