। ভ্রম সংশোধন।          


ধৃতরাষ্ট্র আর্দ্র গলায় গান্ধারীকে জিজ্ঞেস করলেন নিভৃতে,
কেমন লাগে হে রাজমহিষী, চক্ষুষ্মান হয়ে চোখ বেঁধে নিতে?
আমি তো জন্ম অন্ধ, অ-দৃশ্য এ পৃথিবী শুধু ধারণায় ধৃত,
তোমার সুযোগ ছিলো আলো দেখবার, তবুও ইচ্ছাকৃত
অন্ধত্ব স্বীকার করেছো। আমার হওনি চোখ তুমি প্রিয়তমা,
বিপরীত পথে হেঁটে নিজের তাবত জ্যোতি হেলায় করেছো জমা
আঁধারের কাছে। হে কৌরবজননী, কি পেলে বলো আজীবন,
চোখের বাঁধন খুলে কখনো কি আলো পেতে চেয়েছিলো মন?


মহিষী বললেন, অভ্যাস মহারাজ, মেনে নেওয়া যেইখানে প্রথা
সেখানে আলোর খোঁজে মুহূর্ত খরচ করা অপচয় হবে অযথা,
তাছাড়া আলোক বড় অশান্তি আনে। দেখা যায় অন্যায়গুলো
যে মূর্তি পূজা করি দেবতার জ্ঞানে, তার যত ফাটলের ধুলো
চোখে পড়ে যায়। হয়েছি অন্ধসাজে আপনার অনুগামী,
দুর্যোধন দুঃশাসন কোথায় করেছে কি ভাবনায় নেই আমি
নিশ্চিন্তে বসে আছি প্রাসাদে আরামে, সে কি হতো মহারাজ,
চোখ খোলা হলে? কোলাহলে কান চাপা যায়, আওয়াজ
তো চিরকাল ইচ্ছেনির্ভর, কি শুনবো, কি শুনবোনা বাছা যায়,
আমি আরো এগিয়ে নিপ্রশ্ন সমর্থনে আলোকে করেছি বিদায়,
অবিচল অকুন্ঠ রাজপদে মতি থাকে যেন সকল সময়ে,
ভালো আছি মহারাজ, কাজ নেই এ দাসীর চক্ষুষ্মতী হয়ে।


ধৃতরাষ্ট্র বললেন , তাই তো! এ সহজ সমাধান ভাবিনি আগে,
আলোই নষ্টের মূল , দৃষ্টিমানের মনে শুধু বিরোধিতা জাগে,
অন্ধরা সমর্থক হয়।ভূর্জ কোথায় গেলো, কই লিপিকার,
এসো এইখানে, স্পষ্ট অক্ষরে লিখে নাও আদেশ আমার
বলবত হবে যা হস্তিনাপুরে। ভীষ্ম বিদুরাদি যত সভাসদ,
জেনে নিন আজ থেকে এ রাজ্যে আলো হলো  রদ।
মুফতে বিতরণ করা হোক প্রজাদের মাঝে ঘোর কৃষ্ণ রুমাল
চোখ বেঁধে নেবে তারা মহিষীর মতো। এ নিয়ম থাকুক বহাল
পান্ডুর শিবিরের জন্যেও। আলো নির্বাসিত হলো আজ থেকে,
আগামী রাজারা যেন এই ইতিহাস থেকে সুশাসন শেখে।


তারপর? তারপরে আর কি? কুরুক্ষেত্র আর কখনো হলোনা,
অন্ধ রাজ্যে সব সুখে বসবাস, সে সুখের কোনযুগে নেই তুলনা।
তড়িঘড়ি গণেশকে বলে ব্যাসদেব করে নেন ভ্রম সংশোধন,
ধৃতরাষ্ট্রের পরে সিংহাসন ‘আলো’ করে রাজা হন বীর দুর্যোধন।


আর্যতীর্থ