এই যে আমার সাথে দিন নেই রাত নেই যখন ইচ্ছে কথা বলো, তোমার লজ্জা করে না..?
- ভবিষ্যতে যাকে পাবো তার সাথে কথা বলতে আবার কিসের লজ্জা?
- আর পাওয়া, তোমার মুখে এ কথা একদমই মানায় না... সেদিনই তো একটি মেয়ের সাথে কি দীর্ঘ আলাপচারিতায়-ই না মগ্ন ছিলে...
-কে? অরুন্ধতী? আরে এরা তো আসবেই... তোমার কাছে আসতে হলে এদের ভিতর দিয়েই যাওয়া লাগবে... এরা অনেকটা ভাড়া করা রিক্সার মতো, বাসের পাশের সিটের যাত্রীর মতোন যাদের সাথে ট্রাফিক জ্যামের কল্যানে কিছুটা কথা হয় বন্ধুত্ত হয় কিন্তু গন্তব্য পর্যন্ত আর যাওয়া হয় না, কিছুদূর যেতেই নেমে পড়তে হয়। হারিয়ে ফেলতে হয়....
- ছি! রুদ্র তোমার এসব বলতে একটুও মুখে বাঁধছে না? ওদের আবার ভাড়া করা রিক্সার সাথে তুলনা করছো...
-আর তোমার সেই প্রেমিকার খবর কি... যাকে না পেয়ে একটি দীর্ঘরাত তুমি কাঁদতে কাঁদতে মরেছিলে..? আমার সাথে কথাও বলোনি সেদিন...
-কে মায়া? ওর জন্য তুমি আমাকে কিছুটা কথা শোনাতেই পারো আমি মাথা পেতে নিবো....কেমন স্নিগ্ধ,শান্ত একটা মেয়ে ছিলো.. না ছিলো আকাশসম ইচ্ছে না ছিলো তেমন চাহিদা... এমন মেয়ে কিন্ত খুঁজে পাওয়া বেশ ভার!
-ইশ! আমার সামনে প্রাক্তনের প্রশংসা .... এতো যদিই ভালো ছিলো ছাড়লে কেনো? বিয়ে করে নিলেই পারতে.. আমিও তবে মুক্তি পেতাম
-ওর কথা তুললে সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত নেমে আসবে ফের ভোরও হতে পারে, আর লিখতে বসলে দিস্তা দিস্তা খাতা শেষ হয়ে যাবে তবুও ওর স্মৃতিচারণ শেষ হবে না..তবে এতটুকু বলতে পারি আমি ইচ্ছে করে ছাড়িনি...পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলো না বিধায় হারাতে হয়েছে.. ওই যে একটা কথা আছে না.. আমাদের কাছে যে জিনিস ভালো বলে মনে হয় কল্যানের মনে হয়, সে জিনিসে হয়তো কল্যান নেই.. তাই তারা হারিয়ে যায় অথবা আমাদের জীবনে ওদের পাঠ ওটুকুই....
- কল্যানই যদি না থাকে তবে কেনো এরা বার বার ফিরে আসে...
-আহা অকল্যান হলেই যে ,জীবনে এরা আসবে না এমনটি নয়.. ধরো, তুমি এক ঘন জঙ্গল দিয়ে হাটছো তোমার গন্তব্য নদীর কিনারায় থাকা এক নতুন জনপদ.. তোমাকে সেখানে যেতে হলে এই ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গল তো পেরিয়েই যেতে হবে তাই নয় কি? তুমি যদি বলো আমি এ জঙ্গল মাড়াবো না তবে কখনই তুমি তোমার গন্তব্যে পৌছতে পারবে না...
-হুম বিস্তর ব্যখ্যা, তবে তোমার এই গন্তব্যটা কে শুনি?
-কে আবার তুমি... একটা জলজ্যান্ত ছায়া..
-আচ্ছা, তুমি যে আমার মতো এক প্রাণহীন, অদৃশ্য কাল্পনিক চরিত্রের সাথে সারাক্ষণ কথা বলো মানুষ পাগল বলে না?
-বলে বৈকি! এই তো সেদিন রাস্তা দিয়ে হাটছি আর তোমার সাথে কথা বলছি... দূর থেকে এক আত্মীয় ডেকে বললো কি রে রুদ্র একা একা কার সাথে বলছিস... কানেও দেখছি হেডফোন নেই ভাবলাম ফোনে কথা বলছিস..সেদিন কি উত্তর দিয়েছিলাম জানো?
-কি? আমার কথা বলে দিয়েছো?
-আরে না.. বলেছিলাম. মাঝে মাঝে নিজের সাথে কথা বলতে হয়.. মন হালকা লাগে...
-আচ্ছা রুদ্র, তোমার এতো এতো প্রেমিকাদের কতই না অদ্ভুত অদ্ভুত উপমা দিলে আমাকে কিন্ত কিছু দিলে না
-তুমি? তুমি একটা সহস্রাব্দ বয়সী বটবৃক্ষ..
-কি!  সব রেখে বটগাছ...?
-হুম খুব ভেবেই উপমাটা দিয়েছি.. বটগাছকে কখনও উধাও হয়ে যেতে দেখেছো? দেখো নি তাই তো? তুমি বটবৃক্ষ আর আমি তোমার ডালে বাসা বাধা এক বাবুই.. যে খুব ভোরে নিশ্চিন্তে খাবারের খোজে বেরোয় দিন শেষে এসে শান্তিতে নীড়ে ফেরে...আচ্ছা বাবৃুই টা যদি ৩ দিন পর ফিরতো, বা এক সপ্তাহ পর.. বটগাছটা কি উধাও হয়ে যেতো...? নিশ্চয়ই নয়... আমি জানি তুমি কখনোই আমাকে ছেড়ে উধাও হবে না.. ভাড়া করা রিক্সার মতো, পাশের সীটের যাত্রীর মতো।