১.
মানবী তোমার শরীর


মানবী শুভ্র ঊরুদেশ,
মানবী শ্বেত বুকপাহাড়
সমন্বিত তোমার দেহ কোন
সমর্পণে নত হলে মনে হয়,
যেনো সে উপমা ধরিত্রীর!
নিয়ত খুঁড়ে যায়
তাকে বুনো এক কৃষক শরীর,
মনে হয়
মাটির গহীন থেকে
তুলে আনে এক আশ্চর্য শিশু!
পড়েছিলাম সুড়ঙ্গের মত, একা।
পাখিরা ফেলে গেল
আর প্রবল পেষণে
আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধল নগ্ন রাত
আত্মরক্ষায় তোমায় গড়েছি
আমি তুমুল হাতিয়ার করে
যেন ধনুকের তির তুমি
কিংবা আমার গুলতির পাথর


অথচ প্রতিহিংসার প্রহর
নামে আর তোমায় ভালবেসে যাই।
চর্মজ তনুদেহ, শৈবাল ছাওয়া,
আহা! আনমনা ওই চোখেরা, আহা!
গোলাপি ওই জঙ্ঘা-দুটো!
মৃদু ও বিষাদী তোমার ওই স্বর!
মানবীর  শরীর,
চারুতায় তার দেবো
উদ্বেল ডুবসাঁতার।
আমার পিপাসার গান,
অগুনতি ইচ্ছেরা,
আমার অনিশ্চিত পথ!
মিশকালো নদীদেশে,
যেখানে তৃষ্ণার
গান বেজে চলে নিরবধি
আর একরাশ শ্রান্তি নামে,
যেন অসহ ব্যথার গাঁথা সহযোগে।


২.
যে আলো জড়িয়ে থাকে


যে আলো সবাইকে  জুড়ে থাকে,
নশ্বরতার ঝলকে।
সে পথে অন্যমনস্ক
ম্লান শোকার্তরা দাঁড়িয়ে থাকে
আর গোধূলিবেলায়
জীর্ণ ঘূর্ণিচাকার বিরুদ্ধস্রোতে
আবর্তিত হয়,
তোমাকে কেন্দ্রে রেখে।


নির্বাক তোমরা কেন বন্ধুগণ
মৃত্যুময় নিঃসঙ্গতার
এই মুহূর্তটুকুতে সবাই একা!
আর ভেতরটা পুড়ে
যাচ্ছে অগ্নিবাণে,
বোধয় নষ্ট সময়ের
প্রকৃত উত্তরাধিকার কোথায়


ধূসর বস্ত্রাঞ্চলে
ঝরে পরে সূর্য থেকে,
ফলভারে নত বৃক্ষশাখা।
প্রকাণ্ড শেকড়
সমেত কালরাত্রি
অকস্মাৎ বেড়ে
ওঠে সবার হৃদয় থেকে,
আর যা তোমরা লুকাও,
তোমার মাঝে, সে বেড়িয়ে আসে
যেন সে এক নীল পাণ্ডুর মানুষ,
নবজাতক আগামীর,
পুষ্ট হয় তোমার আশীর্বাদে!


আর বিস্তীর্ণ ও বহুপ্রজ সেই,
চুম্বকের অনুসারী এক
চক্রাকারে আবর্তিত হয়
স্বর্ণ ও কৃশকায় রঙে;
সে জেগে ওঠে,
পথ দেখায় নবসৃষ্টির!
এমন প্রাচুর্যময়
জীবনের ছবি সে আঁকে যেন
বেদনার ভারে
নত ফুলেরা ঝরে যায় প্রান্তরে।


৩.
নগ্নতায় তোমরা অনাড়ম্বর


নগ্নতায় তোমরা অনাড়ম্বর,
তোমাদের হাতের মতন
মিহি, মাটিময়
আর নির্মল সুডৌল,
তোমাদের আছে চন্দ্ররেখা,
আপেলের সরু পথ আঁকা
বসনহীনা তোমরা অনুদেহী,
যেন অনেকটা
নগ্ন গমের শীষ।


নগ্নতায় তোমরা
নীলনদের নীল শান্ত রাত,
তোমাদের আছে
আঙুরলতার মত চুল,
যা নক্ষত্র সমন্বিত।
মসজিদের গুম্বজের
গ্রীষ্মের সোনালি আভার মত
কেন বার বার তোমরা
বসনহীনা বিস্তৃত সোনারঙার মত।


নগ্নতায়, তোমরা ঠুনকো,
তোমাদের যে
কোন নখের মতন,
বাঁকানো, সূক্ষ্ম, গোলাপী,
সূর্যোদয়ের পূর্ব যেন
বারবার নিজেকে গুটিয়ে
তোমরা কেমন অতলে হারাও।


