। সিনেমার মতো নয়।


বাংলা হিন্দি তামিল ওড়িয়া ভোজপুরি গুজরাটি..
যে ভাষার সিনেমার মেনস্ট্রিম বাছো, এক মূল ঘটনাটি,
ভিলেনের ক্ষমতার মুখে সাধারণ মানুষেরা খুব অসহায়,
( এইখানে হিরোর বাবার বাড়ি দখল বা দিদির ধর্ষণ দেখা যায়)
এর মধ্যেই এক সৎ পুলিশ অফিসারের বেইজ্জতি থাকে,
হয় জেলযাপন, নয় ভিলেনের লোক এসে মেরে ফেলে তাঁকে,
চারদিকে যখন ভিলেনের জয়, অন্ধকার ছিনিয়ে নিচ্ছে আলোর হক,
ঠিক তখনই হল জুড়ে হোওও করে চিৎকার.. পর্দা জুড়ে একটাই মুখ ..ছবির নায়ক।


নায়ক। যার এক ঘুষিতে মাধ্যাকর্ষণকে ফুঃ করে চারিদিকে উড়ে যায় খলের দল,
গোটা পঞ্চাশেক গাড়িভর্তি সশস্ত্র গুন্ডা শায়েস্তা করতে স্রেফ হাত-সম্বল।


নায়ক। যে হিরোইনকে ধর্ষণের ঠিক আগে পৌঁছে যায, বাবা মা বন্ধুকে বাঁচায় মৃত্যুফাঁদ থেকে,
একা হাতে ফাঁস করে দিতে থাকে দুষ্টুলোকগুলোর চাল, যারা ধরা পড়ে বা মরে প্রত্যেকে।


নায়ক। প্রবল প্রতাপান্বিত নেতা, সারা দেশে ছড়ানো মাফিয়া ও হাজার ভাড়াটে খুনীকে তুড়িতে উড়িয়ে,
একটা আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম যে একা ভেঙে দিতে পারে গুঁড়িয়ে।


নায়ক। যার কোমর জড়িয়ে গান করে ওঠে হিরোইন, দেখলেই খলবল করে হেসে ওঠে বস্তির শিশুরা,
যে একা এক বাহিনী, যে যত কুচেষ্টা করুক, সমস্ত ব্যর্থ করে সামিট করতে পারে সফলতা চূড়া।


আর ঠিক এইখানে বন্ধুরা, এইখানেই হয়ে যায় গোলমাল যত,
আমরা মিলিয়ে দেখি,  কমবেশি সকলেই নীরবে ভোগা ওই  পার্শ্বচরিত্রগুলোর মতো,
পিষে যাচ্ছি , আমাদের সমস্ত অধিকার ছিনানো ভিলেনেরা কুর্নিশ করতে বাধ্য করছে তাদেরই পা’য়,
আমাদের কথা বলবার কেউ নেই, শুনবারও, আমরা হেরোর দলে সব জায়গায়,
অজান্তেই আমরা ভেবে বসি , এইবারে ঠিক কোনো নায়ক এসে যাবে, বদলাবে অবস্থান,
একজন এমন কেউ, যে বর্মের মতো রক্ষা করবে আমাদের,
ঘামেরা ফেরত পাবে হৃত সম্মান,
শিক্ষা মর্যাদা ফিরে পাবে, সততার আব্রু ধরে ভরা সভায় টানবে না কোনো ক্ষমতা-দুঃশাসন,
আমরা হৈ হৈ করে বলবো, ওই দেখো, সে এসে গেছে, যার অপেক্ষায় যুগ ছিলো এতক্ষণ।


আসে না ।কেউ আসে না। কখনো দু একজন নির্ভীক বিচারক বা আমলা জ্বলে ওঠেন বটে,
কখনো বিপরীতে চিৎকার করেন কোনো লেখক বা কবি।
তারপর, যা ঘটার ছিলো সেটাই ঘটে,
মশালেরা নিভে যায়, নিভিয়ে দেওয়া হয়, অর্থ পদক , পদোন্নতি বা স্রেফ শাসানি দিয়ে,
কিংবা তাঁরা বরুণ বিশ্বাস হয়ে যান, ক্ষমতাবানের দল গণতন্ত্রের মুখে করে দেয় ইয়ে।
আমরা মুখ আঁধার করে অন্ধকারে লজ্জা লুকিয়ে পপকর্ন খেতে খেতে চেঁচিয়ে উঠি গুরুউউউউ..
কারণ পর্দায় নায়কের প্রবেশ ঘটেছে। যার প্রতিটা ঢিসুমের সাথে আমাদেরও নিজস্ব ভিলেন মারা শুরু।


আসল ভিলেনরা খুব নিশ্চিন্তে তোফা ঘুম যায় । প্রতিবাদহীন পথে পায়ের চিহ্নহীন জমে থাকে ধুলো পুরু।


আর্যতীর্থ