পরম ধর্ম
তোফায়েল আহমেদ টুটুল

মসজিদে আসিল শিন্নি রুটি গোস্ত হালুয়া,
মাহফিলের আয়োজনে পেট পুরে খাওয়া।
দিন ভুখা সাজিল আজ দাওয়াতী মেহমান,
ভয়ে ভয়ে ধৈর্য সহকারে মসজিদে অবস্হান।
সকলে চাহে তাহার পানে বিদ্রুপের কথা,
শত কষ্টে মনে তবুও পালন করে নিরবতা।
মৌলবী সাহেব কহিল ব্যাটা দুর হ নাপাক,
খাবারের গন্ধে মসজিদে আসিস ঠিকঠাক।
অপমানে বুকে বিঁধিল ধনুকের শলাকা তীর,
বাহিরে বসে অপেক্ষায় রইল আগ্রহে অধীর।
মোনাজাত শেষে সকলকে তবারক বিতরণ,
বাহিরের ভিখারীর কথা কারো নেই স্বরণ।
অবশিষ্ট হালুয়া রুটি মোল্লা সাহেবের হাতে
তৃপ্তি সহকার করিবে আহার পুনরায় রাতে।
বাহিরে সুধায় ভিখারীকে শেষ হয়েছে  সব,
কপালে তোমার রিজিক লিখেনি যে রব।
দুহাত তোলে ভিখারী ডাকে ওগো মহাপ্রভু,
অন্ন কষ্টের ক্ষুধার জ্বালায় ভুলিনি যে কভু।
গায়েবী খবর জানাল আমার নসিব মন্দ,
মানুষের হাতে বন্টিত রিজিক হয়েছে বন্ধ।
দয়ার সাগর পরম করুণাময় তুমি যে মহান,
নিয়ম নীতি ভুলে সকলি বলি ধর্মের বিধান।
দাও হে শক্তি জীবন বাঁচিয়ে বিপদে উদ্ধার,
ক্ষুধায় বুঝি প্রাণ বাহির হয়ে যাবে এইবার।

শশ্মান ঘাটে পুরানো মন্দিরে প্রসাদের আশে
ক্ষুধার্ত পেটে ছুটে গেলাম আমি অবশেষে।
ব্রাহ্মণ পুরোহিত সাজিয়ে রাখল ফল মুল,
চুরি করে লুটিয়ে নিয়ে করব কি মহাভুল।
দুচোখ বন্ধে দেবীর সামনে বাহ্মণের আসন,
দরজায় কড়ার আঘাতে ভাঙ্গিলাম সে ধ্যান।
নয়ন মেলে ক্রোধানলে গালি দিল আহাম্মক,
মরণের পরে জোটে যেনো কপালে নরক।
অসহায়ের ন্যায় মৃদু স্বরে মিনতি নত শিরে,
সাত দিন ধরে দানা পানি কিছু পরেনা উদরে।
প্রসাদ পেলে ক্ষুধা নিবারণে করিতাম ভক্ষণ,
চাহনির ভাষায় বুঝিলাম নেই কোন লক্ষণ।
হরি হরি হে রাম নারায়ণ মহেশ্বর ভোলানাথ,
রক্ষা কর এই অনাচার ব্যটা দেহি ভিন্ন জাত।
কর্কশ ভাষায় জিজ্ঞাসে কি পরিচয় তোমার,
মুসলমান জবাব দিলাম কাঙ্গালী ভিখার।
তেলে বেগুনে জ্বলে উঠিল পুরোহিত মশাই,
হিন্দুর ঘরে অন্নের সন্ধান লজ্জা শরম নাই।
ধর্ম তোমার রসাতলে গেল জাত পাত ভুলি,
রক্ষা করিব ধর্ম আজ তোমার আশাতে ধূলি।
উপরে হাত তুলিয়া ভিখারী দরবারে খাড়া,
হে রহিম রহমান তুমি দাও মোর ডাকে সাড়া।
জন্ম দিলা পৃথিবীর বুকে আপন ইচ্ছানুসারে,
ভাগ্যের রিজিক বন্ধ জাত ধর্মের বিচারে।

মসজিদে মন্দিরে প্রভু নাই বিধানের দাবী,
মোল্লা পুরোহিত লাগাতে চায় দুয়ারে চাবি।
খোদার সাথে স্বাক্ষাতে তারা হল কি মহান?
সকল মানুষকে অবরুদ্ধ করে বন্ধির বিধান।
কে করে মানব সেবা ক্ষুধার্তকে আহার দানে,
তৃপ্ত সহকারে জল পান পিপাসা দুরীকরণে।
সকলেই এক স্রষ্টার সৃষ্টি ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা,
কষ্টের দহণে দগ্ধ বুক অন্তর পুড়ে হয় কালা।
ভিক্ষুককে খালি ফিরাতে কাঁদেনা কারো মন,
বিধানের ছোবলে বিবেক তাদের শুধু দংশণ।
অসহায়ের সাহায্যের হাতে অপমানের বোঝা,
ক্ষুধার্তকে অন্ন দানেও ধর্মের আইন খোঁজা।
মানবতা প্রতিষ্ঠাতা মহাপুরুষের বাক্য নীতি,
সকল দেশে সকল ঘরে মানুষ মানুষে জ্ঞাতি।
মুসলমানের আল্লাহ খোঁজা হিন্দুর ভগবান,
মানবতা লঙনে মসজিদ মন্দিরে অবস্থান।
ধর্মের বাণী কানে শুনি মানব অধিকার রয়,
হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করিয়া কে ধর্মগুরু হয়?
সদভাব সদ্ব্যবহার মানুষের মঙ্গল কল্যাণে,
ধর্মচর্চায় জ্ঞান অর্জনে জগতে কে সাধনে?
জীবে প্রেম যেই জনে সেই সেবেছে ঈশ্বর,
নবী রাসুলের বিশ্বাস ছিল আল্লাহর উপর।
হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করে বুঝতে হবে মর্ম,
মানুষের জন্য মানুষ জগতে ইহাই পরম ধর্ম।