এক বংশীবাদকের গল্প বলি শোন, অন্যরকম এক বংশীবাদক।
গল্পে পড়া তোমাদের হ্যামিলনের বংশীবাদক নয়।
নির্লোভ এক দেশ প্রেমিক বংশীবাদক।
ভুবন মোহন ছিল তাঁর বাঁশির সুর।
তাঁর বাঁশি ইঁদুর নয়, হায়েনা তাড়াতে উঠত বেজে।
তাঁর বাঁশি মানুষের মানুষের গান গাইত, ঝংকৃত হত মানবতার সুরে।
আমি এক জনমানুষের কাণ্ডারির কথা বলছি।
আমি এক স্বাপ্নিক, তেজস্বী মহাপুরুষের কথা বলছি।
আমাদের সেই বংশীবাদক ভালবাসার কথা বলত
সমতার কথা বলত, স্বাধীনতার কথা বলত।
কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠ কিংবা বিপুল বৈভবের হাতছানি
কিছুতেই কেড়ে নিতে পারে নি তাঁর সুর।
অবিচল আস্থার প্রতিরূপ তিনি।
তাঁর সুরে মাতোয়ারা সারে সাত কোটি বাঙ্গালি।
সেবার কথা দিয়েছিলেন, তাঁর বাঁশিতে রণ ঝঙ্কার তুলবেন
কোটি জনতা উন্মুখ সে সুরে মাতোয়ারা হতে।
অবশেষে তিনি সুর তুললেন, শোষকের হৃৎকম্প জাগিয়ে
তিনি বাজালেন তাঁর কালজয়ী সে সুর,
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম "


চির আকাঙ্ক্ষিত এ সুর হাজার বছরে বাঙ্গালী শোনেনি।
উত্তাল জনস্রোত তরঙ্গায়িত হল,
তিনি বাজালেন, বাজিয়েই চললেন টানা উনিশ মিনিট।
রক্তে নাচন তুললেন তিনি, হাঁটলেন দেখানো স্বপ্ন সফলের পথে।
পেছনে অন্ধের মত ছুটল সারে সাত কোটি জনতা,
সে সুর থামে নি আর। বুলেট-বোমা-আগুন কেবলই বারায় উন্মাদনা
বজ্রকঠিন শপথে কাঁপল চির সবুজের আকাশ, দীর্ঘ নয় মাস।
আরাধ্য সে সুর আরও বেশি অবাধ্য দিনকে দিন।
অবশেষে সে সুরে রচিত হল, অসুর বধের আরেক মহাকাব্য।
বঞ্চনা ঘুচল আড়াই'শ বছরের, উড়ল মুক্তির নিশান।
ফিরে এলেন বংশীবাদক জল্লাদ খানা থেকে, তিনি তখন জাতীর পিতা।
পুনরায় তিনি বংশীবাদক, বাজালেন দেশ গড়ার এক নতুন সুর।
সহসা সে তাল কেটে দেয় বেঈমানের বুলেট! ক্ষত বিক্ষত সে বিপুল হৃদয়!
অবাক পৃথিবী দেখে স্বপ্নের বংশীবাদকের অন্তিম শয়ান।
অথচ পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের ইঞ্চি ইঞ্চি জুড়ে বেজে চলেছে তাঁর সুর।
হে পিতা, আজো আমরা তোমার সুরে সমান ঝংকৃত হই।
আজো মুষ্টিবদ্ধ হাত, আজো আমাদের রক্তে নাচন তোলে
অনন্তকাল ধরে শোষিতের চোখ মুক্তির পথ খুঁজে নেবে তোমার সুরে।