যেন দীর্ঘ এক ধূমনালী
জুড়ে পোশাক আর গৃহকাজে
ফিকে হয়ে আসে
তোমাদের উজ্জ্বল আভা,
পোশাকের ভিড়ে
পাতা ঝরে যায়
আর হয়ে পরে
কেবল নগ্ন দু’হাত
নষ্ট ও ধ্বংস সভ্যতায়।।


৪.
সেভাবে ভালবাসি না


সেভাবে ভালবাসি না তোমাদের,
যেনো তোমরা কেবলি নুন গোলাপ,
পোখরাজ কিংবা আগুন
ছড়ানো কোনো কাঁটাময় কারনেশন।
তোমাদের ভালবাসি নিভৃতে,
ছায়া ও কায়ার মাঝে
যেভাবে অশ্রুত
জিনিসের রূপ ভালবাসে মানুষ।


তোমাদের ভালবাসি
সে গাছটির মত,
গহীন ভিতরে
যার হৃদয় আলো থাকে
করে লুকিয়ে থাকে
অনাগত ফুলটি।
আর ধন্য তোমার প্রেম,
মাটির গভীর থেকে আসা
সতেজ সৌরভ দিয়ে
যা আমাদের ঘিরে রাখে।


কেন ভালবাসি তার
জানা নেই কারণ,
নিয়ম বা ক্ষণ
তবু ভালবাসি তোমাদের দ্বিধাহীন,
সংকটে ও অভিমানে।
এ ছাড়া ভালবাসার
আর কোন পথ জানা নেই
কেবল এভাবেই,
যেখানে তুমি ও
আমি মিলে মিশে একাকার।


বুকের ওপর রাখা
তোমাদের হাতটি আমার,
খুব কাছের,
স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে
পড়া তোমাদের নয়নও
আমার খুব কাছের!


৫.
আজ রাতে
আমি লিখতে পারি
অনেক কিছু
তবুও আজ রাতে
আমি লিখে
ফেলতেও পারি
সেই মহাকালের পঙক্তিমালা
যেমন ধরো, লিখতে পারি,
‘অজস্র নক্ষত্র সমন্বিত এ রাত-
আর এই নীলাভ তারাগুলো
বহুদূরে কাঁপছিল
মিটমিট করে!
রাতের বাতাসটা
পাক দিচ্ছে আকাশে
আর গাইছে  মানবতার গান।


আজ রাত্রে
আমি লিখতে পারি,
মহামানবের পঙক্তিদের।
আমি ভালবাসতাম
তাকে আর সেও আমাকে,
হয়ত কখনো।
অগুনতি নক্ষত্রের
এরকম এক রাতে,
বেঁধেছি বাধনে তাকে
অগণন চুম্বনস্পর্শ দিয়েছি তাকে,
সীমানাহীন আকাশের নীচে।


সে আমায় ভালবেসেছিল
আর আমিও  বেসেছিলাম
কখনো কখনো।
তার সমুদ্রগভীর চোখের
চাউনি’র প্রেমে
কে না পরে থাকতে পারে ?
আজ রাতেই
আমি লিখতে চাই
আবেগের  সব পঙক্তিগুলো
ভাবলেই, সে পাশে নেই
আর মনে পড়ে,
হারিয়ে ফেলেছি সেই  তাকে।
দীর্ঘ এ রাতের
নিস্তব্ধতা তাকে ছাড়া
আরও কেমন প্রগাঢ় মনে হয়।
আর চরণগুলো ঝরে
পড়ে তার হৃদয়ে,
যেমন শিশির ঝরে
ঘাসের জমিনে অবিরত।


তবু কি এসে যায় তাতে,
যখন আমার ভালবাসা
পারেনা রাখতে তাকে
অগুনতি নক্ষত্রের
এই রাত আর
সে নেই আমার পাশে।
এইত শেষকথা
দূর থেকে ভেসে আসছে
কারও আওয়াজ
বহুদূর থেকে
আমার হৃদয়
ভুলতে পারে না,
তাকে সবসময়
হারানোর বেদনা।


এ চোখদুটো খোঁজে
শুধু তাকে,
যেন কাছে পেতে চায়
এ হৃদয় তার আশা করে,
যদিও সে নেই কাছেপিঠে।


মন পড়ে
সেই দীর্ঘ রাত,
আর সাদা হতে থাকা
একই গাছ,লতা ও ফুলগুলো
তখন ছিলুম মোরা
দুজনে দুজনার,
আজ কেন কেমন হল
আললাহ মালুম।।


আর ভালবাসি
এখনো তাকে, এ কথাটি সত্য;
কি গভীর আবেগে।
আমার কণ্ঠস্বর এখন
বাতাস খুঁজে মরছে
মায়াবিনীর গালে চুমু লিখে দিতে।


আমি ছাড়া আর কারোও
সে হবে না কখনও।।