। মনেই পড়ছে না।


বলতে গেলে, মা’কে আমার মনেই পড়ছে না।
ব্যস্ত এতই , মনকেমনও একদম করছেনা।


এক শুধু ওই ভোরবেলাতে সিঁড়ির থেকে বাঁদিক বেঁকি,
কোণের ঘরের দিকে যেতে খেয়াল করি হঠাৎ একি,
যাচ্ছি কেন? মা থাকে না এখন তো আর শুয়ে,
থমথমে পা’য় ফেরত আসি দরজাটাকে ছুঁয়ে।
ভেতর থেকে আর কখনো ডাক আসেনা চেনা,
সত্যি বলছি, মা’কে আমার মনেই পড়ছে না।


প্রাতরাশের সময় এলে আলুথালু খাবার দেখে
রেগে উঠি। সুগার প্রেশার ইত্যাদি সব সামলে রেখে
স্বাদু যে সব থাকতো খাবার রকমফেরের চমক দিয়ে,
উধাও সে সব।কাজের লোকে আজকে যেসব যায় বানিয়ে,
সেটাই ছিলো গতকালেও এবং হবে আগামীদিন,
দেখো কেমন মজায় আছি , সব সকালেই একই রুটিন।


আগের মতো খাবো বলে লালা তো ঝরছে না,
খেতে খেতে আমার মা’কে মনে তো পড়ছে না।


সারাদিনের কাজের ফাঁকে মনে আবার পড়বে মা’কে,
সময় কোথায় তার? সারাদিনের রোগীর ঝাঁকে
ডুব দিয়ে দিই, সার্জারি আর রাউন্ড সেরে
চেম্বারে যাই। পেটের মধ্যে দিচ্ছে ছুঁচো ডন যে তেড়ে,
গোগ্রাসে খাই। ফোনের দিকে আড়চোখে দিই চাউনি মাঝে,
‘ কি খেলি আজ?’ অভ্যাসী সেই ফোনটা কেন এলো নাযে,
ভেবেই অমনি জিভ কেটে নিই, কি বোকামি করছি বুঝি,
যে টেলিফোন আসবে না আর, ভুলের বশে তাকেই খুঁজি।


দেখছো কেমন ব্যস্ত ভীষণ,  কাজ আর ধরছে না?
সত্যি কথা , আমার মা’কে একদম আর মনেই পড়ছেনা।


রাত্রে যখন বাড়ি ফিরি , ঘুমিয়ে গেছে বেবাক পাড়াখানা,
এমন সময় একজন ঠিক রাত্রিজাগা, মনের ভেতর জানা
আছে, ফিরলে আমি দুটো কথা বলে তবেই শোয়া,
চটকা ভাঙে আবার আমার, সে মানুষ তো খোয়া
গেছে জীবন থেকে ক’দিন আগেই; কাজের লোকে
দরজা খোলে, নীরবতায় খুবই দ্রুত ঠান্ডা খাবার গলায় ঢোকে
খেয়ে উঠে অন্যমনে একটু হেঁটে  সিঁড়ির থেকে যাই বাঁদিকে,
ধ্যাত্তেরিকা! মা থাকেনা ,কবে যে সে সত্যিটা মন ফেলবে শিখে
বোঝা কঠিন। কেন রুটিন জায়গা থেকে একটুকু নড়ছে না?


যাই বলো না , আমার মা’কে কিন্তু আমার মনেই পড়ছে না।


আর্যতীর্থ