। একানড়ের অবসর।


একানড়ের একলা ঘরে, দিচ্ছে বাতাস ঝাপট আজ,
তালের মাথায় হাওয়ার তালে দোল খাওয়া তার রোজের কাজ
পাতার ফাঁকে দূরের থেকে দৃশ্য দেখে আর ভাবে,
দু কানকাটা’র রাজ্যতে আর কান নিতে কই দৌড়াবে।
যুগটা এমন বেখাপ্পা যে, কেউ যদি হয় কর্ণধার,
অমনি নাকি ঘচাৎ করে কেউ কেটে নেয় কর্ণ তার।
দিব্যি যে লোক দুকানওয়ালা, প্রজার মাঝে যায় মিশে,
ক্ষমতাতে কান কেটে নেয় কে জানে তার হায় কিসে।
একানড়ে ভাবছে কি ভূত করছে  চুরি এখন কান,
ধান্দাতে তার ঠান্ডা মেরে কর্ণবিহীন তার দোকান।
ধরতে যদি পারে কে  এই কান খোয়ানোর কান্ডারী,
একানড়ে মটকাবে ঘাড়, খিমচি দেবে খান চারি।
খুঁজতে হবে লোকের ভিড়ে কোথায় সে চোর দিচ্ছে ডুব,
কম্পিটিশন করবে খতম, একানড়ের ইচ্ছে খুব।
কাজেই যতই দোলাক বাতাস, আজকে খুশি জাগছে না
হুংকারে সে লাফিয়ে বলে , ‘একানড়ে ভাগছে না।
আজ নামবো গাছের থেকে, খুঁজবো নতুন ভূতটাকে,
আমার সাথে লড়ুক দেখি, তেমন যদি জুত থাকে।
হয় থাকবো আমি দেশে, নয়তো নতুন কান-কাটক,
আমার কাজটা অন্যে নেবে, সইবো না আর সেই নাটক।’


এই বলে সে গাছের থেকে নামলো নিচে তিন লাফে,
হোমরাচোমরা কেউকেটাদের চুপি চুপি  দিন মাপে
যাচ্ছে কোথায় খাচ্ছে কোথায় মিশছে তারা কার সাথে
নির্ঘাত সেই নতুন ভূতের গল্প মিশে তার সাথে।
দেখতে থাকে একানড়ে, নব্বইভাগ খাচ্ছে ঘুষ,
নিজের বেলায় আঁটিশুঁটি , জনতা পায় লেবেঞ্চুষ।
খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ দেখে পাশ দিয়ে এক আমলা যান,
অবাক কান্ড, পাচ্ছে শোভা মাথাতে তার দুখান কান।
একানড়ে ভাবলো এবার পড়বে সে মাছ তার জালে,
কান-কাটক-এ ধরবে ওঁকে পেলেই একা ফাঁকতালে।
ঠিক তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরবে তাকে ক্যাঁক করে,
বলবে ব্যাটা ব্যবসা কাড়ার ফলটা এবার দ্যাখ ওরে।


একানড়ে করছে ফলো দুকানওয়ালা সে লোককে,
থাকা খাওয়ার হাল দেখে তার জল এসে যায় দুচক্ষে।
ফুটানি তাঁর নেই তো কোনো, বাড়ির থেকে লাঞ্চ আসে,
সামনে কিছুই বলে না কেউ, পিঠ-পিছনে খুব হাসে।
নোটের তাড়ার জোর নেই তাঁর, ফাইলে নোট দেন কড়া,
মুখেই কেবল সুখের ছোঁয়া, বাড়ি গাড়ি ছোপ ধরা।
অনেক খুঁজেও একানড়ে পায়না খুঁজে কাটক-ভূত
বুঝলো শেষে, কান কাটে সে , আছে যাদের ঘুষের খুঁত।


একানড়ে ঠিক করেছে , কানের বেসাত ছাড়বে সে,
দুর্নীতি ভূত কম্পিটিশন, কেমন করে পারবে সে?


সে ভূত এখন সর্বব্যাপী, করুণভাবে হারবে সে।


আর্যতীর্থ