। ন্যাংটো বোলো না।


রাজাকে ন্যাংটো বোলো না।
বলে দিতে পারে তাঁর পারিষদগণ, দেখো হে মূর্খ জনগণ,
লুকানোর কিছু নেই ধন,
তাই রাজা ন্যাংটো এমন,
তোমরাও কপি করে পোশাক-টোশাক খোলো না!


গপ্পোটা বহু পুরাতন, জন্ম বোধহয় চীনদেশে,
হ্যান্স অ্যান্ডার্সন থেকে নানা থান ঘুরে ঘুরে
সব কানে পড়েছে সে এসে,
বোকা সম্রাট আর ঠগের কাহিনী কমবেশি জানে প্রত্যেকে,
একটি বালক শুধু বলেছিলো নগ্ন সে নৃপতিকে দেখে,
এমা রাজা ন্যাংটো!
পরে কী ঘটেছিলো,
ছেলেটির পরিবার ছিলো নাকি জ্যান্ত,
সে ব্যাপারে কাহিনী নীরব।
শুধু আন্দাজ করা যেতে পারে,
জনমন-গুঞ্জন শেষ অবধি
হয়তো হয়নি কলরব,
রাজাদের ভুল ধরা বস্তুত অশ্বজ অণ্ড প্রসব,
ইতিহাস সাক্ষী তার, বারবার।
শিশুটিও নির্ঘাত সুযোগ পায়নি আর কিশোর হবার।


তাই দেখো, রূপকথা-জন্মের এত এত শতাব্দী পরে,
নানা ভাষা অনুদিত নানা অক্ষরে,
বদল হয়নি সেই শিশুটির স্বরে,
কোত্থাও কোনো বড় জিভের জড়তা ভেঙে চেঁচিয়ে ওঠেনি
‘ রাজা তুই ন্যাংটো যে রেএএ! ‘


রাজাধিরাজরাও গল্পটি শোনেননি, তা তো নয়!
যত বয়ে গিয়েছে সময়,
তত তাঁরা বুঝেছেন, উলঙ্গতায় নেই লজ্জা বা ভয়,
ক্রমে ক্রমে রটে গেছে বিশ্বমাঝারে,
রাজা মানে ন্যাংটোই হয়।


আরো এক ধাপ এগিয়ে,
ক্ষমতার নিলাজ নগ্নরূপ দাবী করেছে ঈশ্বরের মর্যাদা,
অতি দামী পেইন্ট বলে চালানো হয়েছে যত কাদা,
বাধা দেওয়া জিভ সব বাধ্যত বাঁধা,
নজর রাখতে সব মোড়ে মোড়ে বসেছে পেয়াদা ,
পোশাকের ছদ্মতে অলীক তন্তু বেচা
সে ঠগের দলই আজ রাজ-ভূমিকায়,
দেশের সেবার নামে ইচ্ছেমাফিক যারা ভিত-ভূমি খায়,
সোনার আগামী আঁকা কল্প-প্রকল্প কত করতালি পায়,
ন্যাংটোই নিয়ম যেখানে
সেই দেশে পোশাকের দাবী তোলা
স্বভাবত ঘোর অন্যায়।


রাজাকে ন্যাংটো বোলো না।
পোশাকই নিষিদ্ধ হবে ,
কানাঘুষো যায় শোনা তার আলোচনা,
নিজের ভালোটা বোঝো, লক্ষ্মীটি সোনা,
তুমি বুড়োধাড়ি আজ,
খেয়ালে চেঁচিয়ে ওঠা শিশুটি তো না!


নেহাতই চেঁচাও যদি, সে দায় রাজার নয় বাছা।
কি ছবিতে মালা চাও, জানাতে ভুলো না।


আর্যতীর্থ