। ভিডিও।


গাঁক গাঁক করে অ্যালার্মে মোবাইলটা জানালো,
‘ উঠে পড়ো হে, ছেঁড়াঘুমের সময় আজকের মতো শেষ!’
দুইবার স্নুজ করে কোনোক্রমে তিননম্বরে ওঠা হলো,
নাকেমুখে গুঁজে দৌড়াবো, রোবটের মতো রোজ এক অভ্যেস।
সাতটায় মেয়ে উঠে গেছে, (বলবার মতন এ ঘটনা,
ভোরের সূর্যের সাথে আড়ি করে দিয়েছেন বহুদিন তিনি)
রেডি হতে হতে বলি ‘ কি ব্যাপার! এত জলদি তো ওঠো না,
কিজন্যে মা জননীর এই কৃপা, বলে ফেলো শুনি।
হাতে জ্বলা মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলে এটা দেখো বাপি,
আমাদের কলেজে আমার নাচের গ্রুপ কেমন নেচেছে।
সভয়ে চোখের কোণে তাড়া দেওয়া ঘড়িটাকে মাপি,
দেরী হয়ে গেছে বড়, মেয়ে  আমার ভুলভাল সময় বেছেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ করে দিস, এই বলে তড়িঘড়ি গলাই জুতোটা
তারপর ছুট দিই, হুড়মুড় করে গেলে তবে পাবো অফিসের বাস
‘ আমি চাইছিলাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে তুমি দেখো ওটা’
আচ্ছা, সে হবে খন , রাত্তিরে ফিরে এলে তখন দেখাস।’


বাড়িতে ফিরতে বেশ রাত, সময়কে শুঁষে নেয় অফিসের জোঁক
তড়িঘড়ি খেয়েদেয়ে সটান বিছানাতে, জরুরী মিটিং আছে কাল,
মেয়ের কথা ভুলিনি, কিন্তু ক্লান্ত বড়, ঘুমে ঢুলে আসছে দুচোখ,
প্রেজেন্টেশন যদি ঠিক মতো না হয়, বস দেবে তোড়ে গালাগাল।
    .....................................................................
গাঁক গাঁক করে অ্যালার্ম বাজলো ফোনে। ঘুম বেশ ভালো হলো আজ,
উঠে বসে তড়িঘড়ি বাথরুমে ছুটবো.. কোথা থেকে ভেসে আসে কাঁদার আওয়াজ?
বসার ঘরে বসে  গিন্নি মেয়ে বাবা মা কাঁদছে হাউ হাউ করে,
খারাপ খবর কোনো এসেছে নির্ঘাত, কাছের কেউ গেছে মরে।
ছোটোপিসে? মেজমামী? ভুগছিলেন দুজনেই  কিছুদিন হোলো,
যাই , গিয়ে দেখি জীবন আজকে কাকে বিদায় জানালো।
বউকে প্রশ্ন করি, কি ব্যাপার? কে গেলো? আমায় জাগাও নি কেন?
বউ কিছু বললো না, দেখলো না, শুনলো না, ওখানে আমিই নেই যেন।
মেয়েকে জিগেস করি , কি হয়েছে রে মা, কাঁদছিস কেন তুই অত?
মেয়েও কিছু শোনে না, ফুঁপিয়ে কাঁদছে খালি, চোখ দিয়ে জল অবিরত।
মা হঠাৎ কেঁদে ওঠে, কোথায় গেলি রে বাবু, আমাদের এইভাবে ছেড়ে?
বাবু?? সে তো আমি!চিৎকার করে বলি এই তো এখানে, চেঁচাচ্ছি দুই হাত দূরে!
তারপর চোখ যায় বিছানাতে, হাঁ মুখে কার লাশ চিত হয়ে পড়ে?
এ তো আমি! হ্যাঁ আমিই তো! শুয়ে আছি কাঠ হয়ে মরে।
মাথা কুটে কাঁদি আমি , দুহাত বাড়িয়ে বলি, ঈশ্বর কেউ যদি থাকো,
একখানা দিন দাও, সদ্যমৃতের এই প্রার্থনা রাখো!
মা বাবার সাথে কিছু সময় কাটাবো, চুমু খাবো স্ত্রীকে শেষবার,
মেয়েকে আদর দেবো , ওকে পাশে নিয়ে বসে কেমন নেচেছে সেটা দেখা দরকার!
দেখিনি কাউকে আমি, অফিসে এগিয়ে যেতে ঘড়ির কাঁটাকে ধরে খেলেছি ট্র্যাপিজ,
চব্বিশ ঘন্টা মোটে চাইছি বাড়তি আমি, মঞ্জুর করো কেউ, প্লিইইইইজ!
........................................................................
গাঁক গাঁক করে অ্যলার্ম বাজলো মোবাইলে, উঠলাম হুড়মুড় করে ,
ভোরের হালকা শীতে গৃহিণী এসেছেন কিঞ্চিৎ গা ঘেঁষে সরে।
গালে হাত বোলালাম, এখনো ধরতে পারে নেশা দেখে ওকে,
হালকা ছোঁয়াই ঠোঁট, অবাক আয়ত চোখ খুলে যায় নতুন চমকে!
মৃদু হেসে চুমু খেয়ে চট করে উঠে চলে যাই মেয়ের ঘরে,
ওর সাথে আগে আজ ভিডিওটা দেখি, কাজের জন্য রেডি হবো তারপরে।


আর্যতীর্থ