।শাড়ি।


হে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস, দ্বাপরের হোতা, কলি’র প্রণাম নিন।


আমার গীতার টিকাভাষ্য চাইনা, মুনিবর।
স্থবির অর্জুনকে যে শব্দকৌশলে আত্মীয়হন্তারক যন্ত্রে পরিণত করেছিলেন বাসুদেব,
সে বিশ্বরূপদর্শন না হওয়াই ভালো।
যুগ ভালো নয়, এই কলিযুগেও প্রতিদিন ভাইয়ের হাতে ভাই বলি হয়।


গান্ডীব ও অক্ষয়তূণের সন্ধান নিষ্প্রয়োজন,
এ পৃথিবীর অযুত কোটি অস্ত্রভান্ডার অশ্বত্থামার ব্রহ্মশিরকে মনে করায়,
তাঁরই মতো, এরা অস্ত্র চালাতে পারে , থামাতে পারেনা।


ময়দানবের কৌশল জানবার আগ্রহ নেই, ঋষিবর।
ধনীদের বিস্তর প্রাসাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেই ধনাড়ম্বর,
তার দূরতম কল্পনা সে স্থপতি করেননি।
খান্ডবদহন চলে পৃথিবীর বুকে, প্রত্যহ গাছ মরে, অসংখ্য পশুপাখি নিশ্চিহ্ন হয়,
মানুষের কল্যাণে ধ্বংসের দেবতার ক্ষুধামান্দ্য নেই।
প্রেমহীন আপ্রাকৃত প্রাসাদ উঠছে গড়ে ক্রমাগত অরণ্যের শবের ওপরে,
ময়ের কৌশল আজ সর্বত্রময়।
ঋষি ব্যাস, এ গরীব ওইসবে আগ্রহী নয়।


সময় পিছিয়ে দিয়ে দ্বাপরের প্রান্তে আপনার কাছে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছি আজ এক চাহিদায়,
দ্রৌপদীর শাড়িখানি দিন না আমায়।
ভরা রাজসভাতে বসন টানছে কষে রাজার কুমার,
চারদিক থেকে শত লালসায় মাখা চোখ গণধর্ষণসুখ অনুভব করে,
কেউ নেই কৃষ্ণার, একাকিনী নারী,
সে সময় তাঁর শাড়ি হাজার লক্ষ হাতে বেড়ে গিয়ে আব্রু না বাঁচালে,
আর একটিও শ্লোক অনুগত কলম কি করতো সৃজন, হে ভারতকথক?


আপনি ত্রিকালদর্শী, কোন সময়ের আমি ,অজ্ঞাত নেই।
এই মহা-ভারতে এখন অলিতে গলিতে শ্লীলতাহানি,
ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ঘটে চলেছে গণধর্ষণ।
বিকর্ণ কোথাও নেই, নতশির বসে আছে  চারিদিকে নিঃস্বর লোক,
হা হা হেসে মজা দেখে কর্ণ  দুর্যোধন।
এখানে নারীর কেউ নেই, দাবানলে পুড়ে যাওয়া গাছের মতোই সে একা,
সকলেই জানে, পোড়া কাঠে জীবনের আশা বড় ক্ষীণ,
প্রতিদিন আরো চোখ মনে মনে বিবসনা করে দেয় তাকে।


হে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস, দ্রৌপদীর বস্ত্রের সন্ধান দিন,
সমস্ত নারীদের গায়ে তা জড়াক,
কৌরব জিতে যাওয়া এই কলিযুগে, যেন দেশব্যাপী শাড়ি আব্রুকে ঢাকে।


হে পরাশরসুত, দ্বাপরের থেকে শুধু সেই একখানা শাড়ি দিন আমাকে।


আর্যতীর্থ