। কোষাধ্যক্ষ।


স্তব্ধ আজকে আজবনগরে রাজার সভাকক্ষ
চাবিটি গছিয়ে খানিক আগেই গিয়েছেন কোষাধ্যক্ষ।
দোষের মধ্যে রাজা চেয়েছেন কোষাগার থেকে টাকা
তুচ্ছ ও ব্যাটা বলে কিনা ওতে জনগণধন রাখা!
রেগে টং হয়ে রাজা বলেছেন ‘নতুন জিনিষ জানছি
কোথায় খরচ করবে মালিক বলে দেবে খাজাঞ্চি!
আমারই তো ধন, প্রজারা আমাকে খাজনা দিয়েছে যত
খরচ করবো স্বাভাবিকভাবে নিজের খেয়ালমতো,
সে ব্যাপারে তুই ব্যাগড়া বাঁধালি, কোথাকার হরিদাস,
রাজার নমক খেয়ে আজ তার দাড়ি ওপড়াতে চাস!
কোষাধ্যক্ষ, ভালো চাস তো তোর  সিন্দুক খুলে রাখ,
আমি বলে দেবো কোন মাছটাকে ভালো ঢাকে কোন শাক।’
কোষা ব্যাটা তবু ছাড়েনি তো জমি, নড়েনি সে একচুল,
বারবার বলে ‘ভাঁড়ারে এখন মুদ্রা অপ্রতুল।
খেয়ালখুশীতে খরচা বাড়ালে ধসবে অর্থনীতি’
রাজা বলে ‘ওরে, তোর নেই তো রে গদি হারাবার ভীতি।
আগুন বাজার, প্রজাদের আজ কুলায় না খরচাতে,
কিছুটা প্রলেপ দিতে হবে বাপ, ভোট আসে দরজাতে।’
শুনে কোষাপতি বলে ‘হে নৃপতি, খুরেতে দন্ডবৎ,
আমি কোনোকালে বাজাতে পারিনি ভোট ঢোল সহরত।
এই নাও চাবি, তোমার দাবিটি শুনুক পরের লোকে,
আমি পারবো না প্রজাদের ক্ষতি দেখতে নিজের চোখে।’


এসব অতীত, আপাতত চলো দেখি গে বর্তমান,
আজবনগরে মহারাজ  আজ কোষাগার সামলান।
কোষাধ্যক্ষ লাগবে যে এক, তেমনই আইনে বলে,
কাকে দেন ভার, ভেবে একাকার, রাজা ভারী দোলাচলে।
মন্ত্রীকে ডেকে বললেন রাজা, ভার নেবে নাকি তুমি হে?
মন্ত্রী তখন পাগড়ি আড়ালে ছিলেন হাল্কা ঘুমিয়ে।
ধড়মড় করে উঠে বললেন হুজুর রাজ্য সামলাই,
অষ্টপ্রহর ভাবনা বাড়ায় কত বিচিত্র মামলাই।
তার ওপরে যদি কোষাগার দেখি রুটিনটি যাবে ভড়কে,
এত দিকে যদি চোখ দিতে হয় দেখবো কি করে চোরকে?
রাজা বললেন , সেনাপতি তবে তুমি নেবে এর দায়টা?
সেনাপতি কন, দেখি বাহিনীর কুচকাওয়াজের কায়দা।
অস্ত্রশস্ত্র কিছু বুঝি বটে, টাকা খরচের কি জানি,
হয়তো কিনবো সব খালি করে ফরাসী যুদ্ধবিমানই।
রাজা বললেন , কোষাগারে তবে তুমি ভার নাও পাত্র,
কাচুমাচু মুখে পাত্র বলেন ‘ ডাহা ফেল করা ছাত্র!
অঙ্কে আমার লাল কালি ছিলো ওয়ানের থেকে ক্লাস টেন,
রাজা বললেন গুরু মহারাজ, আপনিই যদি ভার নেন।
গুরু বলে দেন, মন্দির হলে তবে ভাবতাম অন্য,
আমি তো দেখছি তুমি লোক খোঁজো ভোটে জেতাবার জন্য।
আমার দাবীকে দাবিয়ে রেখেছো দাওনি  পাদ্য অর্ঘ্য,
এখন আবার এই ভার নিলে মিডিয়া ট্রায়ালে মরবো!
রাজা হাঁকলেন ওহে বৈদ্য, তুমি তবে নাও কোষাগার,
বৈদ্য বলেন হাত জোড় করে, রোজ পাবলিক দেয় মার।
কোষাগার নিলে হাড়গুলো যাবে, প্লাস্টার হবে সারা গা-য়
বরং হুজুর ট্রান্সফার দিন, চলে যাই দূর পাড়াগাঁয়।
রাজা বললেন অমাত্য ওহে, তুমি কোষাগারে বসবে,
অমাত্য কন তাই যদি হবে, ভোটের ছক কে কষবে?


রাজা চুলকান বসে মাথা তার, কে ধরবে আজ তাঁর হাল,
হঠাৎ নজর যায় দরজাতে, দাঁড়িয়ে রয়েছে দ্বারপাল।
মুষকো জোয়ান, অমিত শক্তি, বিশ্বাসী লোক মস্ত,
রাজা হেঁকে কন, কাল থেকে তুই কোষাগারে গিয়ে বস তো।
দ্বারপাল বলে হে আমার প্রভু, আজ্ঞা নিলাম মাথাতে,
যেমন বলেন কোষাগারে বসে সেটাই  লিখবো খাতাতে।
চারদিক থেকে ফুলের বৃষ্টি, সভায় ধন্য ধন্য,
আজবনগরে অবশেষে আজ খাজাঞ্চি পেলো অন্য।


মন্দ লোকেরা ভাবতেই পারে সন্দেহ জাগে গন্ধে,
কাহিনী এসব পুরো মনগড়া, বলে দিই মুখবন্ধে।


আর্যতীর্থ