জেলখানায় আমি, দেশ ও তোমরা
মোঃ সোহাগ প্রামানিক (উত্তরের পথিক)


কি দেশ চেয়েছিলাম?
কি আজও পেলাম!!!
অন্যায় আছে
প্রতিবাদ নাই
প্রতিবাদের চেষ্টা করি।
তাই ঘনঘন আসি
গজব শশুর বাড়ি।
মাঝে মাঝে একটু ভুলে
সেলের তালা খোলা মাত্রই
এক টুকরো মায়াবী রোদ
এসে পড়লো ঘরের মধ্যে
আজ তুমি আসবে
সারা ঘরে আনন্দের শিহরণ খেলছে।
যদিও উত্তরের বাতাস
হাড়েঁ কাঁপন ধরিয়ে
দিয়ে বইছে,
তবু আমি ঠান্ডা পানিতে
হাত মুখ ধুয়ে নিলাম
পাহারাদার সেন্ট্রি ভাইকে
ডেকে বললাম,
আজ তুমি আসবে সেন্ট্রি  
ভাই
হাসতে হাসতে পান খেতে দিল
বলল, বারান্দায় হেটেঁ ভুক বাড়িয়ে নিন
দেখবেন, বাড়ী থেকে মজাদার খাবার আসবে
দেখো, সবাই প্রথমে খাবারের কথা ভাবে।


উন্নয়নের নামে
অকল্যানকাজে মাদার মাফিয়া ও
একক দলের
রাজনীতির চরম বেইমানী।।
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
বলে বলে,
নিজের গদি বজায় রাখতে।
কিসে বাপ,
কিসের গন্ধ পঁচা আদশ,
ভাত দে,
না গুলি কর,
উন্নয়নে ধুয়ে কি পানি খাব!!!
আমি জানি বাইরে
এখন আকাল চলছে
ক্ষুধার্ত মানুষ
হন্যে হয়ে শহরের দিকে ছুটে আসছে
সংবাদপত্রগুলোও
না বলে পারছে না যে এ অকল্পনীয়।।


সরকারের দালাল সংবাদপত্র
কিছুই নয় নি
সব দেশ, সাধীনতা বিরোধীর
অপপ্রচার বলে বলে
সরকারের পা চাটে শালারা
রাস্তায় রাস্তায় অনাহারী
শিশুদের মৃতদেহের ছবি দেখে
আমি কতদিন
আমার কারাকক্ষের লোহার জালি
চেপে ধরেছি
হায় আজকের উন্নয়ন!!!


হায় স্বাধীনতা,
অভুক্তদের রাজত্ব
কায়েম করতেই কি আমরা
সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলাম।।
আর আমাকে ওরা রেখেছে
বন্দুক আর বিচারালয়ের মাঝামাঝি
আজ আর সময়
কাটতে চায় না।
বই, তসবিহ, জায়নামাজ নিয়ে
নাড়াচাড়া করলাম
দেয়ালের দিকে নজর দিলাম
আর দেখলাম
ওপাশে শহর জেগে উঠছে
গাড়ীর ভেঁপু রিক্সার
ঘন্টাধ্বনি কানে আসছে
চকের হোটেলগুলোতে
নিশ্চয়ই এখন
মাংসের কড়াই ফুটছে
আর মজাদার
ঝোল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে
গরীব খদ্দেরদের পাতে পাতে।


না বাইরে
এখন আকালো
রমজান মাস চলে
ধনীরা তিনগুণ
মুনাফা লুটে নেয়
গরীবের কথা
কেডা চিন্তা করে
মানুষ কি খেতে পায়?
দিনমজুরদের পাত কি?
এখন আর নেহারির ঝোলে ভরে ওঠে?
একটা অতিকায় দেয়াল
কত ব্যবধানই না আনতে পারে
ওহ্  , পাখিরা কত স্বাধীন!!
কেমন অবলীলায় দেয়াল পেরিয়ে যাচ্ছে
জীবনে এই প্রথম আমি চড়ুই পাখির সৌভাগ্যে কাতর হলাম।


আমাদের শহর
নিশ্চয়ই এখন
ভিখিরিতে ভরে গেছে।
সারাদিন ভিক্ষুকের
স্রোত সামাল দিতে হয়।
আমি কতবার
তোমাদের বলেছি, দেখো
মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না
এর অন্য ব্যবস্হা দরকার,
দরকার সামাজিক ন্যায়ের
উন্নয়ন ফিরিস্তি শোনার
সময় কই!!!
দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে
ওহ্, তোমরা যদি আমার কথা বুঝতে।
প্রিয়তমা আমার,
আল্লাহ তোমার পবিত্র নাম
নিয়ে আজ সূর্য উদিত হয়েছে
উষ্ণ অধীর রশ্মির ফলা
গারদের শিকের ওপর পিছলে যাচ্ছে
দেয়ালের ওপাশ থেকে
ঘুমভাঙ্গা মানুষের কোলাহল।


যারা অধিক রাতে
ঘুমোয় আর জাগে সকলের আগে
যারা ঠেলে
চালায়, হানে,ঘোরায়
ওড়ায়,পেড়ায়
আর হাত মুঠো করে
এগিয়ে যায়।
সভ্যতার তলদেশে
যাদের ঘামের অমোঘ নদী
কোনদিন শুকোয় না শোনো,
তাদের কলরব
বন্দীরা জেগে উঠছে
পাশের সেলে কাশির শব্দ
আমি ঘরে ঘরে
তোমার না ঘোষণা করলাম
বললাম, আজ বারোটায় আমার দেখা
খুশীতে সকলেই
বিছানায় উঠে বসলো
সকলেরই আশা
তুমি কোন না কোন
সংবাদ নিয়ে আসবে।
যেন তুমি সংবাদপত্র
যেন তুমি
আজ সকালের কাগজের প্রধান শিরোনামশিরা!


সূর্য যখন
অদৃশ্য রশ্মিমালায়
আমাকে দোলাতে দোলাতে
মাঝ আকাশে টেনে আনলো
ঠিক তখুনি
তুমি এলে
জেলগেটে পৌছেঁ দেখলাম
তুমি টিফিন কেরিয়ার সামনে নিয়ে
চুপচাপ বসে আছো
আসসালামু আলাইকুম
মহাবীর বলে বলে।
হাসলে, ম্লান, সচ্ছল
কোনো কুশল প্রশ্ন হলো না
সাক্ষাৎকারের চেয়ারে বসা
মাত্রই তুমি
খাবার দিতে শুরু করলে
মাছের কিমার
একটা বল
গড়িয়ে দিয়ে জানালে,
আবার ধরপাকড় শুরু হয়েছে।।


আমি মাথা নাড়লাম
মাগুর ও পাঙ্গাশ মাছের
ঝোল ছড়িয়ে দিতে দিতে
কানের কাছে মুখ আনলে,
অমুক বিপ্লবী আর আল্লাহর বান্দা নেই
আমি মাথা নামালাম
বললে, ভেবোনা,
আমরা সইতে পারবো
আল্লাহ, আমাদের শক্তি দিক।
তারপর আমরা পরস্পরকে দেখতে লাগলাম।


যতক্ষণ না
পাহারাদারদের বুটের শব্দ
এসে আমাদের মাঝখানে থামলো।
তুমি বার বার ফিরে চাও
কিন্তু সময়ের নিয়মে বাধা
বার বার বাঁশির শব্দ
তোমার কান্না
তোমার বিদায়
দেশ,জনগন ও সাধীনতা
তারাও মনে হয় কাঁদে
ভালোবাসি তোমায় সতত
মওলা দেও পথের দিশা।।