।ফেরা।


আবার এসো বলেছিলো কেউ।
বুকের ধুকে সাত সাগরের ঢেউ, চোখের ভেতর আষাঢ়কালো মেঘ,
কথায় মেখে অনিন্দ্য উদ্বেগ,  ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির ফাঁকে,
যাওয়ার সময় আলতো এসে পাশে
আবার এসো বলেছিলো সে।


আমি তখন ছাড়ছি পাড়া, বাড়ি,
বড় মানুষ বনবো তাড়াতাড়ি, আকাশ ছোঁবো মেধাবী মই বেয়ে,
শহর ভালো শহরতলির চেয়ে, সে সত্যটা জলদি গেছি বুঝে,
অগত্যা তাই ছেড়ে বাড়ি, পাড়া,
আমার তখন বড় হওয়ার তাড়া।


ভদ্রতা নয়, সত্যি মনের থেকে,
অনন্তকাল মুহূর্ততে ছেঁকে, বলেছিলাম আসবো , কথা দিলাম
সময় করে কত শপথ নিলাম, সে সব জানা, তাই আগামীর কাছে
অতীত মানে অনেকসময় চওড়া নীরবতা,
তবুও সেদিন ভদ্রতা না, ছিলো মনের কথা।


বছর গেছে মাঝে অনেকগুলো,
স্মৃতির ওপর দশ পরতের ধুলো, যেমনটা হয় ব্যস্ততা আর ভিড়ে,
বাড়লে জীবন সাফল্যকে ঘিরে, অতীত তখন হয়ে পড়ে বাসি,
দেখতে দেখতে সুয্যি এলো সাঁঝে,
খেয়াল হলো , অনেকগুলো বছর গেছে মাঝে।


বয়েস হলে অবসরও আসে
স্মৃতিরা ফের বেড়ায় আশেপাশে , না হওয়া কাজ বড্ড নালিশকুটি,
বেড়াবেণী ঝগড়ুটে সেই ঝুঁটি, হঠাৎ এসে মনকেমনের ঘরে মনে করায় যাওয়া আছে বাকি,
বয়েস হলো, অবসরেও থাকবে ভুলে তা কি?


বৃদ্ধ ফেরে কিশোরবেলার কাছে
এখনো যে সেই পাড়াটা আছে, সেটা দেখেই অবাক লাগে ভারী ,
আরো আজব তেমনি আছে বাড়ি, যেখানে সেই নারীর থাকার  কথা,
কলিংবেলে আঙুল দিলাম যখন,
বৃদ্ধ, নাকি কিশোর ছিলাম তখন?


দরজা খুলে বেরোলো যে মেয়ে,
স্তম্ভিত হই মুখের দিকে চেয়ে, চারদশকের পরে একি দেখি,
একটুও তার বয়েস বাড়েনি কি, বেড়াবেণী নেই যদিও, ফ্রকও,
তবুও ঠিক তারই মতন, কে এ?
দরজা খুলে বেরোয় স্মৃতির মেয়ে।


কাকে খোঁজেন? আমতা-তে নাম ধরি,
‘দিদুন আমার’ বললো সে কিশোরী।আপনার নাম? শুনেই লাফায় সে,
অবশেষে, ঠিক পড়েছেন এসে, খুব শুনেছি কেমন ছিলেন সাথী,
গল্প জানা সব। এখন কোথায় থাকে?
আমতা আমতা করে এবার প্রশ্ন করি তাকে।


ভেতরঘরে, স্মৃতি গেছে তার।
ডিমেনশিয়া নাকি অ্যালজেইমার,  কানে আসে  সেসব নিয়ে কথা,
মোটের ওপর, ঠোঁটে এখন জমাট নীরবতা। মাঝে মাঝে হাসে এবং কাঁদে,
বাকি সময় দৃষ্টি জুড়ে খাঁ খাঁ,
ভেতরঘরের স্মৃতির ভাঁড়ার ফাঁকা।


বিজন খাটে বৃদ্ধা বসে এক,
গিয়ে বলি, ‘ চিনতে পারিস, দ্যাখ!’ শব্দ শুনে সে ফেরালো চোখ,
শত্তুরেরও এই হাল না হোক, তাকিয়ে, কিন্তু দেখছে না সে কিছুই,
একটু বসে আসছি উঠে চলে,
চমকে দিয়ে কম্পিত স্বর বলে...


আসার সময় হয়েছে তাহলে?


আর্যতীর্থ