বাপ নেকাব্বর, দিন গোনে আর গোনে পাঁজরের হাড়,
জমি বিঘা খানি ,
আল বরাবর জোয়ালে আটক,
বুড়ো, মরোমরো, হাড় জিরজিরে, প্রিয় ষাঁড়।
কাঁচা পাকা দাড়িতে নেকাব্বর বুলায় হাত।
একদিন জোয়ালের ষাঁড় হবে অন্য কেউ।
নেকাব্বর স্বপ্ন দেখে।


প্রাচীন ষাঁড়ের শক্তি নিংড়ে নিতে নিতে, এতদূর।
জমা জাবনার কল্পনায়, ঠুলি পড়া চোখে চায়,
অতি আপন, বুড়ো ষাঁড়দের জোড়।
ছানিপড়া চোখে ষাটোর্ধ নেকাব্বর তাকায় ।
কষ্টের জমানো টাকায়,  ছেলে তার নগরের পাড়,
নেকাব্বর ক্লান্ত বড়, আগামীর ভিত গড়ে দিতে দিতে।
কয় ক্লাস দিল পাশ, পরান ছাওয়াল?


বাঁচার রাস্তা খু্ঁজে পেতে, ভবিষ্যৎ নেকাব্বর হাটে পথ।


"খাইছো বাজান?"
রাত দেড়টায়,
ঢেলা ঢেলা ভাত , এলোমেলো তরকারি,
এখন জীবনে তার অমৃত সুধা।
জীবন আহত কেবল চটকে চাকরির ঝলমলে বিজ্ঞাপনে।


পুরোনো ব্যাগ, তাতে রাখা চকচকে জুতাে,
জামা, প্যান্ট, কোট, টাই,
যত্নের লেমিনেট করা কতগুলো মার্কশিট,
সার্টিফিকেট এই তার অতি আদরের সর্বস্ব সম্পদ।
"বাপজান আমি খুব চেষ্টায় আছি,
যত্ন করে পড়ি, নিলক্ষেত থেকে কেনা বই,
এ দ্বার ও দ্বার কোন দ্বার দেইনিতো বাদ  ।”


দেখে নিও, একদিন ভবিষ্যৎ নেকাব্বর দাঁড়াবেই।
পালিশ করা জুতোয়,
একবার আবারও দেখে নেয়, অনাগত ভবিষ্যৎ  ।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে,
ব্যাগের পকেটে রাখা টাকাগুলো গুনে দেখে ফের ফের ।
মেস ভাড়া, বাসের খরচ, খাবার বিলের হিসাব
মনে মনে চলে।
টিউশনির টাকাটা যায়নি পাওয়া।
মেসের ভাড়াটা বাকি, দু'মাসের।
ছ'ছটা আবেদনের টাকাই এসেছে, বন্ধুর পকেট থেকে, ধারে ।
এত রাতে আর কোন বন্ধুকে, জাগাতে ইচ্ছে নেই, ওর।
ওরাও তো যুদ্ধটা লড়তে লড়তে ঘুমোয়।
ওরাও তো  কোন এক নেকাব্বরের সন্তান।


ঠাঁঠাঁ ভাঙা রোদে নেকাব্বর কেবল হাঁপায় ।
কত আগে নেয়া দম বেড়োতে বেড়োতে ফুসফুস তার
ফেটে যেতে চায়।
আর মাত্র দু'টো পাক বাকি।
ছড়ানো বীজের চারায় সবুজ হবে মাঠ।
চোখ বুঁজে দেখে স্বপ্নের সোনালী ধান,
শোনে ভবিষ্যৎ নেকাব্বরের আশ্বস্ত ডাক,
" বাপজান, দেখ আমি আইছি হাছাই,
দেও তোমার জোয়াল আমার কাঁধে,  
তোমার চাষের সব  দায় এক্ষণ আমার,
এই সব চাষ আইজ থেইক্ক্যা জোড়ায় জোড়ায় ,
আর তুমি একা না।"
এবার বিশ্রাম নিক বুড়ো ষাঁড়।
নেকাব্বর নিশ্চয়ই  নিশ্চিন্ত হবে।
নেকাব্বর কবে নিশ্চিন্ত হবে?


তাদের কঠিন বুকে জমা দীর্ঘায়ু হাঁপ।
অদেখা ভবিষ্যৎ  অনিশ্চিত, অজানা ।
এই নেকাব্বর, তার বুকের অদৃশ্য  পাথর,
কোনটাই সহসা সরে না  ।
মাঝে মাঝে  লেগে আসে চোখ ।
অনেক অনেক স্বপ্ন, নিয়ে যায় ঘুমাতে তাদের।
স্বপ্নালু নেকাব্বরেরা ঘুমায়, কখনো সখোনো ,
ওদের স্বপ্ন ঘুমায় না ।
২৭/১০/২০১৪