পৃথিবীটা আজ কেমন করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল,
প্রতিটি শব্দ আমায় বলতে হয় সভ্যতার মানদণ্ডে মেপে,
সাদা কে সাদা বললেই সকলে বলে ভীষণ অসামাজিক,
নিজের ভালোলাগাকে গলা টিপে দিয়ে তুমি আজ বলিপ্রদত্ত-
বেহিসেবী হাসি হেসে দেখো চারিদিকে আড়চোখের ছড়াছড়ি,
মুখোশের মাঝে বাঁকা হাসি হেসে নিশ্চুপে হাতে হাত মেলে শত্রুর-
প্রতিবাদের ভাষা গালাগালি হয়ে ফিরে পায় শুধু ধিক্কার,
প্রকৃতির সন্তানের গলা চেপে দাপাদাপি করে ছদ্মবেশী শয়তান।


পৃথিবীটা আজ কেমন করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল,
নিঃশব্দে মেনে নেওয়া সংসারের সব দাবী দেয় শুধু মহত্তের শিরোপা,
প্রাণখুলে তুমি ভালোবেসে হবে পাগলের প্রতিরূপ,
তোমার যৌনতা শুধু এনে দেবে তোমায় দুঃশ্চরিত্রের উপমা,
ঘুষখোরকে  তুমি দাও বাস্তবধর্মীর শংসাপত্র,
বিপ্লবের ভাষা শুধু এনে দেবে আতঙ্কবাদীর তকমা,
বলাতকারীর চরম সাজা হয় মানবধিকারের আন্দোলনের বিষয়-
রোবটের মত তাই আমি আজ ঠুলি পরে ঘুরি ফিরি।


পৃথিবীটা আজ কেমন করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল,
প্রতিটি কাজের হিসেব লিখে ফিরি আমি দৈনিক খেরোখাতায়,
কর্তব্যের বেড়াজালে আমি সুখী থাকি শুধু গতানুগতিকতায়-
ভাব্নার প্রতিরূপে শুধু লেখা থাকে সভ্যতার ঠাপছাপ,
হিসেবের বাইরে বেরিয়ে ভাবিনি কখনো তোমার হাসির কথা,
কখনও স্বপ্ন দেখিনি উচ্ছল পাহাড়ী নদীর বুকে সঙ্গমের সুখের ,
ছুটে আমি যাইনি দৌড়ে শৃঙ্খলের বেড়াডোর ছেড়ে মুক্তির পথে,
আজ আমি আয়নায় দেখতে পাই শুধু চেনা মুখের ছবি।


পৃথিবীটা আজ কেমন করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল,
রক্ত মাংসের আমি ভণিতায় আজ ভরপুর,
পর্দার আড়ালে আজ আমার হারিয়ে যাওয়া তীব্রতার রাশি,
স্বপ্নের ছায়ায় শুধু ভাবতে বাধ্য আজ প্রেয়সীর দেহখানি-
প্রতিবাদের ভাষা কে দিয়ে ছুটি বিপদমুক্ত আমি,
সমাজের চোখে ভারিক্কী এক সভ্য নাগরিক,
বেয়াব্রু আড়ালে খুঁজে ফিরি আমি আমার নিজের হারান সত্তা,
সত্যি পৃথিবীটা আজ কেমন করে যেন অভ্যেস হয়ে গেল।