। শ্রবণকুমার।


ছেলেটা কবিতা বেচে বইয়ের মেলাতে।
ওর কোনো স্টল নেই, কোনো প্রকাশক নেই,
সাকুল্যে বই আছে এক। সেটাকেই নিয়ে হাতে,
হাঁটে আর আরো হাঁটে, বলতে ছাড়ে না কাউকেই,
‘ ভালো কবিতার বই আছে, পড়ে দেখতে পারেন।’
হাটে ও বাজারে আজ ফেসবুক জুড়ে ধুলোতে ছড়ানো কবিতা,
সেখানে অনামী কবি, নগদ পয়সা দিয়ে কেউ কিনবেন?
ছেলেটা তবুও ঘোরে, অচেনা ভিড়েও চলে আলাপচারিতা,
‘ভালো কবিতার বই আছে, করোনাকে নিয়ে নানা ছড়া’
লোকে নাক সিঁটকায়, না শুনে এগিয়ে যায় ঈপ্সিত স্টলে,
তবু সে দমে না। কবিতাকে কাঁধে নিয়ে সময়ের ডাকহরকরা,
ঠিকানা খুঁজছে বুঝি ব্যস্ত শহরে, এই নাগরিক  বই কোলাহলে,
কে পাগল আছে আজও অনামী কবিকে নেবে ঘরে দাম দিয়ে,
কে এখনো কবিতাকে  কথা-ঈশ্বরী ভেবে  করে উপাসনা,
তার খোঁজে মেলা ঘোরে কবিতা-হকার। লোক ডেকে ইনিয়েবিনিয়ে,
সে বেচে একটি কবির লেখা একখানি বই। বিক্রিও হয় হাতে গোনা।


আমিও ভ্রাম্যমান ছিলাম মেলাতে, স্টল থেকে স্টল।
বই খুঁজে বই কিনে বয়ে চলি অভ্যাসবশত, সংস্কৃতি বইবার ভানে,
যদিও ই-যুগে জানি এ হুজুগে মন দেওয়া কাজ নিষ্ফল,
তবুও অতীতমুখী মানুষেরা মেলা থেকে ঠিক কিছু বই কিনে আনে,
যেমন কিনেছি আমি। এরকমই মাঝস্টলে তার সাথে দেখা,
‘কবিতার বই কিনবেন? করোনাকে নিয়ে ভালো ছড়া আছে’
কে এই বিরল যুবা? এ টুম্পাকালে কবিতা ছড়াতে চায় বিপরীতে একা,
নিছক কৌতুহলে , দাঁড়ালাম গিয়ে সেই হকারের কাছে।
‘আপনারই লেখা তো? দাম কত? দেখি বইখানা...
ছিমছাম বাঁধাইয়ে সুন্দর ছাপা, উল্টে পাল্টে নিয়ে তাকাই আবার,
ছেলেটা বোধহয় থতমত। আবেগরা চোখে দেয় হানা,
ঈষৎ থমকে বলে,  মূল্য একশো টাকা। আমার না, লেখাগুলো আমার বাবার।


পৃথিবী দুললো কি? বাবার স্বপ্ন বেচে তবে এই ছেলে?
বাবাকে চেনাবে বলে রোজকার ফিরি করা এত ভিড় ঠেলে?
এই জড়যুগে সবই যখন আজ গিভ অ্যান্ড টেকে,
এ ছেলেটা সমকালে ভেসে এলো পৃথিবীতে কোনখান থেকে?


কিনলাম বইখানা। পুত্রের হাত থেকে কিনলাম সৃষ্টি পিতার,
শ্রবণকুমার ফিরে এসে কলিযুগে,  বেচছে ভিড়ের মাঝে বই কবিতার।


বই দিয়ে ভিড়েই সে মেলালো আবার।


আর্যতীর্থ