। হারতে শেখাও।


হারতে শিখতে হয়।
জিতবার স্ট্র্যাটেজি সবাই তৈরি করে,
কিন্তু সময় যখন পরিস্থিতিকে বৈরী করে,
সেই প্রাণপণ চেষ্টার পরে লক্ষ্যে না পৌঁছালে কী করতে হবে,
সেটা কজন আর হাতে ধরে শেখাবে!
প্রায় কোনো প্ল্যানেই বিফলতাকে একটা সম্ভাবনা বলে ধরা থাকে না,
তারপর কী কী হয়, সেই সব কাহিনী তো আমাদের চেনা।
হেরো হতাশার কুয়াশা আগামীর পথ দেয় ঢেকে,
শূন্যের নিচে থেকে খুব কম লোক ফের ফিরে যেতে শেখে।


ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে শিখে নার্সারির যে বাচ্চাটি স্কুলে গেলো,
সেকেন্ড ছাড়ো, ফিফটি নাইনথ হলেও যে সেটা তেমন কিছু নয়,
সব্বাই তাকে বলতে ভুলে গেলো।
কাজেই পঁচানব্বই পেলে আনন্দ নেই, তিন অংকই একমাত্র সাফল্যের ঠিকানা,
আশি বা ষাট পেলে তো সে বেচারির চোদ্দগুষ্টির মুখ খোলা মানা,
প্রতি পরীক্ষার পরে, খবরের কাগজে মায়ের হাতে রসগোল্লা খাওয়া কটা ছেলেমেয়েই সুখী,
বাকিরা কুরুক্ষেত্রে লড়া অক্ষৌহিনীর মতো বেকার খরচ।
এই রিয়েলিটি শোয়ে হেরে গেলে একশো শতাংশ থাকে হারানোর ঝুঁকি।


যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ আর প্রবাদবাক্য নেই,
এখন কারো ভাগ্যে শাঁস, বাকিদের কপালে আঁশ,
অন্তত আশা আর হতাশার নিরিখে।
লক্ষ্যচ্যুত হওয়া মানে জীয়ন্ত লাশ,
কেউ তাদের বলে দেয় না, পরাজয় স্রেফ এক কষ্টিপাথর,
ঘষে সোনা বুঝে গেলে, জীবন দরজা তার খোলে তারপর।
না খুললেও, লড়াই ছাড়ার কথা নয়, হেরে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়ার অর্থ আলাদা,
সেই কথা শেখায় না কোনো টিউটোরিয়াল।
প্রচারে সাফল্য বড় চড়া সুরে বাঁধা।


কে শেখাবে তবে?
হারিয়ে যাওয়ার থেকে হেরে যাওয়াদের বাঁচাবে কে?
ষাট পাওয়া ছাত্র,
চাকরি না পাওয়া শিক্ষিত,
চাকরি খোয়ানো সংসারী,
জীবনের পরাজিতরা পালে ফের বাতাস পাবে কোথা থেকে!


কেন , তুমি, আমি, আপনি ও ওই যে কোণার দিকে বসে আছেন , উনিও।


জেতা তো শেখাতে জানে সব্বাই।
হারতে কিভাবে হয়,
নিজের জীবন থেকে নিংড়ানো সে গল্প
এইবারে কাউকে ফেরাতে শুনিও।


কে বলতে পারে, যে বিষাদ ছুরি হাতে তার পিছু ঘোরে,
হয়তো মানবে হার সে চেনা খুনীও।


আর্যতীর্থ