। ইতিহাসের যাত্রা ।


ইতিহাস একদিন রাষ্ট্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
একটি শিশুর জন্য আপনি কী করতে পারেন?


উত্তরে রাষ্ট্র বললেন, খেতে দেবো , পরতে দেবো,
দিকে দিকে ইস্কুল খুলে যত খুশি পড়তে দেবো ,
টিকা দেবো. পুষ্টি দেবো, প্রথম দশে খিদের সূচক দেবো,
যাতে সবকটা বাচ্চা বড় হয়ে আমাকেই ভোট দেয়!


এই কথা শুনে ইতিহাস তার হাসি আর থামাতেই পারছিলো না,
তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রাষ্ট্র বললেন,
দাঁড়া,  তোকে বদলে দিই, তখন বুঝবি।
দরকারে সিলেবাস থেকে দেবো বাদ,
আজীবন হাতড়িয়ে সত্যি খুঁজবি,
দেখবি, শিশুদের কাজে লাগিয়ে আমি কী করতে পারি!


মানে মানে পালিয়ে ইতিহাস গেলো ধর্মের কাছে।
সেখানে ক্রশ তসবি আর রুদ্রাক্ষের মালা
জপযন্ত্রের সাথে আড্ডা মারছিলো।
ধর্মকে ইতিহাস জিজ্ঞেস করলো,
শিশুদের নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?


ধর্ম বললেন, ছোটোবেলা থেকে ওদের বিবেক জাগাতে হবে।
হিংসা দ্বেষ রাগ ঘৃণা মুছে যেন জেগে থাকে ভালোবাসা।
শিশুর মধ্যে ঈশ্বর থাকেন,
কাজেই ওদের নিজের মতো বাড়তে দিতে হবে,
সব বিভেদ মুছে বড় করতে হবে প্রকৃত ধার্মিক হিসেবে।


বলতে বলতে এক ঝামেলার শব্দে
ইতিহাস পেছন ফিরে দেখলো,
রুদ্রাক্ষ আর তসবি ভয়ানক কুস্তি লড়ছে,
ওদিকে জপযন্ত্র আর ক্রসের মারামারি বেঁধে গেছে,
কোলাহলের মধ্যে শুধু একটা কথাই শোনা যাচ্ছে,
শুধু আমার বাচ্চারা ঈশ্বরকে জানবে,
অন্যগুলোর জন্য এই পৃথিবী নয়!


ইতিহাস এ ঝগড়াতে পেয়ে গেলো ভীষণ ভয়।
পালাতে পালাতে সে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো তন্ত্রের পাড়ায়,
যেখানে মোড়ের মাথায়
রাজতন্ত্র আর সমাজতন্ত্র খুব তর্ক করছে,
গণতন্ত্র আদৌ আছে ,
না ওটা কিছু উটকো লোকের কল্পনা।


ইতিহাস একটু শুনলো সে আলোচনা,
তারপর ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
ইয়ে, শিশুদের নিয়ে আপনাদের বক্তব্য যদি বলেন।
দুজনে একসাথে বলে উঠলো,
বক্তব্য আবার কি,
জন্ম থেকেই ওদের বাধ্য প্রজা হিসেবে বড় করতে হবে,
যা নির্দেশ হবে, চোখ বুজে যেন পালন করে।
বলতে বলতে দুজনে বের করলো দুটো ছাঁচ,
যারা দেখতে আলাদা বটে, কিন্তু কোথাও যেন একও।
তারপরে যৌথস্বরে বললো,
এই দেখো , সব শিশুর মগজ এতে ফিট করাতে হয়,
একটাও যেন বাদ না পড়ে।


ইতিহাস বললো, কোনো শিশুর মাথা যদি ফিট না করে?
দুজনের কেউই কিছু বললো না উত্তরে,
শুধু রাজতন্ত্র তরোয়াল বের করলো
আর সমাজতন্ত্র একটা পিস্তল।
তারপর , ঢেউহীন স্বরে বলে উঠলো ‘ কে সেটা, বল!’


ইতিহাস আর সাহস পেলো না,
সরে পড়লো সেখান থেকে,
যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো বিজ্ঞানকে দেখে।
শেষ অবধি তাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো সে,
শিশুদের জন্য কী ভাবছেন?


বিজ্ঞান মাথা নেড়ে বললো,
উঁহু , আমার ভাবা বারণ।
যেমন রাষ্ট্র হুকুম দেন,
যেমন ধর্ম বিধি বেঁধে দেন
আর তন্ত্র উপায় বাতলান,
আমি ঠিক তেমন জিনিস তৈরি করি।
আপাতত মোবাইল গেমস বানাচ্ছি,
যাতে ছোটোবেলা থেকেই ফোনের নেশাটা
ঢুকে যায় বাচ্চাগুলোর মগজে।


ইতিহাস এর পরে কাকে আর খোঁজে!
ফিরে আসতে আসতে হঠাৎই কানে এলো তার,
শিশুদের কারা যেন বলছে
’ প্রশ্ন করো, জবাব না পেলেও।
স্বপ্ন দেখো , সফল না হলেও।
শান্তি খোঁজো, চারিদিকে যুদ্ধ থাকলেও।
আলোর দিকে দেখো, অন্ধকার ডোবাতে চাইলেও’।
কারা ওরা?  
উঁকি মেরে ইতিহাস দেখে, একদল লোক,
কেউ লেখক, কেউ আঁকিয়ে, কেউ কবি, কেউ বা গায়ক,
রাষ্ট্র পেরিয়ে, ধর্ম গুঁড়িয়ে , তন্ত্র ছাড়িয়ে, বিজ্ঞান এড়িয়ে
ওসব আনাপশানাপ শেখাচ্ছে শিশুদের।
ওরা জানে, গারদ বা গর্দান যাওয়া ভবিতব্য,
যদি ওপরের কেউ পায় সেটা টের।


ইতিহাস আগামীকে হৈহৈ করে বলে উঠলো,
যা ব্যবস্থা করে রাখ,
একদিন সত্যিই মানুষ বুঝবে মানে শিশুদিবসের।


আর্যতীর্থ