।ল্যাম্বস্টেক।


গড্ডলিকায় আমি শেষ মেষ।
আমার সামনে আছে অযুত আমার মতো,
শুনেছি তারও সামনে পথ দেখায় রাখাল।
শুনেছি, দেখিনি তাকে,আমি তো লাইনে আছি,
গতকাল আজ থেকে অনাগত আগামীকাল,
আমি এই লাইনে দাঁড়িয়ে,
শুধু সামনের ভেড়াটির পশ্চাদ্দেশ দেখি ,
কিভাবে যাচ্ছে সে পুচ্ছ নাড়িয়ে,
নাড়ানো অপছন্দ হলে দিই ঢুঁসিয়ে।
সেটুকু সুযোগ পেয়ে আছি খুশি হে,
যতক্ষণ আমারও পেছনে কেউ না দাঁড়ায় এসে,
লাইনেই সব হয়, লাইনেই থাকা ভালো এখন এ দেশে।


মাঝে মাঝে , দূরে কোনো বাঁকে,
লাইনটা বেঁকে যায়, যেন কোনো রেলগাড়ি অতিকায়,
দেখা যায় বহু বহু দূরে হাঁটে সারি দিয়ে ভেড়া।
আশেপাশে মাঠ আছে, আছে সবুজেরা,
যে বিচালি খাই তার থেকে আলাদা ও হয়তো বা সুস্বাদু হবে।
যদি কেউ ভ্যা করে বলে বসে খেয়ে দেখি তবে,
অমনি সাবধানবাণী ভেসে আসে কোথা থেকে যেন,
আরে ওই নাগরিক, ওই দিকে যেতে চাস কেন,
লাইনে থাকতে হয় জানিস না ব্যাটা বোকা ভেড়া?
ওদিকে যাসনা কেউ, ওখানে মৃত্যুভয়, নেকড়ের ডেরা,
কখন কোথায় কে দুম করে মেরে দেবে থাবা,
বাকিদের সাথে থাকা  নিরাপদ খুব। লাইনেই থাক বাবা।


এত মেষ হেঁটে হেঁটে শেষ অবধি যায় যে কোথায়!
বাতাসে হিমেল স্বর ফিসফিস করে বলে, ‘ কসাইখানায়’।
তারও আগে খুলে নেয় গা’র থেকে সবটুকু উল।’
ঢুঁসো দিতে মশগুল সামনের ভেড়াগুলো বলে ওঠে ভুল সবই ভুল, আমাদের নিয়ে যায় রাখাল নির্ঘাত কোনো স্বর্গীয় চারণভূমিতে, যেখানে ইচ্ছামতো খেতে পাওয়া যাবে,
ভালোবাসা রোমন্থন হবে নিভৃতে,
এ লাইন ধরে গেলে সকলেই পৌঁছাবে একদিন সোহাগী সময়ে, সমবেত সেই ভ্যা ভ্যা ডাকে,
বাতাসেরা পুনশ্চ যায় চুপ হয়ে।


আঁধার নামলে পথে, সবাই জিরোই এই লাইনেই বসে।
দূরে আগুনে এক কে যেন চুকচুক করে হাড় চোষে,
তৃপ্তি গলায় ঢেলে বলে আহা আজ মাংস  ভালো সেদ্ধ হয়েছে।
সেই ল্যাম্বস্টেকে কার স্মৃতিরা রয়েছে,
ভাবতে ভাবতে পড়ি ঘুমিয়ে অঘোরে,
যে তরলে ভিজে মাটি পরদিন ভোরে,
সে কি শিশির, নাকি রাখালের পোষা কোনো নেকড়ের লালা,
ঠাহর হয় না।
কিছু বোঝবার আগে হুকুমছপটি পড়ে, ‘ লাইনে যা শালা!’


পেছনে মারছে ঢুঁসো কেউ।
এগোতে এগোতে ভাবি, ল্যাম্বস্টেকে আজ রাতে আসে কার পালা...


আর্যতীর্থ