রোজ রোজ আমি যখন ঘরে ফিরে আসি-
তখন ঝিঙে ফুল ফোটার সময় হয়ে যায়।
বাবা দুর্বল শরীরে শতরঞ্জিতেই বসে থাকে,
আমি বাবার দিকে তাকাই-
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রই,
আহারে বাবা- মেঘে মেঘে হল বুঝি বেলা।
ভাবতেই আমার হৃদপিন্ড নাড়া দিয়ে উঠে,
আমার খারাপ লাগতে শুরু করে
আমার মনের ভেতরটায় ভয় করতে শুরু করে
বাবাকে হারানোর ভয়।
আমার বাবার জানার পরিধি ছিল বেশ
এখন বাবার সব জানা অজানা হয়ে গেছে
ভুলে গেছে প্রাঞ্জল ইংরেজিতে কথা বলা,
ভুলে গেছে পুরোনো সব অসীম জানা
আর শক্ত হাতে সুন্দর হাতের লেখা।
বাবার হাত এখন অনবরত কাঁপে
বাবাটা আমার বুড়ো হয়ে গেছে;
ভুল বললাম আমি, আসলে আমার বাবা বুড়ো হয়নি
আমার বাবাটা ছোট হয়ে গেছে
না হয় বাবার দাঁড়াতে এত কষ্ট হয় কেনো?
দূর থেকে বাবা আমাকে চেনে না
আমাকে নয় কাউকেই চেনে না
চোখজোড়ায় তীক্ষ্ণতা হ্রাস পেয়েছে আগেই,
তবে বাবা আমার ঘ্রাণ পেয়ে যায়
বুঝে যায় আমি ভিটেই পা রেখেছি
বুঝবেই তো, বাবারা তো সন্তানদের সব বুঝে।
ক’দিন ধরে জ্বর চেপেছে বাবার শরীরে
এখন কি আর সেই সহ্য ক্ষমতা তার আছে?
তাই অদ্ভুত পায়চারি করেই চলেছে।
আমার বুকে লাগে খুব, কি লাগে?
আমি বুঝিনা, আমি জানি না।
তবে আমার বাবা খুব কষ্ট পাচ্ছে।
চিকিৎসা তো চলছেই রোজ রোজ
কিন্তু বার্ধক্যতা! সে তো বাবার সঙ্গী হল
বাবা আমার কেনো বুড়ো হয়ে গেল?
বাবার পাশে শুয়েছি সেই’ই ছোট বেলায়
বড় হয়ে যাবার সাথে সাথে বিছানা হল আলাদা
হ্যাঁ আমি আর বাবা থাকা শুরু করি আলাদা।
বাবার এমন অসুখে
আমি ফিরে পেলাম সেই শৈশবের বিছানার পাশ
বাবা আমি বেশ পাশাপাশি আজ।
শুধু বদলে গেলো ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার নিয়ম,
ছোটবেলা বাবা মাথায়, পিঠে হাত বোলাতো
বাবা জেগে থাকতো আমি ঘুমোতাম
আর এখন জাগি আমি
বাবাটা ঘুমায় সেই ছোট্ট আমি’র মতো।
আমি বাবাকে দেখি, ঘুমন্ত বাবাকে দেখি
আমার বাবা বড্ড ক্লান্ত
রাজ্যের ক্লান্তি বাবার ঘুমন্ত চেহারায় স্পষ্ট
যেনো ক্লান্তিগুলো চেহারাবন্দি হয়েছে দীর্ঘদিন হল।
এই দেখে আমার বুক কেঁপে উঠে
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না
তাকালেই ভয়ে ভয়ে ভাবনা চেপে বসে
মেঘে মেঘে বেলা হয়ে এল কি না!