।গান্ধারী কুন্তী সংবাদ।


গান্ধারী:


তোর তো তবু পাঁচই আছে, একশো আমার শেষ
হিংসা দিলো শ্মশান করে একটা গোটা দেশ।
যেদিক তাকাই চোখে পড়ে চেনা চিতার খাক,
কৃষ্ণ শুধু বাজান বসে ধর্মজয়ের ঢাক।
তোর তো এখন পাঁচই আছে, রাজার মা তুই আজ,
তবে কেন তুলিস গায়ে বাণপ্রস্থের সাজ?


কুন্তী:


যুদ্ধ আনে ধ্বংস ভয়াল , কে না জানে দিদি
মানুষ কেন লড়াই করে, কারণ জানেন বিধি।
এ যুদ্ধে সব যোদ্ধা ছিলেন এই বিষয়ে জ্ঞাত,
তবুও কই, লড়াইটা কেউ থামিয়ে দিলোনা তো!
বেঁচে আছে পাঁচটি ছেলে, নাতিরা যমঘরে,
সিংহাসন কি স্বজনহারার দুঃখকে কম করে?


গান্ধারী
তাই বলে তুই ছাড়বি প্রাসাদ, এমন ভাবিস কেন,
জীবন জুড়ে কষ্ট তোকে আঁকড়ে আছে যেন।
স্বামীর সোহাগ বঞ্চিত তুই মুনির অভিশাপে,
বাকি জীবন ঝলসে গেলি বিবাদী উত্তাপে
পুত্র যুধিষ্ঠিরের মাথায় এখন মুকুট রাজার,
সুখের থেকে পালিয়ে বেড়াস তবে কেন আজ আর?


কুন্তী:


কক্ষগুলোয় কান্না কেবল, অলিন্দ্য আজ ফাঁকা
গবাক্ষে নেই রঙের ছোঁয়া, শোকের সাদায় ঢাকা।
জীবিতরাও মৃত’র মতন ঘুরছে আশেপাশে,
যেখানে যাই, কান্নারা ঠিক পিছু পিছু আসে।
এতটা শোক বইতে দিদি আর যে পারি না,
মর্মে বেঁধে , বললে শুধু পাঁচটা ছেলের মা।


গান্ধারী:


কর্ণ ছিলো জ্যেষ্ঠ যে তোর, বলিসনি তা আগে,
সবটা খুলে বলতি যদি, যুদ্ধ কি আর লাগে?
যুধিষ্ঠির তো সরেই যেতো, ধর্মতে তার মন,
মেনে নিতো রাজা তাকে আমার দুর্যোধন।
এ রক্তপাত, ধ্বংস এবং স্বজনক্ষয়ের মূল,
তোরই জিভের আড়ষ্টতা, লজ্জা করার ভুল।


কুন্তী:


মানছি আমি ভুল করেছি , জিভ বেঁধেছে লাজে,
শুধু তাকেই করলে দায়ী, ঠিক তা হবে না যে।
অন্ধরাজার পত্নী তুমি, একশো ছেলের দায়,
দিদি,তোমার চোখ বাঁধবার বিলাস শোভা পায়?
দৃষ্টি হলে দেখতে পেতে যায় বিপথে দুর্যোধন,
মায়ের শাসন অনেক আগে করতো তাকে সংশোধন।


গান্ধারী:


ঠিক বলেছিস হয়তো ছোটো, আমরা দুজন দায়ী,
অতীত ভুলের মাসুল নিলো যুদ্ধ রক্তপায়ী।
মা’রা যদি করেন তাদের দায়-কে অস্বীকার,
যুগে যুগে নামবে দেশে এমন হাহাকার।


আর্যতীর্থ