গভীর  রজনী কাটিয়ে
আঁখিযুগল খুলিবা মাত্র চকিত হইলাম ; দেখিলাম বিশাল এক বটবৃক্ষ তলে
শয্যারত আমি একাকি ।
ভীত প্রাণে বিধাতারে শুধাই
এ জগতে কি মোর আপন কেহ নাই ?
বিধাতা হৃদকমলে বসিয়া হাসিতে লাগিল ,
বোধ করি প্রশ্নখানি অহেতুক ছিল ।
আপন মনের শঙ্কা ভুলি
চাহিলাম বৃক্ষপানে ,
বিশাল আকার বৃক্ষ সে যে
কল্পতরু ডাকনামে ।


যত বাড়ে বয়স নিজ ;
বুঝি বৃক্ষসম নাই তো কেহ ,
যাহা চাই তাহা পাই
সুখের কোন অন্ত নাই ,
কোন সেই পুণ্য বলে
বটবৃক্ষের ছায়া পরে ,
এ প্রশ্নের উত্তর কদাচিৎ নাহি পাই ।
অভিমানে বটবৃক্ষরে কটাক্ষ করি ,
কেন এতো কঠোর সে ; অভিযোগে শুধাই
ফোটাও না কেন রজনীগন্ধা কিংবা সন্ধ্যামালতী বেলা ফুরোলে?


বিশাল সে বৃক্ষ কহে অট্টহাসি হেসে ,
“ওরে তুই বিনা সুখের কথা আমি ভাবি কেমনে ?”
তাঁহার এ ভারী শব্দ বুঝিতে না পারি ,
দৃষ্টতাপূর্বক ছায়া ছাড়িলাম ,
পরিচয় ধরিলাম স্বাবলম্বী গৃহত্যাজী ।
পথে পথে হেরি সুখের লাগি
রৌদ্রতাপে পুড়িয়া আজ শান্তিটুকু মাগি ।


সাফল্য না চাহি আর
আপন ভূমিতে ফিরি ,
ফিরিয়া দেখি কল্পতরু বট বৃক্ষের
অস্তিত্ব গেছে ঝরি ।
খুঁজিয়া খুঁজিয়া যবে ক্লান্ত পদখানি
মনে পড়িয়া যায় কঠোর কোল খানি ,
যে কোলের দীপ্তি ছিল সূর্যসমান
যাঁহার প্রতিটি শাখা ছিল স্নেহের বাহুখান ।
দিবা রজনী জাগিয়া সেবা করে গেলো
দিনশেষে একাকিই সে মরিল ।
হুঁশ ফিরিয়া ক্রন্দন করিতে লাগি
বুঝিলাম বৃথা এ অশ্রু ; অস্তমিত যে সে রবি।


আকাশ বাতাসে ধ্বনিত হয়
বিধাতার শাসন বাণী ,
কর্কষ স্বরে শোনায় মোরে
বৃক্ষের প্রয়োজনখানি ।
বিভু কহেন “বৃক্ষ যবে সৃজন করি ,
একটি বৃক্ষ চরণধূলি মাখে ,
নিকটে আসিয়া অনুরোধ করে
মোর সন্তান যেন দুধেভাতে থাকে ।
সে বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য বটবৃক্ষ সমান ভাই ,
সর্বশেষে নাম দিয়াছি পিতা তাঁহার তাই ।"