আজ কোন কবিতা নয়, একটু গল্প শোনাই
শৈশবের স্মৃতি ভেজা সন্ধ্যা রাতের জোনাই-
নারিকেল গাছে চোখ রাঙানো হুতোম পেঁচা-
ভোর রাতে শিয়ালের ডাকাডাকি আর
গোরস্থানের নির্জনতায় একলা কোণের বাবলা গাছটি হতে
আজ আমি দুই যুগ দূরত্বে হাঁটছি।
চারপাশের ইমারত আর রাস্তার পিচে তপ্ত বাতাসের
নামমাত্র অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছি।
না-না, আমি বেঁচে আছি দুই যুগের স্মৃতি নিয়ে;
আমার শৈশব কে স্বপ্ন দেখে।
বর্ষার দিনে  মা চাউল ভাজত-পিঠা বানাত
বাঁশ বনে ঘেরা চটার স্কুলে র সামনে দাঁড়িয়ে
হেডমাস্টার যখন ঘণ্টা বাজাত,
তখনও আমি চোখ লাল করতাম পুকুরে।
পট্টি লাগানো প্যান্ট টা পরে, পলিথিনের ব্যাগ পিঠে
খালি পায়ে দৌড় দিতাম স্কুলে।
স্যার-কে দেখে দীর্ঘ একটা অপূর্ণ সালাম,
“জী আপা” সম্বোধন এ হাজারো নালিশ,
এমনকি ক্লাসমেটদের বাপের নামে ডাকা হয়না বহুদিন।
মা-ও আজ অনেক দূরে-
খাওয়া হয়না পিঠা-পায়েস ভুলেও
ইঁদুরের গর্ত পাই না খুঁজে বড় বড় দাঁত তুলেও।
ছেঁড়া ছাতার নিচ দিয়ে আকাশ দেখার অনুভূতি ও
বাইশ বছরের পুরোনো।
বৃষ্টি হলেই ভেসে যেত আমাদের টালির ঘর
লেবু দিয়ে ফুটবল খেলতাম দিনভর।
কলা পাতার ঘোড়া বানিয়ে ছুটে বেড়াতাম এ গলি ও গলি,
আম কুড়াতাম তীব্র ঝড় এলি।
জ্বর হলে শুয়ে থাকতাম ফুটো ভাড়ের কাঠির নিচে,
আনারস আর ওষুধ পত্র নিয়ে।
এখন আর জ্বরও আসেনা।
ফুটো ভাড়ের জায়গা নিয়েছে এন্টিবায়োটিক
কিন্তু মনের স্মৃতি? তার জায়গা কে নিবে?


ইচ্ছে করে, টেনে ধরতে জীবন রেলের চেইন-
থামিয়ে দেই মিছে ব্যস্ততা আর কোলাহল-
স্কুল ছুটির উল্লাসে ফিরি আবার-
তাঁরা বাজি, সাপ ঘুড়ি আর লাল বেলুনের রাবার
পারবে কি ফেরাতে শৈশব কে?
পাটের লাঠি পেটাবে কি সেই টায়ারকে?
আবার যদি ফিরে পেতাম সেই দিঘি!
ডুবো নৌকায় বসতাম-হতাম কবি।
ফিরে পাওয়া যেত মার্বেল খেলার আসর!
পুরনো দলুজ, উকুন মারায় ব্যস্ত, মা-চাচীদের আদর।
আমের আটির ভেঁপু বাজাতাম আবার
কানামাছি খেলে সময় করতাম পার।
ফিরে পাবো না শৈশবের সেই ঘোড়া
জ্বালাময়ী সেই টসটসে লাল ফোঁড়া।
ফিরে পাবো না অনেক চেনা মুখ ই
পশ্চিমাকাশে আজও তবু চেয়ে থাকি।
মেঘ জমে, ঝড় হয়, বৃষ্টি হয় ঠিকই,
আলগা গায়ে খুশির বাঁকে ভেজা হয় আর কই!
চাঁদ টা আজও ঝলমলিয়ে ওঠে-
বান ডেকে যায় জ্যোৎস্নার,
শুধু মুগ্ধ চোখে দেখা হয়না আর।
চাঁদের বুড়ির গাঁই কি গেছে মরে?
দুধের বাটি হয়ত গেছে ভরে।
ঈশপের সেই জলপরীটা কই?
কাঁদছি আমি স্মৃতির পুকুর পাড়ে,
সোনার কুঠার চাই না যে আমার
শৈশব কে দাওনা গড়ে!!!
সেই চটার বেড়ার স্কুল এখন দোতলা
হেডমাস্টারের ঘণ্টা এখন আর বাঁজেনা-
দিঘিতে এখন নতুন নতুন নৌকা-
আম বাগানটা ভীষণ রকম ফাঁকা-
সাদা কাগজের বুক জুড়ে শুধুই
সোনালী শৈশব আঁকা।