। নরক।
( এই লেখাটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। শোনা ইস্তক কিচ্ছু করতে পারছি না। পিশাচের কবলে আমাদের কচিরা, আর আমরা শুধু আইন পাশ করেই খালাস। বিচারকে ত্বরাণ্বিত করার কোনো উপায়ই কি নেই??)


খুদেটার খেলনা ছিলো না।
বাপ-ছোড় মেয়েদের ছাদই জোটেনা, তায় আবার খেলা!
কোনোমতে ভাত পেয়ে গেলে দুইবেলা,  অনেক সেটাই।
তবুও শৈশব যে, খেলবার মন হলে কিছু তো চাই,
তাই সে দেখতো আকাশপানে চুপ করে রাতে,
ফালি আধা গোটা চাঁদ এসে জ্যোৎস্নাতে,
খুকির কপালে এসে টি দিতো রোজ,
ঘুম দিতে বলে তার মা হলে নিখোঁজ কোনো কাজে,
নির্ঘুম চাইতো সে আকাশের মাঝে,
তারাদের মিটিমিটি আলো দিয়ে কেমন সাজিয়ে রাখা রাতের উঠোন,
আঁধারের গা বেয়ে জোছনা গড়িয়ে দিয়ে চাঁদ এসে তার সাথে খেলতো ভীষণ।


একদিন মা তাকে নিয়ে , একটা কাকুর সাথে ঘর ছেড়ে পথে,
অচেনা মানুষ আর অচেনা জায়গাতে,
মন ঘাবড়ায় তার। মাকে জোরে আঁকড়িয়ে ধরে,
মা’ও তাকে আগলায় কোলের ভেতরে,
বহুদিন পরে ফের ঘর বাঁধবার মতো পুরুষ পেয়েছে সে,
বেচারি বোঝেওনি , নেকড়ে চাটছে জিভ প্রেমিকের বেশে।


রাতে ঠাঁই রেলের স্টেশনে, গৃহহীন আশ্রয় যেমনটি হয়।
খুদেটা তাকায় চারদিকে, ওখানে লেপটে আছে থমথমে ভয়।
ঝমঝম রেল আসে, লোক নামে ওঠে,
ক্লান্ত ঘামের ভিড় তড়িঘড়ি যার যার বাড়িপানে ছোটে,
খুদেটার ঘর নেই, সব কিছু সেখানে অচেনা,
হঠাৎ আকাশফালি থেকে চেনা চাঁদ ডেকে বলে,
‘ এই তো রয়েছি আমি, তুমি ঘুমাবে না?’


খুকিটা ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুম ভাঙে অসহ্য যন্ত্রনাতে..
নি-কাপড় শরীরটা পিষেই চলেছে কারা শয়তানি হাতে।
বীভৎস শলাকারা এফোঁড়-ওফোঁড় করে নরকের সুখ খুঁজে চলে,
খুদেটা কঁকিয়ে ওঠে ‘ মা যাবো বলে’!
কচি  স্বর চাপা  দেয় ধর্ষক পুরুষের কর্কশ হাত,
চারদিকে রক্তের ছোপ,
ব্যথা, ব্যথা, আরও ব্যথা দিয়ে চলে দুই বজ্জাত।
আরো কত.. আরো কত,  থামাও থামাও বলে কাঁদছে সময়,
মা.. মা ..ব্যথা লাগে .. ছোট্ট চোখের জল শুধু অপচয়,
শুনছে না কেউ। সুনামির মতো শুধু যন্ত্রণা আসে..
তাকে ছিঁড়ে , তাকে ঘিরে পিশাচেরা ঘিনঘিন হাসে।


রাত হয়। চাঁদ এসে তার ছোটো বন্ধুকে খোঁজে,
কোত্থাও নেই , আসবে না আর সেটা অনুমানে বোঝে।বাতাসে লাশের গন্ধ, কোথাও তীব্রস্বরে রাতচরা পাখি ডেকে ওঠে কেঁদে,
কোণ খুঁজে ছোট্ট শরীরটাকে রাখা আছে থলি-মুখ বেঁধে,
মাথা কাটা তার।
টি দেওয়া বন্ধু হারিয়ে, উথালিপাথালি চাঁদ করে হাহাকার।


চাঁদ জানে কাল রাতে , পরশু আর তারও পরে পরে,
এই দেশে এ নরক ঘটবে আবার।


আর্যতীর্থ